ক্রিকেটের বনেদি দলগুলোর সবাই যখন ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ইংল্যান্ড দলকে তখন চেপে বসতে হয়েছিল দেশে ফেরার উড়ানে। হতাশাজনক পারফরম্যান্সে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল উইয়ন মরগানের দল। ঘরের মাঠে তারাই এবার ফাইনাল খেলছে। এটাকে বিগত চার বছরের কঠোর পরিশ্রম আর সর্বোচ্চ নিবেদনের ফল হিসেবেই দেখছেন মরগান। ইংলিশ দলপতির একমাত্র লক্ষ্য এখন লর্ডসের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সোনালি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরা।
মরগানদের লক্ষটা পূরণ হবে কি না, তা জানা যাবে ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে আজকের ফাইনাল শেষে। সেই ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে কিউইরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলছে। শিরোপার লড়াইয়ে তারা ছেড়ে কথা বলবে না, এটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন মরগান। তবে বিষয়টা নিয়ে বেশি ভেবে নিজেদের ওপর চাপ বাড়াতে চান না ইংলিশ দলপতি। তিনি নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে চান এবং ফাইনালটাকে উপভোগ করতে চান। জিততে চান নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে, ‘এটা চার বছরের কঠোর অনুশীলন এবং সর্বোচ্চ নিবেদন, অনেক পরিকল্পনার ফল। এটা আমাদের সামনে বিশ্বকাপ জেতার বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।’
ফাইনালে উঠে ইংলিশদের ২৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘুচিয়েছে মরগানের দল। এখন তারা আজন্মের আক্ষেপ ঘুচানোর অপেক্ষায়। এর আগের তিন ফাইনাল কেবল হতাশাই বরাদ্দ রেখেছিল ইংল্যান্ডের জন্য। এবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, হলফ করে তা কে বলতে পারে? এমন শঙ্কার মাঝেও মরগান নির্ভার। ফাইনালপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি নির্ভার। এটা দারুণ যে ঘরের মাঠে খেলছি। কালকের (আজ) দিনটা নিয়ে আমি উচ্ছ্বাসিত। সর্বাত্মকভাবে খেলাটা উপভোগ করতে চাই আমরা। এটা বিশ্বকাপের ফাইনাল, আমরা সেখানে ছায়া হয়ে থাকতে চাই না।’
ফাইনালের আগে সতীর্থদের প্রতি শেষ বার্তা কী? সবাই ফিট কিনা, কারা খেলবে? জানতে চাইলে মরগান বলেছেন, ‘বিষয়টা আমার কাছে অনেকবারই জানতে চাওয়া হয়েছে। সকাল হওয়ার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। গিয়ে দেখতে হবে যেমনটা চাই শিবিরে তেমন অবস্থা বিরাজ করছে কি না। সবশেষ তিন-চারবারে সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল।’
লর্ডসে আজ ইংলিশ সমর্থকদের প্রাধান্যই থাকবে। আসরজুড়েই মরগানের দলকে সমর্থন দিয়ে গেছেন তারা। দেশবাসীর এ আকুণ্ঠ সমর্থনের প্রতিদান দিতে চান ইংলিশ দলপতি, ‘যে সমর্থন আমরা পেয়েছে তা প্রশ্নাতীত। যে দলটি এমন সমর্থন পাচ্ছে সে দলের অংশ হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। এটা অনেক বড় সুযোগ এনে দিয়েছে, এমন বড় মঞ্চে খেলার।’
কাউন্টির দল মিডলসেক্সের হয়ে খেলেন মরগান। দলটির হোম ভেন্যু আবার লর্ডস। স্বাভাবিকভাবেই এ ভেন্যু সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি ধারণা আছে ইংলিশ দলপতির। সে ধারণা থেকেই তিনি বলে দিলেন, আজকের ফাইনালটা হবে লো-স্কোরিং, ‘এটা কখনই হাই-স্কোরিং গ্রাউন্ড ছিল না। তাই আমি বলছি, আগামীকাল (আজ) হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে না। আমার মনে হয়, এটা ছোট রানের ম্যাচ হতে চলেছে।’
এমনটা হলে বাড়তি সুবিধা নিউজিল্যান্ডেরই। এ বিশ্বকাপে তারা নিজেরাও রানের ফোয়ারা ছোটাতে পারেনি, ছোটাতে দেয়নি প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদেরও। এরই মাঝে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙেছে কিউইরা। উঠেছে ফাইনালে। প্রতিপক্ষকে নিয়ে মরগান বলেছেন, ‘সাধারণত বিগত দুই তিন বছরে যেভাবে তারা রান করেছে, এখনকার স্কোর তার থেকে কম। এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে এবং বিষয়টা দুর্দান্তভাবেই সামাল দিচ্ছে নিউজিল্যান্ড।’