ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিতর্কিত ২৬ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা
ভুল তথ্য দিয়ে এমপিও মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা
প্রকাশ: বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২০.১১.২০১৯ ১২:১৫ এএম  (ভিজিট : ২৪২)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা সংক্রান্ত বিতর্কে এমপিদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। দেশের সব এমপিকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।

এ চিঠিতে বিতর্কিত ২৬টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণও তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ভুল তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়ার প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর তথ্য সঠিক থাকলে এমপিওভুক্তির আদেশ কার্যকর হবে। মন্ত্রীর নিজস্ব প্যাডে তার স্বাক্ষরিত চার পাতার এই চিঠি পেয়েছেন এমন একাধিক এমপি এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

চিঠির সঙ্গে দুই পাতার সংযুক্ত তালিকায় বিতর্কিত ২৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এমপিও নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় এ ক্ষেত্রে ঘটেনি। তবে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার বাজ টেক্সটাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমপিও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে আগেই ছিল। এ ক্ষেত্রে ভুলবশত একই স্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ফলে একই স্তরে আবারও কার্যকরের সুযোগ নেই। নরসিংদী আইডিয়াল কলেজ ও নরসিংদী বিজ্ঞান কলেজের ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সব শর্ত পূরণ করায় যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম
পরিচালনা করা যাবে না এমন কোনো শর্ত প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতিপত্রে ছিল না।

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সন্দেশদীঘি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে, ফলাফল ভালো নয়। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, এই উপজেলা থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়নি। আঞ্চলিক সামঞ্জস্যতা বিধানের লক্ষ্যে এ উপজেলার সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালার ২২ ধারা প্রয়োগ করে নির্বাচন করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের মাধবপুরের শাহজালাল কলেজ সরকারিকরণের পরও এমপিওভুক্তি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আবেদনের সময় প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ছিল না। প্রতিষ্ঠান প্রধান আগেই আবেদন করেছিলেন। তবে সরকারি হয়ে যাওয়ায় এমপিওভুক্তির আদেশ এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।

অভিযোগ উঠেছে, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার আলহাজ ঝুনুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি যুদ্ধাপরাধীর নামে রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটেনি। শর্ত পূরণ করে যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। তবে নাম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। বিএনপির নেতাদের নামে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার দাউদকান্দির নাইয়ার ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন হাই স্কুল, ড. মোশাররফ হোসেন ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বগুড়ার গাবতলীর শহীদ জিয়াউর রহমান গার্লস হাই স্কুল, গাবতলী শহীদ জিয়া হাই স্কুল, ঝিনাইদহ সদরের মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান গার্লস স্কুল, ফেনীর ছাগলনাইয়ার শহীদ জিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, সাতক্ষীরার তালায় শহীদ জিয়াউর রহমান মহাবিদ্যালয় এবং সিলেটের গোয়াইনঘাটে এম সাইদুর রহমান (সাইফুর রহমান) টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম স্কুল।

এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিএনপি নেতার নামে প্রতিষ্ঠিত হলেও শর্ত পূরণ করায় যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, শর্ত পূরণে যোগ্য বিবেচিত; নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে নাম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

রাজধানীর বাড্ডার ন্যাশনাল কলেজ সম্পর্কে অভিযোগ, ট্রাস্টের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, শর্ত পূরণ করে যোগ্যতা অর্জন করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী ট্রাস্টের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের দেউলমুড়া জিআর মডেল বালিকা বিদ্যালয়, ‘দেউলমুড়া এনআর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এবং দেউলমুড়া জিআর বালিকা বিদ্যালয় (সেক্রেটারিয়াল সায়েন্স) এই তিন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিযোগ, এক দম্পতির তিন প্রতিষ্ঠান এমপিও। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, শর্ত পূরণ করেছে। নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটেনি।

নড়াইলের নড়াগাতীর পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে অভিযোগ অবকাঠামো নেই, এমপিওভুক্তির খবরে ঝোঁপজঙ্গল পরিষ্কার করে স্কুলঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, শর্ত পূরণ করে যোগ্য বিবেচিত। তবে অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটেনি।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে সম্পর্কে অভিযোগ, এর একাডেমিক ভবন ছিল না; এমপিওভুক্তির খবরে রাতারাতি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, এইচএসসি (বিএম) স্তরে শর্ত পূরণ করায় যোগ্য বিবেচিত। নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটেনি।

একই উপজেলার নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় বিসিকনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১০ সালেই এটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। তাই অভিযোগ প্রযোজ্য নয়। পঞ্চগড় সদরের খামির উদ্দীন প্রধান মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা যুদ্ধাপরাধী ও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, শর্ত পূরণ করে যোগ্য বিবেচিত; তবে নাম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে মন্ত্রীর চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘সামির উদ্দীন প্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঝালকাঠির নলছিটির প্যালেস্টান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের হিলফুলফজুল টেকনিক্যাল বিএম কলেজ এবং নেত্রকোনার কলমাকান্দার হিলফুলফজুল দাখিল মাদ্রাসা সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে, এগুলো জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠান। তবে মন্ত্রণালয় বলেছে, শর্ত পূরণ করায় যোগ্য বিবেচিত।

জামালপুর সদর উপজেলার দিপাইত (দিঘপাইত) শামসুল হক ডিগ্রি কলেজ সম্পর্কে অভিযোগ, শিক্ষক নেই একজনও। শিক্ষার্থী চারজন। কলেজটিতে কৃষি ডিপ্লোমার অনুমোদন নেই। এইচএসসি (বিএম) শাখার জন্য আবেদন করা হলেও এমপিওভুক্ত হয়েছে কৃষি ডিপ্লোমা। এ অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি উভয় বিষয়ের জন্য আবেদন করেছিল। শর্ত পূরণ করায় কৃষি ট্রেড যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো অসত্য তথ্য দেওয়া হয়ে থাকলে তদন্ত করে এমপিও বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনযোগ্য। তিন বছরের পরীক্ষার্থী সংখ্যা, পাসের সংখ্যা এবং পাসের হার শিক্ষা বোর্ড থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ব্যানবেইস বার্ষিক শিক্ষা জরিপ-২০১৭ এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এমপিদের দেওয়া এই চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এমপিওর তালিকা ঘোষণার পর গণমাধ্যমে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ফলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এমপিদের কাছে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতেই এ চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
চিঠিতে তিনি জানান, শিক্ষার মানোন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ থেকে নীতিমালা অনুসরণের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক বা দলীয় বিবেচনা করা হয়নি। মানের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়েছে। যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

চিঠিতে তিনি জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় সব মানদন্ড বিবেচনায় নিয়ে ১ হাজার ৫৪২টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়। এ ছাড়া মোট ৮৯টি উপজেলা-থানা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ন্যায্যতা ও সামঞ্জস্যতার লক্ষ্যে নীতিমালার ২২ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলা থেকে একটি করে ৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গম অঞ্চল ও উপক‚লীয় এলাকা বিবেচনায় ৫১টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ১ হাজার ৬৫১টি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এরপরও ৮৯টি উপজেলার মধ্যে ৩১টি উপজেলা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানও যোগ্য হিসেবে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ২৩ উপজেলা থেকে কোনো আবেদনই পাওয়া যায়নি, অর্থাৎ ৫৪টি উপজেলা-থানা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়নি। অন্যদিকে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে মাদ্রাসা ৫৫৬টি, কারিগরি (ভোকেশনাল) ১৭৫টি, কারিগরি (বিএম) ২৮৩টি ও কৃষি ডিপ্লোমা ৬২টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগ থেকে ২ হাজার ৭৩০ প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করায় যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭২৬টি প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে সরকারি আদেশ জারি করা হয়েছে। বাকি চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি আদেশ স্থগিত রাখা হয়েছে। উভয় বিভাগের তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ছয় উপজেলা থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত হয়নি।






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close