ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাক্ষাৎকার : নূরুল ইসলাম সুজন, রেলমন্ত্রী
ব্রিটিশ আমলের রেল আইন যুগোপযোগী করার কাজ চলছে
প্রকাশ: বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ০৪.১২.২০১৯ ১:০৬ এএম  (ভিজিট : ২৬২)
ব্রিটিশ আমলের রেল আইনকে যুগোপযোগী করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, রেলে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুরনো আইন যুগোপযোগী করা হবে। নতুন আইন প্রণয়ন হচ্ছে। নতুন আইনে কিছু সংস্কার আসবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রেল সপ্তাহকে সামনে রেখে সময়ের আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার দায় রেলের ওপর পড়ে না। দুর্ঘটনা রোধে দেশের সব রেললাইনকে ডাবল লাইন করা হবে বলেও জানান তিনি। রেলমন্ত্রী বলেন, রেলক্রসিংগুলো কিন্তু মানুষ বা যানবাহন পারাপারের জন্য দেওয়া হয় না। এটা দেওয়া হয় রেলের নিরাপত্তার জন্য। কোনো যানবাহন এসে যাতে ট্রেনকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের ক্ষতিসাধন করতে না পারে সেজন্য। কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইনের ওপর চলে আসার পর যদি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সেই দুর্ঘটনার জন্য যিনি রেললাইনের ওপর আসবেন তিনিই দায়ী, এজন্য রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কোনো বাস-ট্রাক বা অন্য কোনো যানবাহন ধাক্কা দিল সেজন্য রেল কর্তৃপক্ষ ওই যানবাহনকে দায়ী করতে পারবে। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারবে, তবে তারা রেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারবে না। রেলক্রসিংয়ে বা রেললাইনের ওপর যেসব দুর্ঘটনা হয় তার জন্য রেল দায়ী নয়। রেল বড় বলে সবাই রেলকে দায়ী করে। এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের কাছে রেল ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত এ ধরনের ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয় না বলে জানান মন্ত্রী।
রেলমন্ত্রী বলেন, সব দুর্ঘটনার জন্য রেল দায়ী নয়। যেমন আপনি ক্রসিং মানলেন না, মোবাইল ফোন নিয়ে রেললাইনে উঠে কথা বলবেন, এতে দুর্ঘটনা ঘটলে রেল দায়ী নয়। কিন্তু রেলের ইঞ্জিন বড় বলে সবাই রেলকে দায়ী করে।
১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ৮২-এ ধারায় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুর্ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। এটি সর্বশেষ ১৯৪৩ সালে সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রীর প্রাণহানি কিংবা আহত হলে অথবা যাত্রীর কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে এর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনকি যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি এবং মালামালের জন্যও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আইনে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রেলওয়ে আইনে শুধু টিকেটধারী যাত্রীদেরই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীর বাইরে (ট্রেনে কাটা পড়ে বা ট্রেনের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষে) কেউ নিহত বা আহত হলে কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ আমলের এই রেল আইন যুগোপযোগী করার কাজ চলছে। নতুন আইনে কিছু সংস্কার আসবে। রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সাধারণত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে যে অভিযোগ রয়েছে তা সঠিক নয় মন্তব্য করে রেলমন্ত্রী বলেন, যদি কারও অবহেলার জন্য দুর্ঘটনা হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল দুর্ঘটনায় চালকের পাশাপাশি গার্ডকেও দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। গার্ডকে কেন দায়ী করা হলো, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনেক ক্ষেত্রে গার্ডও দায়ী থাকে। কারণ ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে ট্রেনের চালক ও সহকারী চালকের পাশাপাশি গার্ডেরও ভ‚মিকা রয়েছে। গার্ডের দায়িত্ব লাল পতাকা ও সবুজ পতাকা দেখিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা। তিনি যদি দেখেন তার লোকোমাস্টার ভুল করছে তখন তার দায়িত্ব হচ্ছে চালককে ভুল ধরিয়ে দেওয়া। তার কাছেও ব্রেক থাকে, তিনিও সেই ব্রেক ব্যবহার করে দুর্ঘটনা এড়াতে পারেন। এটা গার্ডদের চাকরির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ১৯৫৬ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মহাজনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ইমাজউদ্দিন আহমেদ ও মা কবিজান নেছার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তিনি। অ্যাডভোকেট সুজন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে বিএসসি অনার্স এবং ১৯৭৯ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি এবং ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
ছাত্রজীবনে নূরুল ইসলাম সুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বিজ্ঞান মিলনায়তন সম্পাদক (১৯৮০-৮১) এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের যুগ্ম আহŸায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০-৯১ সালে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসম্পাদক এবং ২০০৮-০৯ সালে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ছিলেন এবং ঐতিহাসিক জেলহত্যা মামলারও বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। তিনি পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসন থেকে নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নূরুল ইসলাম সুজন তৃতীয়বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রেলকে আধুনিক করার জন্য কাজ করছেন তিনি।
মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিএনপি সরকার রেলকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছিল, বর্তমান সরকার এর উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রেল ব্যবস্থাকে আধুনিক ও ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়েতে বিদ্যমান সব অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী বলেন, চীন ও ভারতসহ অনেক দেশে বর্তমানে রেলের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। সেখানে দ্রুতগতির অত্যাধুনিক সব ট্রেন চলাচল করে। চীনের রেলের উন্নতি করতে ৭০ বছর সময় লেগেছে। কিন্তু আমাদের ৭০ বছর লাগবে না, আমরা শিগগিরই রেলে দ্রুতগতির আধুনিক ট্রেন যুক্ত করতে পারব। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটে দ্রুতগতির ট্রেন চালু করব বলে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, রেলপথে যাত্রীদের সুবিধার জন্য আমরা যত ট্রেন বাড়াচ্ছি, ততই সমস্যা তৈরি হচ্ছে সিঙ্গেল লাইন থাকার কারণে। তাই জয়দেবপুর থেকে ঈশ^রদী, জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর পর্যন্ত, লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের যেসব অঞ্চলে রেললাইন রয়েছে, সেখানে পর্যায়ক্রমে ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। ডাবল রেললাইন না করা পর্যন্ত আমাদের ট্রেনের যে স্বাভাবিক পরিবহন, সেটি পূর্ণাঙ্গ হবে না।





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close