
দুমাস
পর দুবছর হবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দির বয়স। গেল ১২ মাস
বিএনপি অর্থাৎ ২০১৯ সালে বিএনপি তার দলীয়প্রধানের মুক্তির জন্য কার্যত কিছু
করতে পারেনি। শুধু বক্তৃতা বিবৃতির ঝনঝনানি দিয়ে সরকারকে ‘কাবু’ করার
চেষ্টা করেছে। ফল সত্তরোর্র্ধ্ব খালেদা জিয়াকে কাটাতে হচ্ছে কারাগারে, আর
‘মুক্তির আশায়’ বিএনপির এমপিরা গেছেন জাতীয় সংসদে। যদিও সংসদে যাওয়া না
যাওয়া নিয়ে ছিল বিস্তর নাটকীয়তা। ঈদের পর কিংবা শীতের মধ্যে রাজপথের
আন্দোলন এই দুই বাক্যেই ছিল সীমাবদ্ধ। বছর জুড়ে হুঙ্কার দিলেও দৃশ্যত
আন্দোলন আর হয়ে ওঠেনি একসময় মাঠের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দল বিএনপির।
দেখতে
দেখতে শেষ হলো ২০১৯। জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবি দিয়ে শুরু করা বছরটি, নগর
ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে শেষ করেছে বিএনপি। তবে এরই মধ্যে নেতৃত্বের
টানাপড়েন ভুগিয়েছে দলকে। মাসুল হিসেবে হারাতে হয়েছে শীর্ষস্থানীয় পোড়খাওয়া
একাধিক নেতাকে। মান-অভিমান ও ক্ষোভে-আবেগে দল ছেড়েছেন বিএনপি সরকারের সাবেক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান, স্থায়ী কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য ও সাবেক
সেনাপ্রধান লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমানসহ আরও কয়েকজন।
একাদশ জাতীয়
নির্বাচনকে ‘কারচুপি ও ভরাডুবি’ উল্লেখ করে বিএনপি ৭৪টি মামলা করে গত বছরের
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরপরই। কিন্তু মামলাগুলো করলেও এখন আর সেগুলোর
শুনানি চায় না তারা। পরে রাজনীতিতে বেশ কয়েক দফা জল ঘোলা করে সংসদে যায়
বিএনপি। এ জল ঘোলা শুরু করেন ধানের শীষের এমপি জাহিদুর রহমান।
এ ছাড়া
বছর জুড়ে দোয়া-মোনাজাত, কালো পতাকা মিছিল, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল
মিছিল এবং দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই বছরটি অতিবাহিত
করে দলটি। মাঝে ক‚টনীতিকদের কাছে নালিশ করেও আশার আলো পায়নি
বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট। তবে বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক ইউনিটে কমিটি ও জেলা সফর
সম্পন্ন করতে পেরেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
বছরটিতে বিএনপির যেমন
ঘরেও অশান্তি আর অস্থিরতা ছিল, তেমনি বাইরেও ছিল মতের দ্ব›দ্ব। যে
দ্ব›েদ্বর পুরো অবসান হয়নি এখনও। সে অর্থে মূল্যায়ন ও গুরুত্ব না দেওয়ায় ২০
দল ছেড়েছেন বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। জোটের আরেক শরিক
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের শর্তসাপেক্ষে ২০ দল
ছাড়ার হুমকি শুনতে হয়েছে জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপিকে। ভুগিয়েছে ড. অলি
আহমেদের আনকোড়া ‘মুক্তিমঞ্চ’ও। তবে ২৮ বছর পর নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে বিএনপির
সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছে
ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব। সংগঠনের ষষ্ঠ কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে
সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত
হয়েছেন ইকবাল হোসেন শ্যামল।
এদিকে আত্মপ্রকাশের প্রথম থেকে বিএনপিতে এক
প্রকার ‘উটকো’ হিসেবে থাকা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দিন যত গড়িয়েছে ঐক্য তত
হারিয়েছে। মুখে ঐক্যের বুলি আওড়ালেও আড়ালে ছিল অনৈক্যের চোরাবালি। যে
চোরাবালি থেকে এখনও বের হতে পারেনি বিএনপির উদ্যোগে গঠিত ঐক্যফ্রন্ট। যার
কারণ হিসেবে অনেকেই আঙুল তুলছেন বিএনপির দিকে। আর ‘আদর্শ ও পথ হারিয়েছে
ফ্রন্ট’ এমন অভিযোগে ঐক্যফ্রন্ট ছেড়েছেন জোটের বড় বিজ্ঞাপন বঙ্গবীর কাদের
সিদ্দিকী ও জেএসডির আব্দুল মালেক রতন। আগের মতোই নড়বড়ে আছেন ফ্রন্টের
শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন।
এত কিছুর ভিড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার মুক্তি আছে অনিশ্চয়তায়। কয়েক দফায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগেও
মেলেনি কাক্সিক্ষত জামিন। সবশেষ গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে
দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ৩৬৫ দিনে
বলার মতো ছিল, গত ২৬ নভেম্বর বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতকার্মীরা হাইকোর্টের
সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করতে পেরেছে। যা খবরের শিরোনাম হয়েছে।
বিক্ষোভে পুলিশ বাধা দিলে নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। এ
সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বহুদিনের মধ্যে এটিই
ছিল বিএনপির আন্দোলনের বড় দৃশ্য। এ ঘটনায় অনেকের নামে মামলাও হয়।
তবে
নতুন বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সুন্দরের প্রত্যাশা করে বলেন, নতুন বছরে
আমাদের প্রত্যাশা সবসময় থাকে, সুন্দর বছর দেখতে পাব। আমরা মনে করি, এ বছর
জনগণ গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করবে এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করবে।
দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে।