ই-পেপার শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

পাবনায় মেজর পরিচয়ে কিশোরীকে বিয়ে, প্রতারককে আটক র‌্যাবের
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ৯:১২ পিএম আপডেট: ০৭.০১.২০২০ ৯:১৭ পিএম  (ভিজিট : ২০৭)
পাবনায় সাঁথিয়া উপজেলার দাড়ামোধা ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রাম থেকে মাহামুদ হাসান বাবু (৫২) নামে এক ভুয়া মেজরকে আটক করেছে র‌্যাব-১২।

মঙ্গলবার বিকেলে বিয়ের আসর থেকে তাকে আটক করা হয়। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই গ্রামের কলেজপড়ুয়া এক কিশোরীকে বিয়ে করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিয়ে রেজিস্ট্রি করার সময় পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনের সন্দেহ হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার আসল পরিচয় বলে দেয়। পরিবার এবং গ্রামবাসী র‌্যাবকে খবর দিলে ঘটনা স্থল থেকে র‌্যাব তাকে আটক করে।

ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছুদিন আগে। সাঁথিয়া উপজেলার দাড়ামোধা ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রামের কাঠ মিস্ত্রি আব্দুল রাজ্জাকের মেয়ে এই প্রতারণার শিকার হয়। পরিবারের ইচ্ছা ছিলো বাড়ির বড় মেয়ে সৈনিক পদে চাকরি করবে। দরিদ্র কাঠ মিস্ত্রীর মেয়ে পরিবারের দুঃখ ঘোচাতে রাজশাহীতে সৈনিক পদে দাঁড়িয়ে ছিলো ভুক্তভোগী কিশোরী। পরপর দুইবার বাছাই পর্বে অকৃতকার্য হলে গ্রামের নজরুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ হয় এই প্রতারক মেজরের সাথে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই পরিবারের নিকট থেকে ছয় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক ভুয়া মেজর মাহামুদ হাসান।

র‌্যাব ও ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে থেকে জানা যায়, এই প্রতারক ভুয়া মেজর পরিচয়কারী আসলে একজন বই বিক্রেতা। তার মূল বাড়ি রাজশাহী জেলার বুয়ালীয়া থানার সুলতানবাদ গ্রামে। তিন সন্তানের জনক এই প্রতারক জীবিত স্ত্রীকে মৃত বলে ওই পরিবারকে বিশ্বাস করিয়েছিলো। সরল বিশ্বাস চাকরি আর অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে গত ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখে ওই কিশোরীকে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিয়েও করে সে।

ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, আমি চাকরির জন্য দুইবার রাজশাহীতে সৈনিক পদে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। গ্রামের একজনের মাধ্যমে এই লোকের সাথে পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে মেজর পরিচয় দিয়ে আমার চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন বলেন। লোকমারফত চাকরির জন্য ছয় লক্ষ টাকা দাবি করে। প্রথম পর্যায়ে চেকের মাধ্যমে তাকে টাকা দেয়া হয়। কিন্তু চাকরি না হওয়ার কারণে সেই চেক ফেরত দিয়ে নগদ ছয় লক্ষ টাকা নিয়ে যায় সে। চাকরির সুবাদে আমাদের বাড়িতে তার যাতায়াত শুরু হয়।

একপর্যায়ে আমার বাবা মাকে বাবা মা ডেকে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমার পরিবার রাজি হয়ে যায়। সে বলেছিলো তার স্ত্রী মারা গেছে তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ে রেজিস্ট্রি করা সময় পরিবার ও এলাবাসীর সন্দেহ হলে তার আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে। আমার জীবন নষ্টকারী প্রতারক ভুয়া মেজরের দৃষ্টন্তমূলক  শাস্তির দাবি করছি আমি। আর কোনো মেয়ে বা পরিবাকে যেনো এই ধরনের প্রতারনা স্বীকার না হতে হয়।

ভুক্তভোগী কিশোরীর পিতা সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভুল করেছি। প্রতারক ভুয়া মেজর আমার ও আমার পরিবার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে। আমি এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। মেয়ের চাকরি দেয়ার কথা বলে আমার বাড়িতে আসে। কথার ছলে পড়ে তার সাথে বিয়ে দেই মেয়েকে। নিজ ভিটামাটি বন্ধক রেখে ৬ লক্ষ টাকাও দিয়েছি তাকে চাকরির জন্য। আমি এই প্রতারোকের কঠিন শাস্তি চাই।’

ঘটনার বিষয়ে পাবনা র‌্যাব-১২ এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কাশেম বলেন, পরিবার এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পাবনা সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর গ্রাম থেকে ওই প্রতারক ভুয়া মেজরকে আটক করা হয়েছে। এই ভুয়া মেজর আসলে একজন বই বিক্রেতা। ঢাকা থেকে বই নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকে। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। তার বাড়ি রাজশাহী জেলার বুয়ালীয়া থানার সুলতানাবাদ গ্রামে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শেষে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে বলে জানান তিনি।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close