ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সময়ের আলো সাক্ষাৎকার
এসএমইকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১১৫)
মো. সফিকুল ইসলাম ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশন
একসময় তিনি ছিলেন সরকারের একজন দায়িত্বশীল উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে থাকাকালে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ঢাকার বুকে সৌন্দর্যের প্রতীক হাতিরঝিলের জন্মলগ্নে তার অবদান এখনও আলোচনা হয়। জমি অধিগ্রহণে তিনি ছিলেন সূক্ষ্ম কারিগর। যে কারণে তিনি সবার প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হন। সরকারের আদিষ্ট হয়ে যখনই কোনো কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন, তখনই সে কাজকে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। চ্যালেঞ্জ গ্রহণে তার কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। নেই পিছুটান। চ্যালেঞ্জগুলো হতাশার গহিনে পার করে সক্ষমতার ভিত্তিতে অর্জন করার মূলমন্ত্র জানা রয়েছে তার। আর তিনি হলেন স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (এসএমই) ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম।  সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি ২০১৫ সালে এসএমই ফাউন্ডেশনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি এখন পর্যন্ত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি মো. সফিকুল ইসলামের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের বর্তমান কার্যক্রম ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে

প্রথমেই উঠে এলো কাজের ধরন প্রসঙ্গে। তিনি অকপটে জানালেন, এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সরকারি আর বেসরকারি প্রভাবের বলয় খুব একটা বেশি নেই। এরপরও কিছুটা অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জগুলো সহজীকরণ করার প্রচেষ্টা রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে আনন্দ-ইমোশন দুটোই রয়েছে। এসএমই কথা বলতেই শুরু করলেন, শিল্প খাতের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এসএমইতে রয়েছে অনগ্রসর সক্রিয় শ্রেণি। আর শিল্প খাতের মধ্যেই একটি বিশেষ খাত হচ্ছে এসএমই। মোট শিল্পের ৩৩ শতাংশের মধ্যে ২৫ শতাংশ হচ্ছে এসএমই খাত। ‘অ’ শব্দটি বাদ দিয়ে তাদের অগ্রসর শ্রেণিতে আনতে চাই। এখানে ইমোশন কিছুটা তো কাজ করবেই। তাদের সুরক্ষার জন্য কিছু তো পরিকল্পনা নিতেই হবে। আর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
কথা প্রসঙ্গে তিনি খোলামনে বলেই ফেললেন সম্প্রতি অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির কথা। আর গতিপ্রকৃতির সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ হলো জিডিপিতে কে কীভাবে অবদান রাখছে। একসময় প্রাধান্য ছিল কৃষি। কৃষি বলতেই চোখের সামনে উঠে আসে গ্রাম আর গ্রাম। এখন নগরায়ণ গুরুত্ব পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শিল্প। তাই শিল্প এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। অর্থনৈতিক গতি পরিবর্তনে কৃষির স্থানে এখন শিল্প আস্তে হাঁটু গেড়ে বসছে। এ শিল্পের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প একটা জায়গা করে নিচ্ছে। তবে এ এসএমইকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ক্ষুদ্রবান্ধব সুষ্ঠু নীতি। আর রাষ্ট্রযন্ত্রের তো প্রণোদনা প্রয়োজন। তবে এসএমই গন্তব্য এখন চোখে পড়ার মতো ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি মো. সফিকুল ইসলাম আগামী দিনের চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গটি তুলে আনেন। তিনি বলেন, আগামী দিনে জিডিপিতে শিল্পের অবদান ৪০ শতাংশে নিতে হবে। আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে বেশি সময় নেই। আর এসএমই’র প্রবৃদ্ধির গতি আরও বাড়াতে হবে। নতুন করে প্রবৃদ্ধি যোগ করা এখন আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তবে এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন। বিসিক উদ্যোক্তাদের জায়গা দিতে হবে। অবকাঠামোর স্পেশ দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পলিসিগতভাবে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে হবে।
এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ফাউন্ডেশনের ভূমিকা কী? এ প্রশ্নের সোজাসাফটা জবাব দিলেন এমডি। বললেন, তাদের কার্যকর প্রশিক্ষণ তো বটে, পাশাপাশি তাদের জন্য বেশ কিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে। আর পরামর্শ তো থাকছে। সেই পরামর্শ আর প্রশিক্ষণের ফলে আজ এসএমই উদ্যোক্তারা ভালো ফলাফল পাচ্ছে। দেশের গন্ডির বাইরেও তারা অবদান রাখছে। তাদের তৈরি পণ্যের বাজার এখন দেশে যেমন প্রশংসিত হচ্ছে, তেমনি দেশের বাইরেও হচ্ছে। তবে রফতানি বাজারে উৎসাহিত করতে বহুমুখী পণ্যের সমাহার প্রয়োজন। রফতানি ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের রফতানি মেলাতে উৎসাহিত করি। ইপিবির সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যুক্ত করে দিই। কথায় কথায় উঠে এলো, মাটির গহনার কথা। এখন সাভারে উন্নতমানের মাটির গহনা তৈরি হচ্ছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে এসএমই কী অবদান রাখছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, এ দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়টি বড় ধরনের ক্যানভাস। ১০ লাখ মানুষের সরাসরি এসএমইর সঙ্গে জড়িত। আর এর সঙ্গে কুটিরশিল্প যোগ করলে দাঁড়াবে প্রায় ৭৮ লাখ। তবে আশার কথা, বর্তমান শিল্পে যত লোক কাজ করছে তার ৪০ শতাংশ হচ্ছে এসএমইর। বড় ক্যানভাসে দেখলে এসএমই গর্ব করার মতো। পরোক্ষ আর প্রত্যক্ষভাবে মানুষ যে হারে অংশগ্রহণ করছে তা সত্যি প্রশংসনীয়।
নতুন উদ্যোক্তা আর পুরনো উদ্যোক্তাদের জন্য ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে এমডি জানান, আমরা সব সময় বিজনেস সাপোর্ট দিই। আর এ সাপোটের মধ্যে রয়েছে কিছু পরামর্শ তো বটেই, এর পাশাপাশি যখন যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা প্রয়োজন তা দেওয়ার চেষ্টার কোনো ক্রটি রাখি না। ব্যাংক সাপোর্ট থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত দিক থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই। আমরা সর্বাত্মক সহায়তার জন্য প্রস্তুত। এখানে নতুন কিংবা পুরনো উদ্যোক্তা কোনো বিষয় নয়। সবাই আমাদের চোখে সমান।
নতুন খবর দিলেন এমডি মো. সফিকুল ইসলাম। আসছে ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হতে যাচ্ছে জাতীয় এসএমই মেলা। সেই যে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় মেলা শুরু, এরপর আর কোনো বিরাম নেই। তিনি জানালেন, এবারের মেলায় দেশের ৩০০ উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করার কথা। মেলায় যে বিষয়টি প্রাধান্য পাবে তা হলো, ফ্যাশন। তবে এর পাশাপাশি হালকা শিল্প প্রকৌশল, চামড়া, হস্ত শিল্প, কৃষি, কৃষিজাত প্রক্রিয়া, মেশিনারিসহ আরও কিছু। অন্যদের জন্য সুযোগ যে থাকছে না তা নয় । সবার জন্য অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হচ্ছে। আর বিশেষ বিবেচনায় থাকছে উপজাতি, নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী। তিনি আরও একটি বার্তা দিলেন। আর তা হলো, সারা দেশের উদ্যোক্তাদের বাছাই করে ৬টি সেরা উদ্যোক্তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। আর সেই সেরা পুরস্কৃতরা পুরস্কার নেবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি  প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। মেলায় কোনো ধরনের বিদেশি পণ্য বিক্রি করা হবে না। দেশি পণ্যকে উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ। এখানে কোনো ব্যবসা নয়, মেনুফ্যাকচারিংকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। মেলায় সেমিনারের আয়োজন থাকবে। যারা অংশগ্রহণ করবেন তাদের জন্য এ সেমিনার অনেক বার্তা বয়ে আনবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তিনি আরও জানালেন, জাতীয় মেলার পাশাপাশি আঞ্চলিক মেলার আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি ঝিনাইদহে মেলা শেষ হয়ে গেল। এসব মেলার আয়োজনে জেলা প্রশাসক ছাড়াও স্থানীয় চেম্বারসহ অন্যরা যুক্ত হচ্ছেন। আগে শুধু ৪টি বিভাগে মেলা হতো। এখন সেই মেলা আগের তুলনায় বিস্তৃত হয়েছে।
জাতীয় মেলা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, ২০১২ সালে যখন এ মেলা হয় তখন উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল ৮৫, আর স্টলের সংখ্যা ছিল ১০০। সে সময় বিক্রি হয়েছে ২৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। আর অর্ডার পাওয়া গেছে ৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। ২০১৪ সাল থেকে একদিকে যেমন উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি বিক্রির হার ও অর্ডারের পরিমাণ বেড়েছে। একনজরে যদি দেখা যায় তাহলে বোঝা যায় এসএমই মেলা কত গুরুত্বপূর্ণ। আর বাংলাদেশের জন্য কি বয়ে এনেছে। ২০১৪ সালে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা ছিল ১৪০, আর স্টলের সংখ্যা ছিল ১৫০। একইভাবে বিক্রি হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। আর অর্ডার পাওয়া গেছে ১৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা ছিল ১৮৩ আর স্টলের সংখ্যা ছিল ১৯৩। বিক্রি হয়েছে ১৪৯ কোটি আর অর্ডার পাওয়া গেছে ৪৩৪ কোটি টাকার। ২০১৭ সালে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা ২০০ আর স্টলের সংখ্যা ছিল ২১৬। বিক্রি হয়েছে ২৮৫ কোটি টাকা, আর অর্ডার পাওয়া গেছে ৩৮৭ কোটি টাকার। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। যার পরিমাণ ৫৫৬ কোটি টাকা। অর্ডার পাওয়া গেছে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকার। আর উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল ২৭১। স্টলের সংখ্যা প্রায় সমান।
উদ্যোক্তাদের জন্য কি পরিমাণ সুদ গুনতে হচ্ছে, এ প্রশ্নে তিনি বললেন, তাদের জন্য মাত্র ৯ শতাংশ সুদ আরোপ করা হয়। ব্যাংকগুলো আসলে ক্লাস্টার হিসেবে ঋণ দেয়। উদাহরণ টেনে তিনি জানালেন, ঝালকাঠির স্বরূপকাঠিতে বাচ্চাদের জন্য ক্রিকেট ব্যাট বানানোর তৈরিতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ভৈরবে পাদুকা তৈরির ক্ষেত্রে ঋণ পাচ্ছে। ৫টি বিষয়কে সামনে রেখে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। এ অর্থায়নের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সহায়তা করছে। সঙ্গে আছি আমরা।
এসএমইতে যারা অনগ্রসর তাদের জন্য ঋণের পাশাপাশি সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অনেকে আগে এনজিও থেকে ঋণ নিত, এখন এসএমই ফাউন্ডেশনের কাছে আসছে। কারণ এনজিওদের ঋণের সুদের হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। কথা প্রসঙ্গে তিনি বগুড়ার মাইডাসের একটি উদাহরণ টানলেন। চ্যালেঞ্জগুলো কি? আবারও ঘুরে ফিরে প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরে এমডি জানালেন, আগামী দিনে ২৬ লাখ লোক বেকার হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। একই আসছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এর মধ্যে দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এসএমইকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের সুরক্ষা দিতে হবে।








সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close