কাজী মোতাহার হোসেন
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:১০ পিএম (ভিজিট : ১৭৩)
কোনো জাতি কতটা সভ্য, তা নির্ণয় করবার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাপকাঠি হচ্ছে তার শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যপুস্তক ও সাধারণ সাহিত্য। এসবের ভেতর দিয়ে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পরিস্ফুট হয়; নৈতিক ও সামাজিক মানের পরিমাপ পাওয়া যায়; এবং কর্মক্ষমতা, চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, এক কথায় জাতীয় আদর্শেও ভিত্তি-ভ‚মির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। জাতীয় ঐতিহ্য অবশ্যই অতীতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানের চেষ্টায় পরিপুষ্ট হয়। তা ছাড়া এর ভবিষ্যৎ স্থায়িত্ব ও উন্নতির জন্য শিশু, কিশোর ও নওজোয়ানদের উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করে দিতে হয়। বইপড়া তার অন্যতম। মায়ের পেট থেকে পড়েই শিশুর শিক্ষা আরম্ভ হয়। কিন্তু এরও আগে মা-বাবার মনোবৃত্তি, পারস্পরিক সম্পর্ক, দৈহিক দোষগুণ প্রভৃতির প্রভাব কিছুটা উত্তরাধিকার সূত্রে শিশুর ওপর বর্তে। এ কারণে বয়স্কদেরও বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে এ ধরনের শিক্ষার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। অনেক দম্পতিকেই সারা জীবন শিশুর পরিবেশ-সৃষ্টি এবং বাল্যশিক্ষার ব্যবস্থায় অসংখ্য ভুল করে শেষ জীবনে পস্তাতে দেখা যায়। বাল্য-শিক্ষার ব্যবস্থাও আমাদের দেশে সন্তোষজনক নয়। উন্নত দেশে দুই থেকে পাঁচ-ছয় বছর বয়সের শিশুর শিক্ষয় প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। এই বয়সে অনেক শিশু স্কুলে একত্রে জড়ো হয়ে খেলাধুলা করে, নকশা আঁকে, কাঠের বা মোটা কাগজের টুকরো জোড়া দিয়ে অনেক রকম প্যাটার্ন বা আকৃতি তৈরি করে; চিত্র-বিচিত্র বইয়ের ছবি দেখে, কাঠের অক্ষর দিয়ে খেলা করতে করতে শব্দ তৈরি শেখে, বস্তু গণনা করতে করতে সংখ্যার ধারণা লাভ করে, আশপাশের সাধারণ জিনিস ও পশু-পাখির নাম শেখে, মজার মজার ছড়া আবৃতি করে। এ ধরনের ক্রিয়া-কলাপের মধ্যে দিয়ে সহজে ও স্বাধীনভাবে তাদের আপন আপন স্বাভাবিক বৃত্তিগুলোর চর্চা হতে থাকে। আমরা বইপড়ার ক্ষেত্রে শিশুকে প্রলুব্ধ করি না। যা জাতি গঠনের জন্য সুখকর নয়। আমরা বিলেতি পদ্ধতির স্কুলে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে ইংরেজি বোল শেখাচ্ছি, আর এসব ছেলেমেয়ে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে নিজেদেরকে দেশের লোকের থেকে স্বতন্ত্র বলে ভাবতে শিখছে। এ থেকে মুক্তির পথ বইপড়া।