ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রবাসীকে বিয়ে
অপহরণের পর নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবি, আটক ৪
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:১৮ পিএম আপডেট: ২৩.০২.২০২০ ১২:৫৯ এএম  (ভিজিট : ১৪৯)
কলকাতা থেকে ইলেট্রিকে ডিপ্লোমাধারী এক প্রবাসী যুবককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১)। আটককৃতদের মধ্যে অপহরণের স্বীকার যুবকের স্ত্রী, স্ত্রীর বড় ভাই ও বাবাসহ সাবেক প্রেমিক রয়েছে। শুক্রবার রাতে তাদেরকে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে র‌্যাব-১১-এর সদর দফতর সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে নিয়ে আসা হয়। শনিবার দুপুরে র‌্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া কর্মকর্তা মো. আলেপ উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার আব্দুল হকের পুত্র মো. রাসেল (২৮) নামে এক প্রবাসী যুবক র‌্যাব-১১ বরাবর এক অভিযোগ করেন। গত দুই মাস আগে তাকে ডিবির পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তি নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। অচেতন করে এক বাসায় নিয়ে হাত পা ও চোখ বেঁধে মারধরসহ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করে এবং যৌনাঙ্গ সিগারেট জ্বালানোর লাইটারের সাহায্যে পুড়িয়ে দেয়।
অপহরণকারীরা সেই নির্যাতনের ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। রাসেলের পরিবার সেই রাতেই বিকাশের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা পাঠায় এবং বাকি টাকা নগদে পরিশোধ করবে বলে জানায়। পরের রাতে বাকি টাকা নেওয়ার জন্য অপহরণকারীরা রাসেলকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে নরসিংদীর শাপলা চত্বরে আসার পর রাসেল প্রসাব করার জন্য মাইক্রোবাস থেকে নামে এবং একটি পিকআপ ভ্যান সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় রাসেল ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকারে লোকজন আসতে থাকলে তাকে রেখে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাসেল পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে র‌্যাব অফিসে অভিযোগ জানায়।
র‌্যাবের মিডিয়া কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন আরও জানান, অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শুক্রবার রাতে নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মো. অভিত মিয়া (২৮), মো. পাপ্পু মিয়া (২৮), মারিয়া আক্তার মন্টি (২৩) ও মো. বাদল মিয়াকে (৫৮) আটক করে নিয়ে আসা হয়। তারা নরসিংদী জেলার সদর থানার স্থায়ী বাসিন্দা। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে।
নির্যাতন ও অপহরণের স্বীকার যুবক রাসেল জানায়, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে কসবা থেকে নরসিংদীর সাটিরপাড়া এলাকায় তার চাচার বাসায় বেড়াতে আসে। সেখানে তার চাচাতো ভাইয়ের টেইলার্সে মন্টি নামে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। কিছু দিনের মধ্যে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের ৬ মাসের মাথায় রাসেলের সৌদিতে চাকরির ভিসা চলে আসে।
রাসেল বিয়ের ১৮ দিন পরে সৌদির দাম্মাম শহরে ইলেট্রিক ইঞ্জিয়ারিংয়ের কাজ নিয়ে চলে যান। দেড় মাস পরে রাসেল তার পরিবারের কাছে বিয়ের বিষয়টি জানায়। প্রথমে পরিবার দ্বিমত করলেও ৭ মাস মাস পরে রাসেল দেশে এসে মন্টিকে বাড়িতে তুলে আনে। ছুটি শেষে রাসেল আবার সৌদি চলে যান। মন্টি অন্তঃসত্ত্বার অজুহাতে শ^শুরবাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় এবং পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে। মন্টি তার বড় ভাই পাপ্পু মিয়াকে বিদেশ পাঠানোর নামে রাসেলে কাছ থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করে। এভাবে মন্টি ও তার পরিবার বিভিন্ন ছলনার আশ্রয় নিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে থাকে।
রাসেলের মধ্যে কয়েকবার বিদেশ থেকে দেশে আসা যাওয়া করে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসার পর মন্টির মোবাইলে পরকীয়ার প্রমাণ পায়। রাসেল জানতে পারে মন্টি এর আগে আরও চারটি বিয়ে করে প্রতারণা করেছে। মন্টি অবস্থা বেগতিক দেখে তখনই নরসিংদী জেলার সদর থানায় তাকে অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে রাসেল ও তার বাবা-মাসহ পরিবারের ছয়জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় রাসেল ১৩ দিন কারাভোগের পরে মিথ্যা মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পায়।
রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ওরা টাকার জন্য তার পুরুষাঙ্গের ৬০ শতাংশ সিগারেট জ্বালানোর লাইটার দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। প্রায় দুই মাস চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও এখনও অনেক যন্ত্রণা হয়।
র‌্যাব জানায়, আটককৃতদের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর থানায় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।








সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close