ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

আতঙ্কপুরী দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৫২ পিএম আপডেট: ২৮.০২.২০২০ ১২:৪৫ এএম  (ভিজিট : ৯৮)
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের’ আহŸান সত্তে¡ও থামেনি দিল্লির দাঙ্গা, উত্তরপূর্ব দিল্লির পরিস্থিতি আগের মতোই উত্তেজনায় টান টান হয়ে আছে। টানা চার দিন ধরে দাঙ্গার পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। আহতের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। এনডিটিভি।
বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের বলিতে প্রাণ গেছে আরও ১০ জনের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আট জন। আর গগন বিহার-জোহরিপুর এলাকার একটি ড্রেন থেকে দুটি লাশ পাওয়ার পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ জনে দাঁড়ায়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অশান্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। ইতোমধ্যে আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিহতদের দুই লাখ টাকা সরকারি ক্ষতিপূরণ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। দিল্লির যে এলাকাগুলোয় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে সেসব এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন কেজরিওয়াল। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে থেকে কেউ যেন দিল্লিতে প্রবেশ করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। পাশাপাশি বুধবার প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইট করে শান্তি বজায় রাখার আহŸান জানিয়েছেন।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর চলাকালেই রাজধানী দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার রূপ নেয়। বুধবার রাতেও মুসলিম অধ্যুষিত উত্তরপূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, মৌজপুর ও কারাওয়াল নগরে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উত্তরপূর্ব দিল্লির সহিংসতাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ‘সরকার শান্তি ফিরিয়ে আনবে’, ব্যক্তিগতভাবে এমন আশ^াস দিয়ে গেলেও শান্তি ফিরে আসেনি। দাঙ্গা শুরু হওয়ার তিন দিন পর চতুর্থ দিন প্রথমবারের মতো এক বিবৃতিতে ‘শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের’ ডাক দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী
 মোদি।  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত  শাহ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একের পর এক রিভিউ মিটিং করে গেলেও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে দিল্লি পুলিশ ১৮ মামলা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।
দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ দিল্লি হাইকোর্ট পুলিশকে ঘৃণা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছে। চার বিজেপি নেতার বক্তৃতার ভিডিও দেখার পর আদালত এমন নির্দেশনা দেয়। ওই বিজেপি নেতাদের মধ্যে কেন্দ্রের মোদি সরকারের মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ও স্থানীয় নেতা কপিল মিশ্রও আছেন। রোববার বিকালে এ কপিল মিশ্রের সমাবেশ থেকেই সহিংসতা শুরু হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
দাঙ্গা থামিয়ে দিল্লিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‍নিরাপত্তা উপদেষ্টা অভিত দোভালকে। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নগরীর দাঙ্গাকবলিত এলাকাগুলোয় যান। দাঙ্গায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি জাফরাবাদ এলাকায় পুলিশের গাড়িবহর নিয়ে হাঁটার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, এখানে শান্তি ফিরে আসবে।’
দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা-র তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে শাহর পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সোনিয়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালেরও সমালোচনা করেছেন। রোববার সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লির সরকার উভয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
উত্তরপূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ-মৌজপুরে এখন শ্মশানের শান্তি। ফাঁকা রাস্তা জুড়ে পাথর, ইট, ভাঙা কাচ, ভাঙা লোহার রড। ভেতরের গলি থেকে পাকিয়ে পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া। বাড়ি কিংবা দোকানের মালিক কোন ধর্মের, তা দেখেই আগুন লাগানো হয়েছে। এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে গেছেন। মুস্তাফাবাদে একমাত্র মেয়ের হাত ধরে প্রাণভয়ে মহল্লা ছাড়ছেন এক মহিলা। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই তার মুখে। পেছনে ফেজ টুপি, কুর্তা-পাজামায় স্বামী। মাথায়-পিঠে ব্যাগ, লেপ-কম্বল। বাড়ি-দোকান পুড়েছে। পথে নেমেছেন নিরাপদ কোনো আশ্রয়ের খোঁজে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close