ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

‘সাহায্য পৌঁছানোর দুর্নীতিতে ছাড় নয়’
সম্মিলিতভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ৬১)
বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসের থাবা পড়েছে বাংলাদেশেও। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, মানুষকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে সরকার ছুটি ঘোষণা করে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরবর্তীতে অফিস-আদালতে টানা ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়। এ ছুটি শেষের আগেই করোনাভাইরাস মোকাবেলার স্বার্থে আবারও বাড়ানো হয়েছে ছুটির মেয়াদ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে দেশের প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই বন্ধ রয়েছে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে অনুৎসাহিত করার পাশাপাশি এ ছুটিতে সরকার মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের এ অনুরোধ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার পক্ষে ঘরে থাকা সহজ নয়। কারণ আমাদের সমাজে এখনও নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি; যাদেরকে দিন এনে দিন খেতে হয়। যাদের ন্যূনতম সঞ্চয় নেই, তাদের পক্ষে জীবনের মায়ার চেয়ে পেট বাঁচানোর তাগিদই বেশি। এতে করে আরও সঙ্কটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের সঞ্চয় শেষ, পরিবারের সদস্যদের প্রতিবেলার খাবারের জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও চলছে স্থবিরতা। টাকার প্রবাহ নেই, যাতে করে অনেক ক্ষেত্রেই থমকে গেছে জীবন। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা, বিভিন্ন সামাজিক এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে স্বল্প পুঁজির ব্যবসা করেÑ তাদের অবস্থাও তথৈবচ। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের পথে নামতে হচ্ছে। কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে, যা থেকে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা।
ছুটি ঘোষণার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যার কথা বিবেচনায় এনে কৃষক, চা শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়ের মানুষসহ যারা দৈনন্দিন কাজে যেতে পারছে না তাদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকার খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ১০ টাকা কেজি চালসহ নানা সহযোগিতা করছে। সুস্থতার
পাশাপাশি সরকার মানুষের জীবনধারণের বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দিয়েছে, এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিল্প-কলকারখানা চালু রাখার ব্যাপারে নিজের অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় অনেক জিনিস উৎপাদনের জন্য আমাদের শিল্প-কারখানা চালু রাখতে হবে। একইভাবে তিনি প্রাণঘাতী ভাইরাসের কোনো সংক্রমণ যেন না ঘটে, সে জন্য সবার প্রয়োজনীয় কোয়ারেন্টাইন সময় গণনা করে  ছুটি ৯ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে অফিসের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহনও। এ খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী সীমিত আকারে যোগাযোগব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা চলছে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যোগাযোগের (পরিবহন) ক্ষেত্রে শ্রমিক শ্রেণির যারা আছে তারাও যাতে কষ্ট না পায়, সে জন্য তাদের তালিকা আমি ইতোমধ্যে করতে বলেছি। তাদের যেভাবে সাহায্য করা দরকার, আমরা সেই সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’ জনসমাগম এড়াতে আসন্ন পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল করার কথাও বলেছেন তিনি। একই কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুঃসময়ে কেউ সুযোগ নিলে, কোনো অভিযোগ পেলে আমি কিন্তু তাকে ছাড়ব না। বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম সহ্য করা হবে না।’
সচেতনতা এবং চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে যেমন ভাইরাস মোকাবেলা সম্ভব তেমনি করোনার প্রভাবে পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায়ও আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার যেমন খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে, তেমনি সমাজের বিত্তবানরাও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেনÑ এটি ভালো লক্ষণ। ঘরে থাকা মানুষকে সহায়তা করতে সরকারি উদ্যোগে যে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার কোনো পর্যায়েই যেন দুর্নীতি না হয়, সেদিকটি নিশ্চিত করতে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে ছাড় না দেওয়ার যে প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেছেন, আমরা মনে করি এ দৃঢ়তাই আমাদের সব সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে প্রেরণা দেবে।
বর্তমান সরকার সবসময়ই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের অসহায়তার সুযোগ যেন কেউ নিতে না পারে, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমরা বিশ^াস করি, সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, দুর্নীতিকে না বলে দেশের এ সঙ্কটময় সময়কে উৎরে যেতে সহায়তা করবে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় হালের এ সঙ্কট আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠব। সব অনিশ্চয়তা ও সঙ্কটকে ছাপিয়ে আবার উন্নয়নের ধারায় ফিরতে পারব।










সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close