ই-পেপার মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪

সময়ের আলো সাক্ষাৎকার
করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি কামনায় শবে বরাতে বিশেষ প্রার্থনা করুন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১২৪)
আজ পবিত্র শবে বরাত। ১৫ শাবানের এ রাত মুমিন-মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ রাত। লাখো বান্দার পাপ মুক্তির রাত। এ রাতের ফজিলত, মাহাত্ম্য ও করণীয় সম্পর্কে দৈনিক সময়ের আলোকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকার প্রধান মুফতি মাওলানা মুফতি হিফজুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমিন ইকবাল ও আবু তালহা তারীফ
সময়ের আলো : পবিত্র শবে বরাত কী?
মুফতি হিফজুর রহমান : শবে বরাত মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ রাত। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৫ তারিখ (১৪ তারিখ দিবাগত) রাতকে পবিত্র শবে বরাত বলা হয়। ‘শবে বরাত’ ফার্সি শব্দ; অর্থ মুক্তির রাত। হাদিসের ভাষায় একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়। আরবি ভাষায় বলা হয় ‘লাইলাতুল বারাত’। পবিত্র কোরআনে এ রাতকে ‘লাইলাতুল মোবারকা’ বা বরকতময় রাত হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া তাফসির, হাদিস ও ফিকহের ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলোয় ভিন্ন নামে, ভিন্ন শব্দে ও ভিন্ন পরিভাষায় শবে বরাতের আলোচনা এসেছে। পবিত্র শবে বরাতকে বলা হয় ‘লাইলাতুল কিসমাহ’ বা ভাগ্যরজনী, ‘লাইলাতুত তাওবাহ’ বা তাওবার রাত, ‘লাইলাতুল আফউ’ বা ক্ষমার রাত, ‘লাইলাতুল ইৎক’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত। ‘লাইলাতুত দোয়া’ বা প্রার্থনার রাত।
এ রাতে মুমিন বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করা হয়। অনেক পাপী বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আগামী বছর যারা জন্মগ্রহণ করবে এবং যারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। সব বান্দাদের আমলনামা আল্লাহর নিকট প্রকাশ করা হয়।
সময়ের আলো : শবে বরাতের মাহাত্ম্য কী?
মুফতি হিফজুর রহমান : উম্মতে মুহাম্মাদীর জীবন খুব অল্প সময়ের। এ অল্প সময়েই যেন উম্মত বেশি বেশি নেকি অর্জন করতে পারে সেজন্য আল্লাহ বিশেষ কিছু রাত দিয়েছেন। যে রাতগুলোয় ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম শবে বরাত। এ ছাড়াও শবে কদর, জুমার রাত এবং দুই ঈদের রাতও বিশেষ গুরুত্ব রাখে মুসলিম উম্মাহর জন্য। সওয়াব বৃদ্ধি ও গুনাহ মাফের এ রাতগুলো উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আল্লাহতায়ালার বিশেষ উপহার।
সময়ের আলো : শবে বরাতে আমাদের আমল কেমন হওয়া চাই?
মুফতি হিফজুর রহমান : এ রাতে আমরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও তাসবিহ-তাহলিলসহ প্রিয় নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠসহ প্রভুর ইবাদাত বন্দেগির মাধ্যমে কাটাব। বিশেষ করে ইশা ও ফজরের নামাজ যথাসময়ে আদায় করব। তা ছাড়া সালাতুত তাসবিহ ও অতীত জীবনের কাজা নামাজ আদায় করতে পারি। গুরুত্বের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারি এবং অতিরিক্ত আরও নফল নামাজ আদায় করতে পারি। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর জিকির করতে পারি।
শবে বরাতে কবর জিয়ারত করা ও পরের দিন রোজা রাখার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে। আমরা অবশ্যই এ রাতে শিরকি কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকব। অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ অন্তর থেকে মুছে আল্লাহর নিকট তাওবা করব। ক্ষমা চাইব। জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করব। আমাদের মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের মাগফেরাতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গল কামনা করে দোয়া করব। বিশেষ করে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে বিশেষ প্রার্থনা করব। নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের অসহায়ত্বের কথা জানেন। তিনিই বিশ^ব্যাপী করোনার বিপর্যয় থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে পারেন।
সময়ের আলো : শবে বরাতের বিশেষ ফজিলত কী?
মুফতি হিফজুর রহমান : ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে, হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন তোমাদের কাছে শাবানের মধ্যরাত (শবে বরাত) উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সে রাতটি জাগ্রত থাক (নামাজ পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে, তাসবিহ পড়ে, জিকির করে, দোয়া করে) এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কারণ এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে তাশরিফ আনেন এবং তিনি ঘোষণা করেন, আছে কি এমন কোনো ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফের জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ মাফ করে দেব। আছে কি এমন কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী, যে আমার কাছে রিজিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেব। আছে কি এমন কোনো বিপদগ্রস্ত, যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে সারা রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের ওপর রহমত বৃষ্টির মতো নাজিল হতে থাকে।’ (ইবনে মাজাহ : ১৩৮৮)
সুনানে বায়হাকি শরিফে হজরত আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘এমন পাঁচটি রাত রয়েছে, যেগুলোয় আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। সে রাতগুলো হলো, জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, দুই ঈদের রাত।’ আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের এ রাতে ক্ষমা করে দেন। এমনকি এ রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের বিশেষভাবে নজর দিয়ে থাকেন। হজরত আলা ইবনে হারিস (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রসুল (সা.) নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হয় তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙুলি নাড়া দিলাম। তখন তার বৃদ্ধাঙুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা বা ও হুমায়রা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, তা নয়, ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মারা গেছেন কি না। নবীজি (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন। রাসুল (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি নজর দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (বায়হাকি ৩/১৪০)
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসুল (সা.) মধ্য শাবানের রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’-তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন। তিনি বলতেন, ‘এ রাতে মহান আল্লাহ বনি কালবের বকরির পশমের সংখ্যার চেয়েও বেশিসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি)। এসব হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় আজকের রাতের ফজিলত অনেক। আল্লাহতায়ালা আমাদের এ রাতের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন।
সময়ের আলো : রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শবে বরাত কতটুকু ভূমিকা রাখবে?
মুফতি হিফজুর রহমান : শবে বরাত মানেই রমজান চলে আসা। শবে বরাতের পরই সবার মুখে মুখে রমজানের কথা থাকে। আজ শাবান মাসের চাঁদের কয়দিন চলে গেল, রমজান আগমনের আর কয়দিন বাকিÑ এমন আলোচনা চলে মুসলিম সমাজে। রাসুল (সা.) রজব মাসের চাঁদ দেখেই মাহে রমজানের আগমনের আশায় থাকতেন। রজব ও শাবান মাস হলো আমাদের রমজানের প্রস্তুতির মাস। আল্লাহর নবী (সা.) এই দুই মাসে বেশি বেশি দোয়া পড়তেন ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি-রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান কর এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) এ মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন যে, আমার ভয় হতো তিনি মনে হয় আর রোজা ভাঙবেন না।’ এভাবেই নবীজি (সা.) রমজানের প্রস্তুতি নিতেন।
আমাদের উচিত শবে বরাতসহ শাবান মাসের বাকি দিনগুলোয় বেশি বেশি নফল ইবাদত ও কোরআন তেলাওয়াত করে রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া। মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি আল্লাহর দরবারের রমজানে সুস্থতা ও বেশি বেশি ইবাদত করবার তাওফিক কামনা করা। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।









সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close