ঘরের বানানো
মিষ্টি সাদাফের খুব পছন্দ। এজন্য মাঝে মাঝেই মা মিষ্টি বানিয়ে দেয়, আর
সাদাফ গপগপ খেয়ে ফেলে। আজও মা মিষ্টি বানিয়ে দিলেন। মিষ্টির প্লেট সামনে
রেখে সাদাফ চুপ করে বসে আছে। একটা মিষ্টিও মুখে নিচ্ছে না। সে অবাক হয়ে
তাকিয়ে আছে প্লেটে। একটা সবুজ রঙের পিঁপড়া মিষ্টির সিরা দিয়ে তার নাম
লিখেছে। সাদাফ পড়ে ক্লাস ওয়ানে। নিজের নাম লিখতে এবং পড়তে শিখেছে অনেক
আগেই। সে আশ্চর্য হয়ে দেখলÑ স্পষ্ট তারই নাম লেখা। এবং লিখেছে সবুজ
পিঁপড়েটা। সাদাফের মনে হলো এই পিঁপড়েও তার মতো বাংলা পড়তে এবং লিখতে জানে।
পিঁপড়া তো এই দেশেরই পিঁপড়া। বাংলাতেই তো লিখবে আর পড়বে। কিন্তু সাদাফ সবুজ
রঙের পিঁপড়া কখনও দেখেনি। তার দাদাবাড়ি গ্রামে, সেখানে সে কত বেড়িয়েছে, কত
রকমের পাখি পিঁপড়ে দেখেছে। সবুজ রঙের পিঁপড়া আজই প্রথম দেখল। এবং সে
স্পষ্ট শুনতে পেল, সবুজ পিঁপড়ে বলল, মিষ্টি খেতে ভালো হয়নি। তোমার মা ভালো
মিষ্টি বানায়নি। চিনি কম পড়েছে। আমরা পিঁপড়া সমাজ অতি মিষ্টি পছন্দ করি।
সাদাফ
কী বলবে ভেবে পেল না। একটা পিঁপড়া তার সাথে কথা বলছে! নাকি সে ভুল শুনছে!
ডাকবে মাকে? ব্যাপারটা বলবে মাকে? শুনলে মা বিশ্বাস করতে চাইবেন না। রেগে
গলায় বলবেন, সাদাফ! খুব বেশি পাকামো হচ্ছে। পড়াশুনায় মন নেই। যত্ত উদ্ভট
চিন্তা!
সেদিন সকালে মাকে সাদাফ বলতে শুনল, কাকডাকা ভোরে কাকগুলো ডেকে
ডেকে খুব বিরক্ত করে। সেদিনই দুপুরে অবাক কাÐ ঘটে গেল। রোজ তাদের জানালার
ধারে যেই কাকটি এসে বসে, হঠাৎ কাকটি বলে উঠল, ‘কাকডাকা ভোর’ কথাটি ঠিক না।
আমরা কাকেরা যত ডাকি তারচেয়ে বেশি ডাকে অন্য সব পাখি। শুধু শুধু তোমার মা
কাক সমাজের ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন।
এই ঘটনা মাকে এসে বলতে গিয়ে সাদাফ
বড়সড় একটা ধমক খেল। এরপর এখন যদি পিঁপড়ার ঘটনা মাকে জানায়, মা তার কথাকে
মিথ্যা মনে করে ছেড়ে দেবেন না।
সবুজ পিঁপড়া বলল, তুমি হয়তো আমার গায়ের
রঙ সবুজ দেখে অবাক হয়েছো। আমার গায়ের আসল রঙ লাল। তোমাদের পাশের বাড়ির ভেতর
দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, দেখলাম একটি ছেলে ঘরে বসে দেশের পতাকা আঁকা শিখছে। লাল
সবুজের পতাকা। সবুজের অংশ ধরে হেঁটে এসে দেখি আমার গায়ের রঙ হয়ে গেল সবুজ।
এমনই রঙ যে, কোনো কিছুতে মুছে ফেলতে পারলাম না। আমার মা বাবা আমাকে চিনতে
পারছেন না। তারা ভাবছে আমি মিলিটারি পিঁপড়া। লাল পিঁপড়েদের ধ্বংস করতে
এসেছি। আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মনের দুঃখে তোমাদের বাড়িতে এসে
তোমার মিষ্টি খাচ্ছি। তোমার মাকে বোলো এরপর মিষ্টি বানালে চিনি বেশি দেয়।
সাদাফ বলল, তুমি কোন স্কুলে পড়ো?
আমি কোনো স্কুলে পড়ি না।
আমার নাম লিখতে শিখলে কীভাবে?
শিখিনি
তো! আমাদের সবকিছু শেখাই থাকে। তোমাদের যেমন স্কুল কলেজে ভর্তি হয়ে
লেখাপড়া শিখে সবকিছু জানতে হয়, আমাদের ব্যাপার সেরকম না। আমরা না পড়ে লিখেই
তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানি। এবং আমাদের শক্তিও অনেক। তুমি কাছাকাছি
খাবারের ঘ্রাণ পাও, আমাদের ঘ্রাণশক্তি এত বেশি দূর-দূরান্তের খাবারের
ঘ্রাণও আমরা পেয়ে থাকি। তুমি নিশ্চয়ই হাতি আর পিঁপড়ার সেই গল্পটা শুনেছÑ
একটা দুষ্টু হাতি পিঁপড়া-সমাজের ক্ষতি করে যাচ্ছিল, একটি পিঁপড়া তার কানের
ভেতর ঢুকে কামড় দিয়ে হাতিকে উচিত শিক্ষা দেয়। এখন চিন্তা করো আমরা কত বড়
প্রাণীকে ধরাশাই করে ফেলি। বুঝো আমাদের কত শক্তি!
সাদাফ ভেবে দেখল
পিঁপড়ার কথাই ঠিক। তারা আকারে ক্ষুদ্র কিন্তু বুদ্ধি জ্ঞানে শক্তিতে অনেক
বড়। পিঁপড়া বলল, করোনা ভাইরাসের কারণে তোমার স্কুল এখন বন্ধ। বাসায় থেকে
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে নিজেকে। নোংরা ময়লা জিনিসে হাত দেবে না। ঘন ঘন
সাবান পানিতে হাত ধোবে। হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখবে। ঘরে থাকবে
সবসময়। নিরাপদ থাকবে।
আরেকদিন এসে তোমাকে আরও কিছু উপদেশ দিয়ে যাব। আজ যাই, বাড়িতে মা কান্না করবেন।
সাদাফ অবাক হয়ে এতক্ষণ পিঁপড়ার সব কথা শুনছিল। সে জিজ্ঞেস করল, আবার কবে আসবে পিঁপড়া?
পিঁপড়া মুচকি হেসে বলল, যেদিন তোমার মা মিষ্টিতে চিনির পরিমাণ বেশি দেবেন।