ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘুষ নিতে রাজি না হওয়ায় নির্মমভাবে হত্যা
প্রকাশ: সোমবার, ১৮ মে, ২০২০, ৪:৪৯ পিএম  (ভিজিট : ১০২২)
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই সুনামের সঙ্গে চাকরি করে আসছিলেন। কিন্তু ঠিকাদারদের ঘুষ লেনাদেনার জন্য ছয় মাস আগে একবার চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন।

ভাতিজাকে নিয়ে চীনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যবসা শুরুর আগেই খুনীদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে।

ঈদের আগে বিল ছাড়িয়ে নিতে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে অফার করা হয়েছিল তাকে। নিম্নমানের কাজের কারণে সেই বিল আটকে রাখাই তার মৃত্যুর মূল কারণ।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার বা আটক বা চিহ্নিত করা যায়নি বলে জানা গেছে।

নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের বড় ভাই নূর নবী বলেন, ব্যক্তি জীবনে সৎ থাকার কারণে তার ভাইকে অনেক হেনস্তা হতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে থাকার সময়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর ওএসডি করা হয়েছিল।

সর্বশেষ গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

মাস ছয়েক আগে দেলোয়ার বলেছিলেন, ‘এভাবে চাকরি করা যায় না। কারণ ঘুষ নিলে সরকার ধরে, আর ঘুষ না নিলে ঠিকাদাররা মারার জন্য রাস্তায় লাঠি নিয়ে বসে থাকে। এভাবে ভয় নিয়ে চাকরি করা যায় না। তাই ভেবেছি, ভালভাবে জীবন যাপন করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করব।’

এজন্য এক ভাতিজার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছিলেন। চীনের সঙ্গে ব্যবসা করার কথা ছিল। এজন্য নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। ব্যবসা শুরুর আগ পর্যন্তই চাকরি করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।

হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ছাড়াও দেলোয়ারের তিন ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচের দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৯৮৬-৮৭ ব্যাচের এ্যালামনাই শিক্ষার্থীদের সংগঠন ফোরাম-৮৬।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সততার কারণে ঠিকাদারদের চক্ষুশোলে পরিণত হয়েছিলেন।

তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, এটি অত্যন্ত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার দিন দেলোয়ার হোসেনকে নিতে আরএফএল কোম্পানির একটি গাড়ি দুপুর বারোটার দিকে তার মিরপুরের বাসার নিচে আসার কথা ছিল।

সেই গাড়িতেই তার গাজীপুর যাওয়ার কথা ছিল। অথচ সকাল নয়টায় একটি প্রাইভেট মাইক্রোবাস আসে। চালকসহ চারজন সেই মাইক্রোবাসে ছিল। তাদের দুইজন একটি দুই দিকে বসা ছিল। একজন পেছনে বসা ছিল।

তারা তাদের মোবাইল নষ্ট হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সেখানে থাকা একজন রিক্সাচালকের মোবাইল ফোন দিয়ে তাকে ফোন দেয়। বলে আরএফএলের গাড়িটি নষ্ট। এজন্য তারা আগে আগেই চলে এসেছেন। আর একটু সকাল সকাল অফিসে যেতে উর্ধতন কর্মকর্তারা অনুরোধ করেছেন বলে জানান।

এমন কথায় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি নেমে গাড়িতে বসেন। গাড়িতে থাকা সবাই করোনাভাইরাসের কারণে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা পিপিই পরিধান করেছিল। তাদের দুইজন মাইক্রোবাসের সামনের দিকে তিন সিটের সারির দুই দিকে বসেছিল। আর একজন পেছনে বসেছিল।

গাড়িটি সকাল দশটার দিকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত যায়। এরপরই তাকে পেছন থেকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে টেনে ফেলে দেয়া হয়। শ্বাসরোধে হত্যার সময় ছটফট করায় মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে মারধর করা হয়। সকাল সাড়ে দশটার পর থেকেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ওই দিনই গত ১১ এপ্রিল বিকেলে উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম দিকের ৮ নম্বর সড়কের পাশের একটি ঝোপ থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (অঞ্চল-৪) নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের (৫০) লাশ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ।

হত্যকান্ডের রহস্য উদঘাটনের তদন্ত চলছে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close