ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

আম্ফানে মৃত্যু বেড়ে ২২
প্রকাশ: শনিবার, ২৩ মে, ২০২০, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৩.০৫.২০২০ ২:৫১ এএম  (ভিজিট : ১০৮)
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২২ জন হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে যশোরেই ১২ জন। এ ছাড়া পিরোজপুরে তিন, পটুয়াখালীতে দুই এবং ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ভোলা, চাঁদপুর ও বরগুনায় একজন করে মারা গেছে। অন্যদিকে, ঝড়ে কুষ্টিয়ায় জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের কারণে এখনও বিদ্যুৎহীন প্রায় ছয় লাখ গ্রাহক। তবে উপকূলীয় ১৩ জেলায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রম।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান শক্তি কিছুটা হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এ ঝড় প্রবেশ করে বাংলাদেশে। ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক। বুধবার রাতে ঝড়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় এক দম্পতি ও বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন এবং শার্শায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়, যা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানতে পারেন বৃহস্পতিবার রাতে। এ নিয়ে জেলায় ঝড়ে ১২ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটল। এর আগে বুধবার চৌগাছায় দুজন, শার্শায় দুজন ও বাঘারপাড়ায় একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ‘ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মণিরামপুরে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর আগে জানা যায়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া শার্শায় ঝড়ের মধ্যে গাছ পড়ে ওই ইউনিয়নের জেলেপাড়ার গোপালচন্দ্র ও মহিপুরা গ্রামের মিজানুর রহমান মারা গেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল জানান।
এদিকে, সরকারি তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে খুলনায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা কয়রা। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, মহেশ^রীপুর, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ দুর্গত হয়েছেন। কয়রার ২৪টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে দুর্গত অবস্থায় দিনযাপন করছে। এ ছাড়া পাইকগাছার ১০ ও বটিয়াঘাটার সাতটি ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনার ৯টি উপজেলায় ৮০ সহস্রাধিক পরিবার আম্ফানে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে পূর্ব সুন্দরবনের ভেতরে গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জানান, আম্ফানের আঘাতে সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশন, লাউডোব, দুবলা ও মরাপশুর ক্যাম্পের জেটি, ঘরবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং বনের গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ঝড়ে কোনো জেলের নৌকাডুবি বা জেলে নিখোঁজ নেই। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এই এলাকায় কেউ মারা যায়নি।
এ ছাড়া দেশের ১৩ জেলার মোট ৮৪টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো দুর্যোগের প্রস্তুতিতে শুধু উপকূলীয় এলাকার জন্যই ৫ হাজার ৫৫৭ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সুপার সাইক্লোন আম্ফানে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অন্তত ৮-১০ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধ-তীররক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি।’ তিনি জানান, শুক্রবার থেকে উপকূলীয় ১৩ জেলায় পুরোদমে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।
আম্ফানে দেশের টেলিকম নেটওয়ার্ক অবকাঠামোয় অনেক ক্ষতি করেছে বলে জানিয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ। তিনি জানান, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারের সাইট ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টেলিকম সেবা শতভাগ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে কুষ্টিয়ায় জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের পর শতাধিক  টেকনিশিয়ান ৪০ ঘণ্টায়ও তা মেরামত শেষ করতে পারেননি। আম্ফানের তাণ্ডবে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সব লাইন মেরামত করা হলেও পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফরমার পুনরায় স্থাপন করতে না পারায় জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও রাজবাড়ীর আংশিক মিলে প্রায় ছয় লাখ গ্রাহক শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন বলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) কুষ্টিয়া অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানিয়েছেন। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মো. মাসুম আলম বকসী বলেন, ‘বুধবার রাত ১০টার দিকে বটতৈল এলাকার ওই উপকেন্দ্রে আগুন লাগে। তাতে দুটি ট্রান্সফরমারে একটি সম্পূর্ণ, অন্যটির বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আগুন লাগার পরে শুরু হয় আম্ফানের তাণ্ডব। ফলে মেরামত শুরু করতেও বিলম্ব হয়। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ দলসহ শতাধিক টেকনিশিয়ান ট্রান্সফরমার মেরামত ও পুনঃস্থাপন করতে বিরতিহীন কাজ করে যাচ্ছেন।’




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close