ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

প্রকৃতি আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে
প্রকাশ: শনিবার, ২৩ মে, ২০২০, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১১৮)
কিংবদন্তি অভিনেতা আবুুল হায়াত। দীর্ঘদিন ধরেই ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাজহারুল ইসলাম তামিম

কাজপাগল মানুষ আপনি। এ পরিস্থিতি নিজেকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে না?
খুব অস্থিরতায় ভুগছি। দুই-আড়াই মাস ধরে ঘরের বাইরে যাইনি। এভাবে আর কতদিন থাকা যায়। টুকটাক লেখালেখি করি। সেখানেও মন বসছে না। আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টা লেখেই উঠে যাই। লিখে আবার কেটে দেই। দশ-বারোটা বই হাতের মধ্যে ঘুরছে। কিন্তু কোনোটাই শেষ করতে পারছি না। ঠিকঠাক খেতেও পারছি।
অভিনয় কতটা মিস করছেন?
মাসের ৩০ দিন কাজ করতাম। সকাল ৯টায় বাসায় থেকে বেরিয়ে রাত ১১-১২টায় বাসায় ফিরতাম। এ বয়সে আমার বিরামহীন কাজ দেখে লোকজন অবাক হতো। প্রশ্ন করত, এভাবে কীভাবে এখনও অভিনয় করে যাচ্ছি। সারা দিন কাজের মধ্যেই থাকতাম। এখন কাজ না করতে ভালো লাগছে না। মানসিক অসুস্থতায় ভুগছি।
করোনা পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দিয়েছে কি না?
মানুষ নিজেকে বদলানোর চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বভাবটা ঠিক ওরকম না। আমরা সুন্দর জায়গাগুলো নষ্ট করে ফেলেছি, গাছপালা কেটে ফেলেছি, পাহাড়গুলো কেটে ফেলেছি, নদী নোংরা করেছি। এসব কাজ করে তো প্রকৃতিকে নষ্ট করে ফেলেছি। এখন প্রকৃতি আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। সবাই মনে মনে ভাবছি আমরা আর আগের মতো থাকব না। সব ঠিক করে নেব, সবকিছু সুন্দর করে রাখব। নতুন পৃথিবী গড়ব। কিন্তু আমরা আদৌ শুধরাবো কি না তা জানি না। আসলে বিপদে পড়লে বাঙালির চিন্তা কিছুটা পাল্টে যায়। বিপদ থেকে উদ্ধার হলে আবার আগের মতো হয়ে যায়। এই হলো মূল সমস্যা।
করোনা রোগীর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আপনি এ নিয়ে কতটা চিন্তিত?
প্রতিদিনই তো আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও কেন সবাই সচেতন হচ্ছে না বুঝতে পারছি না। মানুষ দলে রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, গাড়ি নেই, হেঁটে যাচ্ছে। ফেরিতে গিয়ে মানুষ বসে থাকছে। আর সরকারও মানুষকে ঠিক সেভাবে সচেতন করতে পারেনি। এভাবে চলতে থাকলে ভয়ঙ্কর একটা অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি ভীষণ ভীত।
নাটকের ইন্ডাস্ট্রিতে যে ক্ষতি হচ্ছে সেটা কি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কি না?
যে ক্ষতি হচ্ছে বা হবে সেটা সামলানো খুব মুশকিল। ইতোমধ্যে দুই মাসের বেশি সময় ধরে আমরা ঘরে বসে আছি। আমাদের সংগঠনগুলো শুরু থেকেই চেষ্টা করছে তাদের সাধ্যমতো। তারা কিছু পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। যতটুকু জানি সরকারের সঙ্গেও কথা-বার্তা বলছেন। প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছেন। অদূর ভবিষ্যতেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু একটা হবে আশা করা যায়।
প্রতিটি সেক্টর নিয়ে সরকার ভাবছে। কিন্তু শোবিজ অঙ্গনের প্রতি সরকারের দৃষ্টি তুলনামূলক কম কি না?
এখন পর্যন্ত তো আমাদের এ অঙ্গন নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ দেখছি না। এ অঙ্গনের সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। কবে আমরা কাজে ফিরতে পারব সেটা কেউই জানি না। একটা বড় দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। এখানে অনেক মানুষ আছে যারা ছয় মাস থেকে এক বছর রোজগার না করেও কাটিয়ে দিতে পারবে। আবার এমন অনেকে আছেন তাদের কোনো সঞ্চয় নেই। দিন আনে দিন খায় এমন যারা আছেন তারা না খেয়েও দিন কাটাচ্ছে। সবার অবস্থা বা আয় তো এক না। কিন্তু এ অঙ্গনের সমস্যাটা নিয়ে কেউ সেভাবে কথা বলছে না। আশা করি শোবিজ অঙ্গনের দিকে সরকার নজর দেবেন।
নাটকের সংগঠনগুলোয় এই সময়েও অনৈক্য দেখা গেছে। পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
সংগঠনের মধ্যে কোনো অনৈক্য আছে বলে আমি মনে করি না। ভিন্ন মত থাকতেই পারে। একটা দেশে কী সবার মত এক থাকে। একেক জনের একেক মত। ঠিক তেমনি সংগঠনেও মাঝেমাঝে মতের ভিন্নতা হতে পারে। এটা কোনো ব্যাপার না। এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না।
মঞ্চ নাটকের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখছিলেন। কতদূর এগিয়েছে?
লকডাউনের মধ্যেই একটা স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ করেছি। জানি না কেমন হয়েছে। আরেকটা লেখা শুরু করেছি। সেটাও মঞ্চ নাটকের জন্য।
জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে কি না?
যতটুকু পেয়েছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট। এমন কিছু করিনি, যাতে এর থেকে বেশি কিছু পাব। দেশ, দেশের মানুষের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আর কিছু চাই না জীবনে।
এমন কোনো স্বপ্ন আছে যেটা এখনও পূরণ করতে পারেননি?
একটা সিনেমা বানানোর খুব ইচ্ছা ছিল। সময়, সামর্থ্যরে কারণে বিষয়টি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। সামনে সম্ভব হবে কি না জানা নেই।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close