পরিস্থিতি উন্নতি হলে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যাতে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত না হয় সে জন্য এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে না। আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাচ্ছি। যাতে করে এই করোনাভাইরাস দ্বারা শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত না হয়, কারণ এরা আমাদের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ তো আমি ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের বিগত দুই মাসের সুদের চাপ কমাতে দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া আনুমানিক এক কোটি ৩৮ লাখ ঋণগ্রহীতা সরাসরি উপকৃত হবেন বলেও জানান তিনি। ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো কলেজ এখন আমরা খুলব না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমরা খুলতে পাচ্ছি না। আমি ভবিষ্যৎ তো ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। সে কারণে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনই উন্মুক্ত করব না। আমরা দেখি এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে পর্যায়ক্রমে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত করব।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব সবাই যেন ঘরে বসে পড়াশোনা করে। এটা পড়াশোনার একটা ভালো সুযোগও। আমাদের নিজেদেরও এখন বেশি কাজ নেই, অনেক কিছু জানার, পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। সেটাও কম কথা না। এখানে আমি বলব সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে লেখাপড়া করে নিজেদের তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাংলাদেশকে বিশ^দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে, সেটাই আমি চাই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করব তোমরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা সেই শিক্ষাই দেবেন যে শিক্ষাটা হচ্ছে শুধু নিজে ভালো থাকা না, দেশের কল্যাণে কাজ করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা। যেটা জাতির পিতা আমাদের বারবার শিখিয়েছেন। মানুষের কল্যাণেই তারা নিবেদিত প্রাণ হয় সেই শিক্ষাই তারা যেন গ্রহণ করেন। যে শিক্ষা দেশকে ভালোবাসা, মানুষকে ভালোবাসা, মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করা।’
ঋণগ্রহীতাদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি : ফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের গেল দুই মাসের সুদের চাপ কমাতে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া আনুমানিক এক কোটি ৩৮ লাখ ঋণগ্রহীতা সরাসরি উপকৃত হবেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, এই দুই মাস যেহেতু সব কিছু বন্ধ, কাজেই এখানে সুদ টানার প্রয়োজন হবে না। এখানে আমরা তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেব।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব, ব্যাংকের গভর্নর সবার সঙ্গে বসে আমরা নতুন একটা প্যাকেজ দিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে ১৮টি প্যাকেজ দিয়েছি। এটা হলো ১৯ নম্বর প্যাকেজ। ১৯টি প্যাকেজ আমরা দিচ্ছি। সেখানে আমরা এভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু দুই মাসের সুদ... স্থগিত করা ছিল, সেখানে সুদের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। স্থগিত করা উপরোক্ত যে সুদ, এই সুদের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে দেবে, যা আনুপাতিক হারে ঋণগ্রহীতাদের আর পরিশোধ করতে হবে না। তাদের এটুকু আমরা মুক্ত করে দিচ্ছি। আর সুদের যে অবশিষ্ট অর্থ, সেটা ১২ মাস কিস্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণগ্রহীতারা পরিশোধ করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এই দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার ফলে আনুমানিক এক কোটি ৩৮ লাখ ঋণগ্রহীতা যারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, তারা সরাসরি উপকৃত হবেন। তারা উপকার পাবেন।
ইতঃপূর্বে ঘোষিত প্যাকেজগুলোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা জানেন আমরা এক লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দিয়েছি। যেটা আমাদের জিডিপির ৩ দশমিক ৭ ভাগ। আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি। এত প্রণোদনা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দিয়েছে কি না, জানি না। তিনি বলেন, এই দুই হাজার কোটি টাকাসহ সরকার ঘোষিত ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজে মোট পরিমাণ দাঁড়াল এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। আমি জানি না পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এভাবে দিয়েছে কি না। কিন্তু আমরা সেভাবে সেই সুযোগটা দিচ্ছি।
প্রণোদনা প্যাকেজের বাইরে কওমি মাদ্রাসা, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বিশেষ অর্থ সহায়তা এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা সহযোগিতা ও ভাতার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।