ই-পেপার রবিবার ৩ নভেম্বর ২০২৪
রবিবার ৩ নভেম্বর ২০২৪

নদী আর তৈমুর
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:০৯ এএম  (ভিজিট : ২৪৮)
তীব্র তাপপ্রবাহে আকাশ ফেটে মাটিতে তার টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। কারও হাত কাটে, কারও পা কাটে। কেউ মৃতপ্রায়। জ্যৈষ্ঠ মাস প্রায় শেষ হওয়ার পথে। বৃষ্টিপরীদের রা শব্দটি নেই। খাঁ-খাঁ মাটি। ফসলাদি মাঠেই জ্বলে-পুড়ে সাফ। প্রকৃতি সৎমায়ের মতো বৈরী আচরণে।

সবই চলছে গতিহীন ভ্যাপসা গরমে। চলার নামই জীবন। এরই মধ্যে প্রেমে হাবুডুবু নদী আর তৈমুর। সে কী যাতা! আগুনের হাতা। দুই গ্রামের মাঝে একটা ছোট্ট নদী। চৈত্র মাসে পানি কম থাকে, তাই হেঁটেই পার হওয়া যায়। কেউ দেখুক, কেউ না দেখুক, তাতে তাদের দিশা নাই বললেই চলে। নিজেরাই নিজেদের নিয়ে ঘোরের মাঝখানে। পড়াশোনা চাঙ্গে তুলে প্রেমপাঠে মনোনিবেশে দুই গ্রামের দুই দেওয়ানা। সবে এইট পাস করেছে নদী। আর এসএসসি দেবে তৈমুর। বাপের সঙ্গে মাঠে-ঘাটে কাজ একটু করতেই হয়। অবাধ্য হলে বিয়েশাদি এ জীবনে নেই। গাছতলাই হবে সংসার। অকর্মার ঢেঁকি সে তো নয়! আর নদী পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের কাজে একটু-আধটু জোগালি দেয়। সারা গ্রাম তাদের প্রেমের রসে টইটম্বুর।

অবশেষে এলো আষাঢ় মাস। আকাশ কালো কালো ধূসর। পায়ের তলার মাটি সব আকাশে জড়ো হয়েছে। কাদা কাদা মেঘ। মেঘ ঝুলছে হাতের কাছে। একটু হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায়। দশ মাসের ভরা পোয়াতি এখন আকাশ। এখন আর তখন কান্নার আওয়াজে ভাইসা যাবে গ্রামের পর গ্রাম। নদীর দৃষ্টি গাঙের  দিকে। বরষার পানি অঝোর ধারায় ঝরছে তো ঝরছে। বৃষ্টি থামার নাম-গন্ধ নাই। কতদিন হয় না দেখা তার সঙ্গে! পুরো সাত রাত সাত দিন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। এলো চুল ছড়িয়ে মুখ গোমরা করে সে কেঁদেই চলেছে। সূর্য তার রোদে পুড়িয়েছে বলে কি বৃষ্টি তার জলে ভাসিয়ে দেবে? নদীর কী দোষ? গাঙ ডুবে যায়, উছলে ওঠে জল। মাঠ-ঘাট ডুবে যায় গৃহস্থালি বসতভিটা। জল উথাল-পাথাল। এমন বৃষ্টি কি কেউ কোনোদিন দেখেছে? নাকি জেনেছে এ জনমে? মেঘে মাদল বাজিয়ে যেন ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বর আসছে। গাঙ সাঁতরে এই গাঁয়ে তৈমুর। গাঙ পার হতে সময় গেল বহু। সাড়া নেই। নাক ডেকে ডেকে লম্বা ঘুম গ্রামের লোকেরা। দুই গ্রাম এক নদী মিলেমিশে একাকার। পুরো আকাশ থেকে অবিশ্রান্ত ধারায় ঝরে চলেছে জল। না আছে আদি তার, না আছে অন্ত। না আছে কূল, না আছে কিনারা। এত জল কীভাবে রেখেছিল আকাশ তার বুকে? সেখানে কি বরফ বানানোর মেশিন আছে? হায় আল্লাহ, কবে হবে এর শেষ? ডুবে যায় ঘরবাড়ি, ডুবে যায় মানুষ, গাছগাছালি, জীবজন্তু। কী উপায়! কেবল জল জল জল। এ কী নূহের প্লাবন? নৌকায় ঘরসংসার। গাঙ পার হতে তৈমুরের সময় চলে যায় সাত তিন সাত রাত। অবশেষে পুলসিরাত পার হলো তৈমুর। কিন্তু ঘাটে পড়ে থাকা তৈমুর জীবিত নাকি মৃত? প্রশ্ন সারা গাঁজুড়ে। সারাদিন নদী ঘাটপাড়ে থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে উপুড় হয়ে পড়ে আছে চালাঘরে। খোঁজ পড়ে যায় নদীর। নদী তো ঘুমে অচেতন। মাচার ওপর কাঁথার তলে।

তৈমুর নদীর জলে পোড়ায় তার প্রেমের আগুন। সারা গা তার পোড়াজ্বর আগুনে, দিশাহারা অচেতন তৈমুর। গাঙের ধারে ভেসে থাকা তৈমুরের দেহ গ্রামের মানুষের নজর কাড়ে।

লোকে বলে, ‘কীভাবে ঘুমায় তার ভালোবাসার মানুষ এখন?’

লোকে বলে, ‘ওরে সাপে কেটেছে। ওঝা ডাকো। জলে জলেই কতদিন! আর মাচার ওপর ঘুমের ঘোরে পড়ে থাকা নদীর উষ্ণ দেহ এক টুকরো নদী হয়ে উথাল-পাথাল।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close