দেশে চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে দেখা অস্থিরতা। এর পরের মাস আগস্টজুড়েও প্রশাসনে অস্থিতিরতা দেখা যায়। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। যা মোট এডিপি বরাদ্দের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকারের এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
বুধবার (২ অক্টোবর) এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে আইএমইডি। যেখানে এডিপি বাস্তবায়নের এই হার এ যাবতকালের সর্বনিম্ন বলে জানানো হয়েছে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ খরচ হয়েছে ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। যা মোট এডিপি বরাদ্দের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে কোনো অর্থবছরই এডিপি বাস্তবায়ন হার ৩ শতাংশের কম ছিল না। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, এর আগের অর্থবছরে বাস্তবায়ন হার ছিল ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকারের এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
আইএমইডির একাধিক কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রস্তুতিমূলক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মককর্তারা। এ কারণে অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়ন হার কম থাকে। এছাড়া জুলাই মাসজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা ব্লকেড ও অযোহযোগ আন্দোলনের প্রভাবও পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নের হারে।
একই পরিস্থিতি ছিল আগস্ট মাসে। গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন ভারতে পালিয়ে যান। এর তিনদিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু, আগস্ট মাসজুড়ে প্রশাসনে অস্থিতিরতা দেখা যায়। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়ে।
আবার বিদেশি অর্থায়নের কিছু প্রকল্পে বিদেশি কর্মী, ঠিকাদার প্রতিনিধি ও পরামর্শকরা প্রকল্প সাইট ছেড়ে চলে যায়। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যহত হয়।
এদিকে সরকারের পাইপলাইনে থাকা প্রস্তাবিত প্রকল্পের পাশপাশি চলমান প্রকল্পও নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে চলমান অনেক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবও আটকে গেছে। সব মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়নও স্থবির হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টারা জানান।
আইএমইডি বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রকল্পে বরাদ্দ ও অর্থছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে ধীরগতিতে। এ কারণে জুলাই-আগস্ট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার কমেছে।
আইএমইডির প্রতিবেদন মতে, জুলাই-আগস্ট মাসে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। যা সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগে কোনো অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট মাসে এত কম অর্থ ব্যয় হয়নি। গত অর্থবছরের একই সময়ে টাকার অংকে ব্যয় হয়েছিল ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, যা ওই অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ১ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল।
অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তা খাতের বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বৈদেশিক তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া অনেক বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগও প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে পারেনি। এরমধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এডিপি ০.০১ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ০.২৩ শতাংশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ০.৩৫ শতাংশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ০.০১ শতাংশ, সেতু বিভাগ ০.২৩ শতাংশ, প্রধান উপদেষ্টার কাযালয় ০.০১ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ০.৯৬ শতাংশ এবং শিল্প মন্ত্রণালয় ০.৫৭ শতাংশ।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাদ্দের ২.৪৭ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৩. ১৬ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১.০৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১.৯৩ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ০.৬৫ শতাংশ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ০.৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।
সময়ের আলো/জেডআই