গত কয়েক দিনের অস্থিরতার পর বুধবার অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানা চালু হলেও শিল্প এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর টিমকে টহল দিতে দেখা যায়। আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে গতকালও শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। এ অবস্থায় আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল গাজীপুর, আশুলিয়া এবং সাভার এলাকার প্রায় ৯৯ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল। শিল্প এলাকায় বড় তেমন কোনো অস্থিরতার খবর মেলেনি। শিল্প মালিকদের মনে আতঙ্ক কাজ করছে-যদি কোনো ইস্যু তৈরি করে শিল্প এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ জন্য শিল্প মালিকরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে শিল্প এলাকায় পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে আশুলিয়ায় ৫২ ঘণ্টা পর সড়ক অবরোধ তুলে নেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। সেনাবাহিনীর আশ্বাসের পর তারা অবরোধ তুলে নেন। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সড়ক থেকে সরে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। ফলে টানা ৫২ ঘণ্টা পর ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কটি। বর্তমানে পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করতে বলেন। একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তারা জানান, বার্ডস গ্রুপের চেয়ারম্যানকে আটক করা হয়েছে। তাকে কারখানায় আনতে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে হবে। এরপরই শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান। তারা কারখানার প্রধান ফটকে গিয়ে অবস্থান নেন।
শ্রমিকরা বলেন, বার্ডস গ্রুপের চারটি কারখানা বার্ডস আর এন আর ফ্যাশন্স লিমিটেড, বার্ডস গার্মেন্টস, বার্ডস ফেডরেক্স ও বার্ডস এ অ্যান্ড জেড লিমিটেড পাওনা পরিশোধ না করে বন্ধের ঘোষণা দেয়।
অন্যদিকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৩৬ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। পরে শিল্প পুলিশের করা একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিকালে গ্রেফতারদের আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৩৬ জনকে আটক করেছেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা। আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
এরআগে শিল্পপুলিশ-১-এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদ মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সোমবার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় মণ্ডল নিটওয়্যার গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানায় চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে আলোচনায় বসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুই শ্রমিককে গুম ও দুজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে গুজব ছড়ান শ্রমিকরা। এ ছাড়া পাশর্^বর্তী এলাকার ন্যাচারাল ডেনিমস ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা অযৌক্তিক বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন। এক পর্যায়ে অসন্তোষের কারণে কর্তৃপক্ষ এই দুই কারখানায় ছুটি ঘোষণা করলে সব শ্রমিক একযোগে বের হয়ে আসেন।
এ সময় তাদের সঙ্গে ম্যাঙ্গোটেক্স কারখানার উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা বহিরাগতদের নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে টঙ্গাবাড়ি এলাকায় মণ্ডল গার্মেন্টসের সামনে অবস্থান নেন। পরে কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের যৌথবাহিনী আটকে রেখেছে বলে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তারা।
এজাহারে আরও বলা হয়, এ সময় যৌথবাহিনী কর্মকর্তারা বারবার তাদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন তারা। তাদের আবারও বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক ও বহিরাগতরা আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোটা ও রডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালান। এ সময় শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম ও র্যাব-৪-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামানসহ যৌথবাহিনীর ১০-১২ জন সদস্য গুরুতর আহত হন। ভাঙচুর করা হয় সেনাবাহিনীর পাঁচটি, র্যাবের দুটি ও শিল্প পুলিশের একটিসহ আটটি গাড়ি।
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আশুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৩৬ জনকে আটক করা হয়েছে। পরে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহীনুর কবির সময়ের আলোকে বলেন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর চেষ্টায় ৩৬ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরপর সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়। তবে এখনও সড়কটিতে যানবাহনের চাপ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করছে।
এর আগে গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে মহাসড়কের বাইপাইল পয়েন্টে উভয় লেনই অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। রাতেও তারা সড়কে ছিলেন। পরদিন মঙ্গলবার সড়ক থেকে সরেননি। সবশেষ বুধবারও তারা সড়কে অবস্থান নেন। এতে সড়কটির দুই পাশ স্থবির হয়ে পড়ে। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে।