প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫৯ এএম (ভিজিট : ১৪২)
শিশুদের খেলার উপকরণ হচ্ছে খেলনা। শিশুদের মনের বিকাশে খেলনাসামগ্রী সরাসরি ভূমিকা রাখে। শিশু বয়সে শুধু খেলতে খেলতেই বাচ্চারা এমন অনেক দক্ষতা অর্জন করে যেগুলো জীবনভর কাজে লাগে। খেলতে খেলতে তারা সামনে আসা কোনো সমস্যা মোকাবিলা করতে শেখে, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে শেখে, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সৃজনশীলতা ও কল্পনা করার দক্ষতা তৈরি হয়। উপযুক্ত খেলনাসামগ্রী দক্ষতা অর্জন আর বিকাশ ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। কিন্তু খেলনাও শিশুদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। উন্নত দেশগুলোর অভিভাবকরা শিশু ও তাদের খেলনা বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক মানুষ শিশুস্বাস্থ্যের বেলায়ও তেমন একটা সচেতন নন। এর ফলে শিশুরা বিপত্তির মধ্যে পড়ছে।
বুধবার সময়ের আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশের বাজার থেকে সংগ্রহ করা ২৫০টি পণ্যের মধ্যে ১৫৭টি পণ্যেই সিসা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৫৯ শতাংশ পণ্যে ৯০ পিপিএমের অধিক মাত্রার সিসা রয়েছে, যাতে ১৩৭০ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এ ছাড়া শিশুদের খেলনা বর্ণমালা সেট, পানির মগ ও স্টেশনারি ব্যাগের মতো দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যে উচ্চমাত্রায় সিসা পাওয়া গেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব পণ্যের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সিসা ব্যবহার হচ্ছে বলে গবেষণায় বলা হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের।
প্রতি বছর হাসপাতালে খেলনা-সংক্রান্ত আঘাতের কারণে অনেক শিশুকে চিকিৎসা নিতে হয়। কিন্তু বিষাক্ত খেলনার কারণে দীর্ঘ মেয়াদে শিশুদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খেলনার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব নয়, তবে খেলনা কেনার ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া উচিত। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য খেলনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনো কোনো খেলনা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
আমরা মনে করি, খেলনা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এবং যারা এগুলো বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রথমে খেলনা তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তৈরিকৃত খেলনা কোন কোন বয়সের শিশুরা ব্যবহার করতে পারবে এবং যারা বিপণনের সঙ্গে জড়িত, তারা এ ব্যাপারে শিশু ও তাদের অভিভাকদের জানিয়ে দেবে।
যারা এসব করবে না, উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে তাদের সব ধরনের খেলনার উৎপাদন বন্ধ করতে হবে-এ অভিমত প্রকাশ করেছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া আমদানিকৃত বাহারি খেলনার প্রতিও নজর দিতে হবে। সেগুলোতে বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে কি না তা যাচাই-বাছাই করেতে হবে। যে খেলনাই বেছে নিন না কেন, সেটি যেন শিশুর জন্য কোনোরকম ক্ষতিকর না হয়, সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকাটাও জরুরি।