ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শীর্ষ ঋণখেলাপি আখ্যা দেওয়ায় বিস্মিত বেক্সিমকোর চেয়ারম্যান
প্রকাশ: রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:১৬ পিএম  (ভিজিট : ৪৭৫)
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর দেওয়া বিবৃতির আলোকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় কিছু আপত্তিকর অভিযোগের পাশাপাশি ঋণ পুনঃতফশিলিকরণের সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে একদল লুটেরা আইনপ্রণেতা হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে। যিনি গত নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপকে শীর্ষ ঋণ খেলাপি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) টিআইবির চেয়ারপার্সনকে লিখিত এক চিঠিতে এই বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। যা গণমাধ্যমেও পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক যখন আমাদেরকে ‘লুটেরা’ বলে সম্বোধন করেন, তখন আমরা অত্যন্ত অপমান বোধ করি। এই মন্তব্য শুধু আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানের জন্যই মর্যাদাহানিকর নয়, বরং সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা ঋণ পুনঃতফশিল করেছেন তাদের জন্যও অবমাননাকর।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১১ বছরে বেক্সিমকো বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ পরিশোধ করেছে। এ কারণেই বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট এখন নিয়মিত ও অশ্রেণিভুক্ত অবস্থায় আছে। সুতরাং, টিআইবি’র বিবৃতিতে বেক্সিমকোকে “শীর্ষ ঋণখেলাপি” হিসেবে আখ্যা দেওয়ায় আমরা ভীষণ বিস্মিত হয়েছি।

টিআইবি দাবি করে তারা দেশে স্বচ্ছতা আনয়ন ও আইনের শাসনের পক্ষে কাজ করে। কিন্তু মতামত-নির্ভর প্রতিবেদনের বরাতে যেই বিবৃতি টিআইবি দিয়েছে ও নির্বাহী পরিচালক আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে যেই অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন, তা শুধু হতাশাজনকই নয়, তা আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতিও অমর্যাদাজনক। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে পেশ করতে আমি এই চিঠিটি লিখেছি।

বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ও সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেক্সিমকো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চরম বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়। ওই সময় আমাদের গ্রুপে ঋণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করা হয়, যেটি আইনের আদালতে পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অরাজনীতিকরণ কায়েম করা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সফল ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয় এবং জীবন ও ব্যবসা রক্ষার বিনিময়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদার অর্থ পরিশোধে বাধ্য করা হয়।

বেক্সিমকো গ্রুপে আর্থিক প্রবাহ বন্ধ করা ছাড়াও, কোম্পানির ফার্মাসিউটিক্যাল শাখাকে কোনো কারণ প্রদর্শন ব্যতিত প্রায় দুই বছর ধরে এলসি পর্যন্ত খুলতে দেওয়া হয়নি। এ থেকেই বোঝা যায় কীভাবে রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবিশেষ আমাদের একেবারে সাধারণ ও নৈমিত্তিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত করেছিল।

বিএনপি ও তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে টানা ৭ বছর ধরে বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে এই ধারাবাহিক বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে কোম্পানির মধ্যে তারল্য সংকট দেখা দেয়। যার ফলে আমরা সময় মতো ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে সমর্থ ছিলাম না।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে টিআইবির বিবৃতিতে বেক্সিমকো গ্রুপের অনুকূলে একটি ঋণ পুনঃতফশিলিকরণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রথম যখন এই পুনঃতফশিলিকরণ অনুমোদন করা হয়, তার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আমাদের সম্ভাব্য অর্থ প্রবাহ কেমন হতে পারে তা যাচাই করতে আমরা একটি স্বাধীন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনকৃত অডিট প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিই। পুরো ঋণ পরিশোধ করতে আমাদের ১২ বছর সময় প্রয়োজন হবে মর্মে সুপারিশ করে ওই অডিট প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যংক আমাদের ঋণকে দুইভাগে ভাগ করে: মেয়াদী ঋণ ও কার্যকরী মূলধন ঋণ। কার্যকরী মূলধন ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের ৬ বছরের সময় দেওয়া হয়। তবে ওই সময়ই আমরা ব্যাংককে জানিয়েছিলাম যে, ছয় বছরের মধ্যে ওই ঋণ পরিশোধ করা আমাদের আর্থিক প্রবাহ অনুযায়ী সম্ভব না-ও হতে পারে। এখন আমরা অনুমান করছি যে, বিদ্যমান আর্থিক প্রবাহ অনুযায়ী নিয়মমাফিক কিস্তি পরিশোধে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ কারণেই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রথম পুনঃতফশিলিকরণের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে স্বাধীন অডিট প্রতিষ্ঠানের মূল সুপারিশ পালন করার জন্য অনুরোধ জানাই।

এ ব্যাপারে ব্যাংকের নির্বাহী বিভাগ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং, আমাদের আবেদন ব্যাংকের বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হয়। আমরা যদিও শুধুমাত্র আমাদের ঋণের জন্য পর্যালোচনার আবেদন করেছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড নিয়মিত অ্যাকাউন্টধারী অন্যান্য ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

আমরা মনে করি, আমরা যদি কোনো সমস্যায় পড়ি তাহলে বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করা একটি বৃহৎ কোম্পানি হিসেবে আমাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিশ্বজুড়েই এটি সাধারণ যে, যদি কোনো বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আর্থিক জটিলতার সম্মুখীন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে ও সহায়তা করে।

আমরা এ বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করছি যে, আমাদের কোম্পানি চলমান ও কার্যকরভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ দেশের বেসরকারী খাতে কর্পোরেট সংস্কৃতি চালু করা প্রথম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমরা অন্যতম। বিভিন্ন খাতে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত কর্মকান্ডের জন্য আমাদের গ্রুপ বহুল পরিচিত। আমরা এ বিষয়টিও উল্লেখ করতে পারি যে, আমাদের গ্রুপে প্রায় ৬০ হাজারের মতো দক্ষ কর্মী সরাসরি নিয়োজিত এবং প্রায় ২ লাখের মতো মানুষ পরোক্ষভাবে জড়িত।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close