ই-পেপার সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪
সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪

লিজার কবুতর
প্রকাশ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১৮১)
লিজার বাবা-মা প্রায় সময়ই বাইরে থাকে। লিজা একাই বাসায় থাকে। একই বাসায় লিজার খালাতো ভাইবোনেরাও থাকে। ওদের সাথেই লিজার বসবাস আর পড়াশোনা। লিজার মনে আশা যদি আমার কিছু বন্ধু থাকত! লিজা বড়ভাইকে বলে, ভাইয়া তুমিও তো ব্যবসার কাজে বাইরে থাকো। কিন্তু আমি যে বড় একা!

বড়ভাই বলে, আচ্ছা বল, তোর কী লাগবে?
না ভাইয়া, আমার তেমন কিছু লাগবে না। তবে আমার দুইজোড়া কবুতর পোষার খুবই শখ।
আচ্ছা ঠিক আছে, আজই বাজার থেকে তোর জন্য কবুতর এনে দেব।
লিজা খুশিতে আত্মহারা। আজ আমার খেলার সাথী পাব এবং সবসময় কবুতরের দেখাশোনা করব। লিজার বড়ভাই বাজার থেকে দুইজোড়া কবুতর ও কবুতরের খাঁচা নিয়ে আসে। এসে দেখে লিজা ঘুমিয়ে পড়েছে। লিজার বড়ভাই ছিল আরেক কৌতূহলী মানুষ। লিজাকে আর না ডেকে রাতেই কবুতরের খাঁচা ঠিকঠাক করে কবুতর খাঁচায় রাখে। পরেরদিন সকাল বেলা কবুতরের ডাকে লিজার ঘুম ভাঙে। লিজা ঘুম থেকে উঠে দেখে ওদের বাসায় কবুতর এবং কবুতরের নতুন খাঁচা। সত্যি তো বড়ভাই আমার জন্য কবুতর এনেছে। কিন্তু লিজার একটু মন খারাপ হয়ে গেল। কেন বড়ভাই আমাকে রাতেই কবুতরের কথা বলল না? বড়ভাই বলল, লিজা তুই কী ভাবছিস? তোকে রাতেই কবুতরের কথা জানানো হয়নি বলে তুই কি রাগ করেছিস! আসলে এমনটা করার কারণ হচ্ছে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই তোকে সারপ্রাইজ দেব বলে বলিনি। লিজা এবার খুব খুশি হলো। বলল, ভাইয়া সত্যি তুমি আজ আমাকে সবচেয়ে বড়ো সারপ্রাইজ দিলে। তোমার প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লিজা নিজেই প্রতিদিন কবুতরকে খাবার খেতে দেয়। এমন করতে করতে কবুতর লিজার প্রিয় বন্ধু হয়ে যায়। লিজা যখন স্কুল থেকে বাসায় আসে ঠিক সেই সময় কবুতর বাসায় চলে আসে। লিজা কবুতরকে নিজহাতে খাবার খেতে দেয়। লিজা কবুতরকে ডাকার সাথে সাথে ওর কাছে চলে আসে এবং লিজার হাতে এসে বসে। লিজা কবুতর নিয়ে প্রায় সময় খেলা করে। সেই দুইজোড়া কবুতর থেকে বর্তমানে অনেক কবুতর হয়েছে। লিজার বাসাটা যে কবুতরের কারখানা। গ্রামের মানুষ কবুতর দেখার জন্য লিজার বাসায় মাঝেমধ্যেই ভিড় জমায়। আর লিজার কবুতরের প্রতি ভালোবাসা দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।
কবুতর বাসায় রেখে লিজা কোথাও বেড়াতে যায় না। কারণ কখন কবুতরের কী হয় সেই চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। লিজা পড়াশোনায়ও অনেক ভালো। তার খালাতো বোন প্রায়ই বলে, লিজা চলো না আমরা একদিন কোথাও ঘুরে আসি। লিজা রাজি হয় না কারণ তার কবুতরের কী হবে? বলতে বলতে লিজা এবার রাজি হয়ে যায়, আচ্ছা ঠিক আছে আগামীকাল যাব। পরেরদিন লিজা কবুতরকে ভালো করে খাবার খেতে দেয় এবং অনেক আদর করে বলে, বন্ধুরা আমি দুই দিনের জন্য একটু ঘুরতে যাব, তোমরা মন খারাপ করো না প্লিজ। কবুতরগুলো চেঁচামেচি শুরু করে দিল। আর তোমরা চিন্তা করো না এই দুই দিন তোমাদের দেখাশোনা করবে আমার প্রিয় খালা ও খালু। এই বলে লিজা চলল ওর খালাতো বোনের সাথে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় দুই দিনের সফরে।
সফরে এসে লিজার তেমন ভালো লাগছে না কারণ ওর সবসময় কবুতরের চিন্তা। না জানি কবুতরের কী অবস্থা? ঠিকঠাকমতো খাবার দিল কি না, সব কবুতর বাসায় এলো কি না, কেউ অভিমান করে বাইরে থাকল কি না, নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর ফোন করে খোঁজ নেয় ওর কবুতরের কথা। লিজা দুই দিনের সফরে এসে প্রায় এক সপ্তাহ কাটিয়ে দেয়। লিজা যদিও সবার সাথে আনন্দ উল্লাসে দিন কাটাচ্ছে তবুও মনটা সবসময় ভারী করে থাকে। ঠিকমতো খেতেও চায় না।
পরেরদিন সকালবেলা লিজার খালু ফোন করে বলে, একটা কবুতর নাকি বাসায় ফেরেনি। লিজা খবর শুনে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। আমি যদি বাসায় থাকতাম তাহলে এমনটা হতো না। হয়তো আমার সাথে অভিমান করে কোথাও লুকিয়ে আছে, আর না হয় খালু ঠিকঠাকমতো খাবার দেয়নি বলে অন্য কারও বাসায় আছে। লিজা ওর খালাতো বোনকে বলে, আমি আর একমুহূর্ত এখানে থাকব না, কালকেই চলে যাব। যাই হোক পরেরদিন সকালবেলা লিজা বাসার দিকে রওনা দেয়। লিজা বাসায় গিয়ে প্রথমে কবুতরের কাছে যায়। বন্ধুকে পেয়ে সবাই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। লিজা কবুতরকে নিজহাতে খাবার খেতে দেয়। কিছুক্ষণ পরে তাকিয়ে দেখে, তার হারানো কবুতরও ফিরে এসেছে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close