ই-পেপার শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চিড়িয়াখানার প্রাণীকে বিরক্ত নয়
সহমর্মিতা ও মানবিকতা জাগ্রত হোক
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৯.১২.২০১৯ ১১:২৩ পিএম  (ভিজিট : ৩৫৩)
সমাজ বিবর্তনের ধারায় মানুষ বশে এনেছে হিংস্র প্রাণীকে। একসময় যে বন্যপ্রাণীর ভয়ে মানুষের সময় কাটত আতঙ্কে, সময়ের পরিক্রমায় সেই প্রাণীকেই  মানুষ নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। যেসব প্রাণীর মাংস খাওয়া হয়, তাদের লালন-পালন করছে গৃহে। কিছু প্রাণীকে দিয়ে মানুষ কায়িক পরিশ্রমও করিয়ে নেয়। যাতে করে সহজ হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। এক্ষেত্রে মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন পশুপালন পর্ব। এরপর ধীরে ধীরে মানুষ আরও বেশি সভ্য হয়েছে, নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য ক্ষমতাবান মানুষেরা গৃহে ভয়ঙ্কর প্রাণীর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে। রাজরাজড়াদের আভিজাত্যের প্রতীক থেকে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্যও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে বন্যপ্রাণী। যা থেকে আধুনিক চিড়িয়াখানার ধারণা। পৃথিবীর প্রায় সব চিড়িয়াখানার লক্ষ্যই মানুষকে বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে অধিকতর আয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে বন্দি প্রাণীর প্রতি নির্দয়তার সুযোগ নেই। নেই তাদেরকে অনাদর ও উপেক্ষা করার সুযোগ।
বনের হাতি তার স্বাভাবিক জীবনে দিনে কমপক্ষে ৩০ মাইল হাঁটাহাঁটি করে। ভালুক খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় বিশাল এলাকা। বনের মধ্যে শিকার ধরতে দ্রæতগতিতে দৌড়ায় বাঘ ও সিংহ। অন্যান্য প্রতিটি প্রাণীরই রয়েছে একটি স্বাভাবিক জীবন। বন্যপ্রাণীর সেই স্বাধীনতা থাকে না বন্দি অবস্থায়। মানুষের বিনোদনের জন্য বন্যপ্রাণীদের ধরে বন্দি করে রাখা হয় কখনও বড় খাঁচায়, কখনও লোহার বেষ্টনীতে। যা তাদের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট করে দেয়, শেষ করে দেয় জীবনীশক্তিও। বন্দিজীবনে পাল্টে যায় প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনের সব রুটিন। এমনকি থাকে না তাদের স্বাভাবিক প্রজনন জীবনও। অথচ চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম পরিবেশের এই প্রাণীদের ওপরই নিষ্ঠুর আচরণ করে অনেক দর্শনার্থী। বন্দি প্রাণীদের তারা নানাভাবে বিরক্ত করে। বাইরে থেকে খাঁচার ভেতরে ঢিল ছুড়ে, কখনও খোঁচা দিয়ে, পানি ছিটিয়ে, আবার খাবার দিয়েও তাদের বিরক্ত করা হয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। সময়ের আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, কোনো দর্শনার্থী চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণীকে বিরক্ত বা উত্তেজিত করতে পারবে না, এমনই বিধানসহ আরও কিছু নির্দেশনা রেখে বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা আইন তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা আইন-২০১২ আর ২০১৬ আইনের ওপর ভিত্তি করে ২০১৯-এর আইনের খসড়ায় নির্দেশনা অংশে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী চিড়িয়াখানার প্রাণী পালন, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্র্রণ থেকে শুরু করে প্রাণীর কল্যাণ, সংরক্ষণ কার্যক্রম, দর্শনার্থীদের জন্য বিনোদন, সেবা ও চিড়িয়াখানার পরিবেশকে প্রাণীর প্রকৃতির আদলে সংরক্ষণ করার সাধারণ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ হবে। খসড়া আইনে আরও থাকছে, প্রাণীর খাঁচা, আবাসন ও প্রদর্শন সম্পর্কে দায়িত্ব পালন করবেন কিউরেটর বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী। তারা চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত প্রাণীর আরামদায়ক জীবনের জন্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রাণীর প্রকৃতি বিবেচনা করে খাঁচায় বন্ধ রাখবেন কিংবা মুক্ত রাখবেন। প্রাণীর প্রকৃতিগত আচরণ ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তা বিবেচনা করে প্রাণীর খাঁচার ডিজাইন তৈরি করবেন।
ইতঃপূর্বে সরকারের উদ্যোগে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে ১৯২০ সালের আইনটি বাতিল করে পাস হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত প্রাণী কল্যাণ বিল-২০১৯। পাস হওয়া বিল অনুযায়ী, প্রাণীকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করানো, মারধর করা, প্রয়োজনীয় খাবার না দেওয়া, বসবাসের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে না দেওয়া, বিরক্ত করা, ক্ষতিকর ওষুধ দেওয়া, আহত প্রাণীর চিকিৎসা না করা, অনুমোদন ছাড়া বিনোদনের স্বার্থে ব্যবহার করাও প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ হিসেবে গণ্য। বিলে উল্লিখিত বিধান লঙ্ঘন অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে বিচার ও সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। প্রাণী কল্যাণ বিলে যেকোনো প্রাণীর প্রতি মানবিক আচরণ করা ও নিষ্ঠুর আচরণ থেকে বিরত থাকতে সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়। এ বিলের কারণে আইনের আওতায় প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের পরিবর্তে সদয় হবে মানুষ। একইভাবে চিড়িয়াখানার প্রাণীকে বিরক্ত করা রোধে যে আইন পাসের প্রক্রিয়া চলছে, তাও প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে।
প্রতিটি মানুষেরই প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়া জরুরি। আমরা অনেক সময়ে বুঝে অথবা না বুঝেই প্রাণীর প্রতি নির্দয় আচরণ করি, যা কোনোভাবেই সঙ্গত নয়। এ অবস্থায় সরকার ইতঃপূর্বে যে প্রাণী কল্যাণ বিল-২০১৯ পাস করেছে, তা যেমন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য তেমনিভাবে চিড়িয়াখানার বন্দি প্রাণীর প্রতি আচরণ বিষয়ে যে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে তাও প্রশংসনীয়। আমরা মনে করি, পোষা, মুক্ত অথবা বন্দি সব প্রাণীর প্রতিই নিষ্ঠুরতা পরিহার করতে হবে। সব জীবের প্রতিই সহমর্মিতা, মানবিকতা ও ন্যায়বোধ জাগ্রত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close