প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:৫১ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 132
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার জিল বাংলা চিনিকল কিছুদিন আগেই আখের অভাবে বন্ধ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৪১ দিন আখ মাড়াই শেষে বন্ধ হয়ে যায় চিনিকলটি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও লোকসানের মুখ দেখবে এ চিনিকল। আখের অভাবে মিলটি বন্ধ হলেও উপজেলার একাধিক জমিতে এখনও আখ দৃশ্যমান রয়েছে। অথচ আখের অভাবে চিনিকলের মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ সব চাষি চিনিকলে আখ সরবরাহ করেননি এবং আখচাষিরা আখ চিনিকলের বদলে স্থানীয়ভাবে গুড় তৈরির কাজে সরবরাহ করছেন বলে দাবি মিল কর্তৃপক্ষের।
চাষিরা বলছেন, চিনিকলের চেয়ে গুড় তৈরির কারখানায় আখ বিক্রি করলে তাদের লাভ হয় বেশি। এ ছাড়া অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে তারা চিনিকলে আখ বিক্রিতে আগ্রহী নন। তবে চিনিকল বন্ধ হওয়ার পর ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মাইছানীরচর, চরকালিকাপুর, তারাটিয়া, কলকিহারা, বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর, ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ও গঙ্গাপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে এখনও আখ রয়েছে। ক্ষেত থেকে আখ কাটছেন কৃষকরা। এসব আখ ভটভটিতে ওঠানো হচ্ছে। পরে এগুলো দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গুড় তৈরির কারখানায় নেওয়া হচ্ছে। আখের অভাবে মিল বন্ধ হলেও মিলের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় এখনও শত শত একর জমিতে আখ রয়েছে। কিন্তু চাষিরা সেসব আখ চিনিকলে না দিয়ে গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।
জিল বাংলা সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর এই মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু হয়। ৬৮ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে এবার ৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এই মৌসুমে ৬০ দিন আখ মাড়াইয়ের কথা ছিল। কিন্তু ৪১ দিন আখ মাড়াইয়ের পর ১২ জানুয়ারি তা বন্ধ হয়ে যায়। ৪১ দিনে ৩৫ হাজার ১৭১ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৩২২ মেট্রিকটন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে মাত্র অর্ধেক। আখ সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করতে হয়েছে চিনিকলটি।
ফরিদ, আসলাম, সবুজসহ দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকজন আখচাষির অভিযোগ, ৪০ মণ আখ গুড়ের জন্য বিক্রি করলে তারা ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা পান। আর সুগার মিলে ৪০ মণ আখ বিক্রি করলে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে আবার গাড়ি ভাড়া খরচ হয়। তাদের প্রশ্ন, ‘লোকসান দিয়ে কেন সুগার মিলে বিক্রি করব?’
মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো.আনোয়ার হোসেন জানান, যে পরিমাণ আখ এখনও মাঠে রয়েছে, তা মিলে সরবরাহ করা হলে মিলটিতে আরও ১০ দিন বেশি আখ মাড়াই করা যেত। কিন্তু কৃষকরা উৎপাদিত আখ মিলে সরবরাহ না করে স্থানীয় গুড় তৈরির কারখানায় বিক্রি করছেন।
আখ চাষিরা অভিযোগ করে আরও বলেন, আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল। দেড় বছরে ফসল ঘরে আসে। এই সময়ে অন্যান্য ফসল আসে তিনটির মতো। গুড় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে যে দাম পাওয়া যায় তা সুগার মিলের দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ ছাড়া আখের দাম পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষের ধীরগতি এবং কঠিন প্রক্রিয়ায় টাকা দেওয়ার বিষয়ে তারা বিরক্ত।
এ ব্যাপারে জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বি হাসান বলেন, চিনিকল এলাকায় আখ মাড়াই অবৈধ। কিন্তু চাষিরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাড়াই মৌসুমে মিলে সব আখ সরবরাহ করেননি। আমরা দামের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, এ নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।