ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

রুপালি রঙমাখা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:৩৯ পিএম  (ভিজিট : ১৭৫১)
ভাদ্রের ঘুঘু-ডাকা তপ্ত দুপুরে আমি গেলাম ওর বাসায়। এই সময়টায় কারও বাসায় যাওয়া বেমানান হলেও, অনেকটা বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল। তীব্র রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ওর বাসার গেটে গিয়ে ওকে ডাকলাম। বেশ কয়েকটি ডাক দেওয়ার পরেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম। পাশের বাড়িতে কয়েকশ লোকের সমাগম। একটা অনুষ্ঠানে এসেছে সবাই। অনেকেই দেখছে আমি গেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। বিষয়টা আমার কাছে অস্বস্তিকর মনে হলো। কারণ পানসির মাচায় বসে স্রোতের অনুকূলে চলা কোনো যাত্রী নই আমরা, বিরুদ্ধ স্রোতে গন্তব্যহীন চলা দুই যাত্রী। মাত্র এক মিনিটের অপেক্ষায় মনের ভেতর নানান ভাবনা ঘুরপাক খেয়ে গেল। একবার ভাবলাম ফিরে যাই। আবার ভাবলাম আরেকবার ডাকি। তাতেও কাজ হলো না। এমন তো হওয়ার কথা নয়। আগে থেকেই কথা ছিল আমি এই সময়ে আসব। পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে ওর নম্বরে কল দিলাম। সংযোগ দেওয়া সম্ভব হলো না। মনটা এবার ফিরে আসার জন্য তাগাদা দিল। তবু আরেকবার কল দিলাম। এবার রিং হলো, রিসিভ হলো না। হরিণাক্ষীর মতো ডাগর ডাগর দুটি চোখ মেলে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো এক অপরূপা রমণী। আমি পোড় খাওয়া জীবনের ধূসর দেয়াল ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকে দেখলাম। বেলকুনির গ্রিল ভেদ করে সূর্যের আলো এসে পড়েছে ওর শরীরে। মনে হলো পুরো শরীর রুপালি রঙে মাখা। আমার দুচোখ আনন্দে ছলছল করে উঠল। ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে ভেতরে ডাকল।

চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মতো হালকা আলোয় পরিপাটি করে সাজানো ঘরের ভেতর এখন শুধু আমরা দুজন। খানিকটা সময় কারও মুখে কোনো কথা ছিল না। হয়তো অধিক আনন্দে দুজন বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। খানিক পরেই দুজনের কথার যেন খই ফুটল। আমার খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল। মাত্রই পাশের বাড়িতে দাওয়াত সেরে ওর বাসায় ঢুকেছি। তবু কি ছাড়ে! আইসক্রিম আর রসমঞ্জুরী খেতেই হলো। ইচ্ছে করল নিজ হাতে ওকে একটু খাইয়ে দিই। ওর দিকে হাত বাড়াতেই পরম আনন্দে তা মেনে নিল। মুখে তুলে দিতেই ওর হাতের স্পর্শে আমি এক পরম তৃপ্তির ছোঁয়া অনুভব করলাম। প্রশান্তিতে ভরে গেল হৃদয়। আমি খেয়াল করলাম, ও নিজেও ভেতরে ভেতরে এক পরম তৃপ্তিতে পুলকিত হলো। কতদিন পর ওর সঙ্গে আমার দেখা মনে করতে পারছি না। তবে এমন একাকীভাবে পাওয়া এই প্রথম। এমন ফাঁকা বাড়িতে একজন মহিলার সঙ্গে বসে সময় কাটানো, আমার কাছে বেশ আপত্তিকরই মনে হচ্ছিল। ওর সরল ভালোবাসা আর আন্তরিকতায় মুহূর্তেই তা ভুলে যাই। আমি খেয়াল করছিলাম, বিভিন্ন কাজের ছলে ও সুযোগ পেলেই আমার শরীর ছুঁয়ে দেয়। আমি আনন্দে সাঁতার কাটি তখন।

ওর রান্নাঘরের জানালার গ্রিল ঘেঁষে তরতাজা বুনোগাছ লকলকিয়ে উঠেছে। পাশের বাড়ি থেকে জানালা ভেদ করে কিছু দেখার উপায় নেই। দু হাত প্রসারিত করে ওকে বুকে ডাকলাম। একটু শান্তির আশায় পরপুরুষের বুকে যাওয়া অপরাধ জেনেও লজ্জাবতীর মতো আমার বুকে এলো। ওর সুডৌল উন্নত বুক আমার বুকে লাগতেই উষ্ণতায় কেঁপে উঠল দুটি শরীর। আমার লোমকূপগুলো কি এক আনন্দে জেগে উঠল! ওর নিঃশ্বাসের ঘ্রাণে আমি মাতোয়ারা হয়ে ওর কোমরের পেছনে চেপে ধরলাম। একটা সুখানুভূতি ওর মাঝেও স্পষ্ট হয়ে উঠল। শক্ত করে চেপে ধরল আমায়। আমিও পরম ভালোবাসায় বুকের সঙ্গে নিবিড় করে রাখলাম। চুমুতে ভরিয়ে দিলাম ওর মুখম-ল। তৃপ্তির পরশে ও চোখ খুলতে পারেনি। ইচ্ছে করল চিবুকে চিবুক ঘষে নিবিড় আলিঙ্গনে কাটিয়ে দিই প্রহরের পর প্রহর। ঠিক সেই সময় চৌকাঠের ওপাশে খিলখিল করে হেসে ওঠে নিন্দুকের দল। নিজেদের সংযত করে নিলাম।

বিদ্যুৎ চলে গেল, চার্জার ফ্যানটা নিয়ে এসে খাটের ওপর রেখে, ও বসল ঠিক আমার সামনে। আমি দুচোখ ভরে ওর পবিত্র মুখখানা দেখলাম। ওর হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা আমাকে পলক ফেলতে দিচ্ছে না। শ্রাবণ মাস হলেও, বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। কেমন ভ্যাপসা গরম। এই সময়টায় চোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করে। আজ অবশ্য ঘুম পালিয়েছে। ইচ্ছে করছে কোনো নির্জন প্রান্তরে হিজল গাছের নিচে সবুজ ঘাসের বিছানায় বসে ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে জীবনের না-বলা কথাগুলো বলি। ইচ্ছে করছে আমার কোলে ওর মাথা রেখে মোহন বাঁশিতে সুর তুলি:-
তুই যদি আমার হইতি রে
আমি হইতাম তোর
কোলেতে বসাইয়া তোরে
করিতাম আদর

একটা ঘোরের মধ্যে কতটা সময় পেরিয়ে গেছে বুঝতে পারিনি কেউই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। খানিকটা ধমকের সুরেই ও বলল, দেরি আছে, এখনই যাওয়া কেন? ওর অধিকারমাখা এমন কথায় আমিও সুবোধ বালক হয়ে যাই। চলতে থাকে দুজনের কথা আর কথা।

তিন তিনটি ঘণ্টার স্মৃতি বুকে নিয়ে বিকালের সোনালি রোদ গায়ে মেখে বাড়ির পথ ধরি। মনে পড়ে বিদায়ের সময় ওর বুকে টেনে নিয়ে আমাকে চুমু দেওয়ার কথা। আহ! পরম তৃপ্তিতে ভরে গিয়েছিল আমার হৃদয়। মুখরিত নগরীতে লাল, নীল, বেগুনি নানান রঙের পোশাক পরা হাজারো রমণীর ঢল। কোনো দিকে আমার মনোযোগ নেই। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি ছবি, রুপালি রঙমাখা মুখ।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close