
রিহান স্কুল শেষ করে যাচ্ছে বাসার দিকে। আজ পড়ার একটু চাপ ছিল। তাই টিফিন পিরিয়ডে কিছুই খায়নি ও। টাকাও ছিল হাতে। কিন্তু যায়নি ও কেন্টিনে। ওই সময়টা একটু পড়ে নিয়েছিল রিহান। এখন স্কুল ছুটি। দোকান থেকে ১০ টাকা দিয়ে একটা পটেটো চিপস কিনেছে ও। রিহান চিপস খাচ্ছে আর বাসার দিকে যাচ্ছে। রিহান খাচ্ছে আর খাচ্ছে। একসময় শেষ হয়ে যায় তার পটেটো চিপস। এবার আনমনে চিপসের প্যাকেটটা রাস্তার পাশে ফেলে দিল রিহান। ও যেই হাঁটা দেবে, এমন সময় পেছন দিক থেকে কে যেন ডেকে উঠল, এই ছেলে, এই।
আঁতকে উঠল রিহান। আচমকা এমন ডাক। রিহান তাকাল পেছনে, কেউ নেই তার আশপাশে। তবে ডাক আসল কোত্থেকে! ধ্যাত, বলে রিহান আবার হাঁটা দিল।
এই ছেলে, এই। আবারও পেছন ডাক।
রিহান এবার ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরল। ভয়ার্ত স্বরে বলল, কে, কে?
এই যে আমি। তোমার সামনে ময়লা ফেলার যে ডাস্টবিন দেখছ, সেই আমি।
রিহান অবাক বনে গেল। ডাস্টবিন কথা বলছে। যাক, ভয় এবার কমেছে কিছুটা।
রিহান এবার সাহস নিয়ে বলল, আমাকে ডাকছ কেন?
সাধে কি আর ডেকেছি! বলল ডাস্টবিন। তুমি একটু আগে যে কাজটা করেছ, সেটা কি ভালো হয়েছে?
কোন কাজ? রিহান একটু বিরক্ত হলো।
কেন, ওই যে তুমি চিপস খেয়ে প্যাকেটটা রাস্তায় ফেলে দিলে। এটা খারাপ কাজ নয় কি? বলল ডাস্টবিন।
বারে, প্যাকেট তো ময়লা। ময়লা রাস্তায় ফেলব নাতো বাসায় নিয়ে যাব! খেঁকিয়ে উঠল রিহান।
ডাস্টবিন বলল, আমি বাসায় নিয়ে যেতে বলিনি।
তবে কী বলেছ? রাগে রিহানের চেহারা লালবর্ণ হয়ে উঠেছে এবার।
ডাস্টবিন বলল, আমি বলেছি, ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ফেলা ঠিক নয়।
রিহান এবার গম্ভীর স্বরে বলল, তবে ফেলব কোথায় বলো শুনি?
কেন, আমাতে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে আমি ডাস্টবিনে ফেললেই তো হয়। ব্যস, হিসাব চুকে যায়। তা ছাড়া তুমি কি দেখতে পাও না আমার শরীরে কী লেখা আছে?
রিহান এবার ভালো করে পরখ করে নিল ডাস্টবিনকে। ডাস্টবিনের শরীরে লেখা ‘আমাকে ব্যবহার করুন’।
এর মানে কী? রিহান একটু শান্ত হয়ে জানতে চাইল।
ডাস্টবিন বলল, এর মানে হলো, যতরকম ময়লা-আবর্জনা আছে তা যত্রতত্র না ফেলে ‘আমি’ ডাস্টবিনে ফেল। তাতে তোমাদেরই লাভ।
কীরকম লাভ? রিহান উৎকর্ণ হয়ে উঠল এবার। রাগ-ক্ষোভ সব উবে গেল। নরম হলো যেন একটু।
ডাস্টবিন বলল, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেললে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে। সে ময়লাগুলোর ওপর বৃষ্টির পানি পড়ে সেখান থেকে এডিস, ডেঙ্গু মশাসহ বিষাক্ত কীটপতঙ্গ জন্মাবে। যা দেখতে যেমন অপরিচ্ছন্ন তেমনি তোমাদের জন্য অস্বাস্থ্যকর। এমনকি সেই ডেঙ্গু মশা, বিষাক্ত কীটপতঙ্গ তোমাদেরই কামড়াবে। সেখান থেকে জ্বর, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি ছড়িয়ে যাবে। পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন দেখাবে।
রিহান ডাস্টবিনের এমন উপকারী কথা শুনে অনুতপ্ত হলো। বুঝে এলো তার ভেতর। ডাস্টবিনকে বলল, আমাকে ক্ষমা করে নিও তুমি। আমি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার জন্য দুঃখিত। তুমি সত্যিই বলেছ। আমরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেললে আমাদেরই ক্ষতি। ধন্যবাদ তোমাকে। আমাকে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার মতন খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য।
কিন্তু তোমার ভেতর ময়লা ফেললে কি তোমার সমস্যা হয় না? চোখে কৌতূহল রেখে জানতে চাইল রিহান।
না, ময়লা-আবর্জনার কারণে আমার কোনো সমস্যা হয় না। জানাল ডাস্টবিন। কারণ আমাকে বানানোই হয়েছে এই ময়লা-আবর্জনা বহন করার জন্য। তা ছাড়া আমার ভেতর যে ময়লা-আবর্জনা জমা হয় সেগুলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসে নিয়ে যায়। তাতে আমিও ভালো থাকি তোমরাও ভালো থাকবে। যদি ময়লাগুলো আমার ভেতর ফেল, যত্রতত্র না ফেলে।
তবে জানো কি, আমার একটা দুঃখ আছে।
ডাস্টবিন তার মনটা খারাপ করে নিল। ডাস্টবিনের মন খারাপ দেখে রিহানের চেহারাটা মলিন হয়ে উঠল। যে মানুষের ভালো থাকার জন্য এমন মহৎ কর্ম করছে তার কি না দুঃখ!
কী তোমার দুঃখ? জানতে চাইল রিহান।
ডাস্টবিন বলল, তোমরা ছোট, তাই না জেনে, না বুঝে এখানে-সেখানে ময়লা ফেল। কিন্তু অনেক বড় ও শিক্ষিতরাও ‘আমি’ ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে না। এদিক-সেদিক ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি বলো?
কী বললে ডাস্টবিনের দুঃখ ঘুচবে বা কী বলা উচিত কিছুই ভাবতে পারছে না রিহান। কারণ সেও তো তাদের মতোই। ও কিছুক্ষণ মাথা চুলকিয়ে বলল, কী করলে তুমি খুশি হবে?
ডাস্টবিন বলল, তোমরা সবাই যদি এদিক-সেদিক ময়লা-আবর্জনা না ফেল। সেগুলো একত্র করে যথাস্থানে ফেল। ফেল আমি ডাস্টবিনে। তবেই আমি খুশি হব।
ডাস্টবিনের কথা শুনে রিহান এক দৌড়ে তার খাওয়া চিপসের ওই প্যাকেটটা এনে ফেলল ডাস্টবিনে। সঙ্গে রাস্তায় পড়ে থাকা আরও দু-তিনটে কাগজ-পলিথিন কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলল। রিহানের এমন তৎপরতা দেখে ডাস্টবিন হেসে উঠল।
রিহান বলল, আমি আর কোনোদিন যেথায়-সেথায় ময়লা-আবর্জনা ফেলব না। কেউ ফেললে তাকে নিষেধ করব। কথা দিলাম তোমাকে। এবার খুশি তো তুমি?
ডাস্টবিন হেসে উঠল। ধন্যবাদ দিল রিহানকে।
রিহান বলল, তোমাকেও ধন্যবাদ বন্ধু। আমাকে এমন একটা খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য।
সময়ের আলো/আরএস/