দ্রুত বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিশেষ আইন বাতিলসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত সংস্কারে ১৭টি প্রস্তাব দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার (১৮ আগস্ট) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার সিপিডি'র প্রস্তাবনা' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ সব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করতে হবে। তৃতীয় পদক্ষেপ হতে হবে, যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে। এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার কথাও জানান তিনি। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে নানা অনিয়ম হলেও বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। অন্তর্বতী সরকারকে এগুলো বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি জানান, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনার কারণে বিপিডিবিকে বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং বেসরকারি কোম্পানির কাছে বকেয়া বিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সে সঙ্গে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে প্রতিবছর ৩৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা টানতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ২৭ হাজার মেগাওয়াট, রিজার্ভ মার্জিনসহ ৩৫ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ৫৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা, যা অযৌক্তিক। এই অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি খাত এলএনজি, কয়লা আমদানির মতো অবকাঠামো তৈরির চাপ দিতে পারে। তাই এটার সংশোধন দরকার বলে আমরা মনে করছি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্তরণে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সক্ষমতা বাড়াতে হবে দাবি করে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অথবা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত।
সিপিডি বলছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড (আরপিজিসিএল) সহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করা জরুরি। তবে এর দায়িত্ব দেশের কোন অডিট ফার্মকে না দিয়ে আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মকে দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি হলে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বলে মনে করে সংস্থাটি।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে অনুযায়ী, চুক্তি সংশোধন করলে, ভর্তুকির চাপ কমবে। গ্রাহককে বাড়তি দাম দিতে হবে না বলেও আমরা মনে করছি।
সংবাদ সম্মেলনে কুইক ইনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেক্ট্রিসিটি এন্ড পাওয়ার সাপ্লাই অ্যাক্ট, ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি এন্ড পাওয়ার মাস্টার প্লান (আইইএমপি), ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি ও রিনিওয়েবল এনার্জি পলিসি সংস্কারের জোর দাবি জানায় সিপিডি।
সময়ের আলো/জিকে