ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪

এক-চতুর্থাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:৩০ এএম  (ভিজিট : ৯৪২)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটকেন্দ্রের এক-চতুর্থাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া শুধু ঢাকার মোট কেন্দ্রের অর্ধেক কেন্দ্রই অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একদিকে বিএনপির ভোট বর্জন ও প্রতিহতের ঘোষণা অন্যদিকে প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভোট বর্জনের বিরোধিতা যদি সহিংস পন্থায় করা হয় বা ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয় কঠোরভাবে মোকাবিলা হবে বলে জানিয়ে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থা ইসি।

সোমবার (১ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোট বর্জনকারী দলগুলোকে উদ্দেশ করে বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে, নির্বাচনের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন। তাতে অসুবিধা নেই, তারা জনমত সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু সহিংস পন্থায় যদি এর বিরোধিতা করা হয় বা ভোটারদের ভোট দিতে যদি বাধা দেওয়া হয়, তা হলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে। সেই সংকট মোকাবিলা আমাদের করতে হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০টি নির্বাচনি আসনের বিপরীতে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি, যা মোট ভোটকেন্দ্রের ২৫ শতাংশ।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১০ হাজার ৩০০টি। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৪০ হাজার ২৭৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ২৫ হাজার ৮২৭টি কেন্দ্র। বাকি ১৪ হাজার ৩৭২টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। সে হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি কমেছে।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ইসি জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০টি নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫-১৭ নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অবস্থিত ভোটকেন্দ্র এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরে অবস্থিত কেন্দ্রগুলোর জন্য পৃথক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দুজন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন নিরস্ত্র আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দুজন গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ ১৫-১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে (যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত) অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশসহ ১৬-১৭ জনের একটি দল থাকবে। মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরের সব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ১৫ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল। এর মধ্যে অস্ত্রধারী তিনজন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী আরেকজন আনসার এবং ১০ জন নিরস্ত্র আনসার সদস্যের দল প্রতি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র হলে ১৬ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল পাহারা দেবে এবং অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা তিনজনের পরিবর্তে চারজন হবে। বিশেষ এলাকাগুলো যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দুর্গম এলাকায় মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অন্যান্য গ্রামীণ এলাকার মতোই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা হবে।

এদিকে ভোটের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভোটগ্রহণের আগে ও পরে পাঁচ দিন (যাতায়াতের সময়সহ) মোতায়েন থাকবেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়া নির্বাচনি এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। তারা ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিন (তাদের যাতায়াতের সময়সহ) নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে নির্বাচনি এলাকায় বিপুলসংখ্যক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করেছে ইসি।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী মাঠে থাকবে পুলিশ। পরিপত্রে সুস্পষ্টভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক কেন্দ্রের বিষয়ে কেমন ফোর্স থাকবে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে বই উৎসব অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে ২১৪৬টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ। কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৭৮টি। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান আরও বলেন, কিছু কিছু গোষ্ঠী রয়েছে তারা নির্বাচনবিরোধী কার্যক্রম ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে এবং নাশকতাও সৃষ্টি করছে। তদের রুখে দেওয়ার জন্য পুলিশ রয়েছে। ঢাকা শহরে একই স্থানে একটি কেন্দ্র আবার একাধিক কেন্দ্র রয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এসব ভোটকেন্দ্রে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বাইরে টহল দল হিসেবে বিজিবি-আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হতে খুব বেশি সমস্যা হবে না বলে মনে করছি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ সময়ের আলোকে বলেন, নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহতের একটা ডাক আছে। নির্বাচন বর্জনের ডাকটা হচ্ছে অহিংস কিন্তু প্রতিহতের ডাক সহিংস। এ ছাড়া স্থানীয় এলাকার প্রতিপক্ষের মধ্যেও একটা উত্তেজনা আছে। সেখান থেকেও সংঘাতের উৎপত্তি হতে পারে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা তুঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ফলে একে অন্যের ওপর হামলা হতে পারে। এটি বাংলাদেশের চলমান একটি প্রক্রিয়া। অতীতেও আমরা এটা দেখেছি। এখানে সব ঝুঁকি একসঙ্গে মিলিয়ে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি শ্রেণিবিন্যাস অনুয়ায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধানে তারা আরও সক্ষম হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণের ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে রিমোট এলাকা, যেখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা খারাপ, যেখানে প্রার্থীর বাড়িঘর আছে এমন কেন্দ্রগুলোকেই মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে দেখায়। আসলে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ আবার কোনো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এখানে সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে তিনজন পুলিশের কম-বেশি ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রকে ঝুঁক্তিমুক্ত করা, আমি এটা বিশ^াস করি না। কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ করে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। সুতরাং তাদের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকি কমানোটাই সবচেয়ে উত্তম।

এবার সংসদ নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি দলের মোট ১ হাজার ৮৯৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন ও ভোট প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। এ নির্বাচনে মোট ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। আগামী ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close