ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪

৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর
যশোরে পানিশূন্য টিউবওয়েল
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:১১ এএম  (ভিজিট : ১৬০)
যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি ইউনিয়নের চান্দুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাবুর আলী। গত ১৩ দিন ধরে তার বাড়ির টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না। একই গ্রামের আবুল কালাম জানান, টিউবওয়েল চেপে এক বালতি পানি তুলতে গিয়ে যেন জীবন যায় যায় অবস্থা! বাড়ির পাশের মাঠের শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে পানির প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে হচ্ছে। 

টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না ওঠার কারণে মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া শ্যালো মেশিনেও সামান্য পরিমাণে পানি উঠছে। ছয় লিটার তেল ব্যয় করেও সাড়ে ৩ বিঘা ধানের আবাদি জমি ভেজানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাষিরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ইছালী এলাকার একাংশে পানির জন্য বন্ধ রয়েছে চাষাবাদ।

বিএডিসির সেচ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ ফুট নিচে চলে যাওয়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল রশিদ বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। ফলে এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিপাত হলেই ঠিক হয়ে যাবে। পরিমাপ করে দেখা গেছে, যশোর সদর উপজেলা, চৌগাছা উপজেলা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ২৯ থেকে ৩১ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সাধারণত পানি ২৬ ফুটের মধ্যে থাকলে টিউবওয়েলে স্বাভাবিকভাবে পানি ওঠে। এ ছাড়া মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। 

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল রশিদ আরও বলেন, ডিপটিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি উঠলেও শ্যালো টিউবওয়েলে তেমন একটা পানি উঠছে না। এতে কৃষকের সেচ খরচ বেড়েছে। যশোর জেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে ১ হাজার ৮৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে পানি দেওয়া হয়। আর শ্যালো টিউবওয়েল রয়েছে ৬৩ হাজার ৭৯৩টি যা দিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ কাজ করা হয়।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে চলে যাওয়ার কারণে অগভীর নলকূপগুলো এখন অচলপ্রায়। বর্তমানে সাবমারসিবল ও তারা টিউবওয়েলে কিছুটা স্বাভাবিকভাবে পানি উঠছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্লা বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়া ও অপরিকল্পিত সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। আর যদি ৩০ ফুটের নিচে চলে যায় তা হলে বাড়িতে মর্টার দিয়েও পানি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এভাবে ভূগর্ভের পানির স্তর খালি হয়ে পড়লে তা পূরণে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, যশোর জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। প্রচ- খরতাপে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিনে ঠিকমতো পানি উঠছে না। কম পানি ওঠার কারণে বেশি তেল ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে সেচকাজে চাষিদের ব্যয় বেড়েছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোর শহরের শংকরপুর, বেজপাড়া, সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি, ছাতিয়ানতলা, খিতিবদিয়া, বাদিয়াটোলা, ঝাউদিয়া, বাগডাঙ্গা, দৌগাছিয়া, সাজিয়ালী, কমলাপুর, গোবিলা, জগহাটি, আবদুলপুর, পোলতাডাঙ্গা, চান্দুটিয়া, আরিচপুর, দৌলতদিহি, কাশিমপুর, যোগীপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না ওঠার কারণে মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। কোনো কোনো গ্রামে গভীর নলকূপ থাকলেও পানি নেওয়ার জন্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকছে।

কাশিমপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না বললেই চলে। খাবার পানির জন্য মাঠের ডিপ টিউবওয়েলের পানি ভরে আনতে হচ্ছে। পানির জন্য কষ্ট ও দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

চূড়ামনকাঠি গ্রামের সালমা খাতুন বলেন, বাড়ির টিউবওয়েল দীর্ঘ সময় চেপে এক বালতি পানিও ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো সময় একেবারেই পানি থাকছে না। 

চান্দুটিয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, শ্যালো টিউবওয়েলে তেমন একটা পানি উঠছে না। ৬ লিটার তেল খরচ করেও সাড়ে ৩ বিঘা আবাদি জমিতে পুরোপুরি পানি দিতে পারিনি। এমন পরিস্থিতিতে আমার মতো আরও অনেক চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

সময়ের আলো/জেডআই




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close