ই-পেপার শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪

মরচে জমেছে রেলের চাকায়, সব প্রকল্পই গতিহীন
প্রকাশ: রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:০৮ এএম  (ভিজিট : ৩২২)
মরচে জমেছে রেলের চাকায়। সব প্রকল্পই হারিয়েছে গতি। ২০১৬ সালে নেওয়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৫৪ শতাংশ। ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর পাশাপাশি এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায়।

একইভাবে ২০১০ সালে নেওয়া খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের মেয়াদ চারবার বাড়িয়ে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ শেষ হওয়ার আগেই গত বছরের নভেম্বরে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হলেও রেললাইনটি এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ের চলমান ২৮টি প্রকল্পের কোনোটিই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ না হওয়ায় দফায় দফায় সময় বাড়াতে হয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পের কাজ ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে ঢিমেতালে চলছে। 

রেলওয়ের চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি প্রকল্প রয়েছে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প। বাকি ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুই-তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা এমন প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে অন্তত তিন থেকে চার বার। ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল এমন প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত করা হয়েছে। 

রেলের ২৮টি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির প্রকল্প হচ্ছে ঢাকা-টঙ্গী ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন। ২০১২ সালে এই প্রকল্প হাতে নিলেও এর কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশ। তিন বছরের এই প্রকল্পের সময় দাঁড়িয়েছে ১৪ বছরে। ব্যয় বেড়েছে প্রায় চার গুণ। এ ছাড়া আখাউড়া-আগরতলা ১০ কিলোমিটার এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ১৮ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এটি চলছে প্রায় ৮ বছর ধরে। কাজের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ। ২০১৪ সালে হাতে নেওয়া আখাউড়া-লাকসাম রেল প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১০ বছরেও প্রকল্প শেষ হয়নি। গত বছরের ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ১৫ কিলোমিটার আংশিক উদ্বোধন করেন। 

গণপরিবহন বিশেজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া ও ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ মাঠপর্যায়ে সঠিক সমীক্ষা না হওয়া। অভিযোগ রয়েছে, কোনো প্রকল্পে কম ব্যয় ধরা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন শুরু করতে দেরি করার পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানোর উপায় খুঁজতে থাকেন। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও পরামর্শকের শক্ত সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নিতে গেলে তাকে নানাভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় বলে একাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। 

তারা জানান, প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবসরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে মোটা অঙ্কের বেতনে পরামর্শক হিসেবে চাকরি নিয়ে থাকেন। এ কারণে রেলের কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ করা হয় না। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় ধরার কারণে রেলওয়ের প্রকল্প থেকে অর্থ কমানোর নজিরও রয়েছে। রেলওয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের। এমন অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান করে রেলওয়ের দুই প্রকল্প জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের নির্ধারণ করা ব্যয় ১৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা থেকে ৪০ শতাংশ ও আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা প্রকল্পের ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা থেকে ২০ শতাংশ কর্তন করা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের নিয়ম মানার জন্যই হয়তো আমাদের এখানে নামেমাত্র সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই বা সমীক্ষাকে গোটা পৃথিবী উন্নয়নের দলিল হিসেবে মনে করলেও বাংলাদেশে দেখা যায় এর পুরো উল্টোচিত্র। আমাদের এখানে এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছে যে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই মানেই একটা প্রকল্প নিয়ে আসা। কারণ যারা এমন সমীক্ষা করেন তারা জানেন, পরবর্তী সময়ে এটা কেউ খুঁজবে না। এসব কারণে প্রকল্পের মেয়াদের সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ে। 

অস্বাভাবিক ব্যয় কেন বাড়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিম উল্লাহ বাহার সময়ের আলোকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত আনুমানিক হিসাব ধরে প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরি করা হয়। পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করে ব্যয়ের বিষয়টি আপডেট করা হয়। তা ছাড়া জমির মূল্য বেড়ে যাওয়াসহ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার অনেক কারণ থাকে। 

সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করেই রেলওয়ের সব প্রকল্প নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে রেলের প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কারণ থাকে। 

সম্প্রতি রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এডিপিভুক্ত বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার ঘটনায় নতুন দায়িত্ব পাওয়া রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী বলেছেন, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সেই প্রকল্পের ধীরগতির খেসারত দিতে হবে। 

বিষয়টি মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, আগামীতে প্রকল্পগুলো যাতে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close