ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪

চা বাগানের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে আলোর ঝলক বিনোতা ভুমিজ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ২:২৬ এএম  (ভিজিট : ১৯০)
চা বাগানের রাজনীতির অঙ্গনে সুপরিচিত একটি নাম বিনোতা। সাহসী নেত্রী হিসেবে এই চা শ্রমিকের নাম এখন সারা দেশের চা বাগানে আলোচিত। পুরো নাম বিনোতা ভুমিজ। জন্ম ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ। নারী চা শ্রমিক হয়েও চা বাগানের রাজনীতির কঠিন কূটনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অদম্য সাহসের অধিকারিণী সে। বাংলাদেশে চা বাগানের ১৬৮ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছেন। নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে দ্বিতীয় দফায়ও চা শ্রমিকদের নেতৃত্বে এসেছেন তিনি। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রেহানা চা বাগানের চা শ্রমিকদের অত্যন্ত প্রিয় এই মানুষটি। তার রাজনৈতিক গুণাবলিতে মুগ্ধ চা শ্রমিকদের সংখ্যা কেবল রেহানা চা বাগানেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের চা বাগানের তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে নারীদের কাছে দারুণ সাহসিকতার এক নাম বিনোতা দিদি।

‘সাফল্য এমনি এমনিই আসে না। সাফল্যের পেছনে থাকে পরাজয়ের গল্প। পরাজয় সাহসীদের কখনোই দমাতে পারে না। পরাজয়ে খানিকটা হতাশা আসে বটে; কিন্তু আবারও নতুন প্রেরণায় সামনের দিকে আরও সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়’- সময়ের আলোর সঙ্গে এভাবেই নিজের কথাগুলো বলা শুরু করেন বিনোতা ভুমিজ।

তিনি বলেন, প্রথমবার পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হওয়ার পর বিরোধীরা বলতে শুরু করল, সে নারী চা শ্রমিক, সে সেকশনে পাতা তুলবে, সে আবার কিসের রাজনীতি করবে! সে তো ঠিকমতো কথাই বলতে পারবে না। নারী হয়ে কীভাবে সে ম্যানেজারের সঙ্গে চা শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে লড়াই করবে। কীভাবে যুক্তি দেখাবে, ইত্যাদি কত কথা।

এমনকি এক দিন সমাবেশ ডেকেও আমাকে তারা অপমান করতে চাইল। চা বাগানের মানুষদের সাক্ষী রেখে বিরোধীরা ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু সে ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে মুখের ওপর না করে দিয়েছিলাম। আমার সিদ্ধান্তে সাধারণ চা শ্রমিকরা খুশিই হয়েছিল। এই না করার সাহস আমাকে শ্রমিকদের মনে ঠাঁই দিয়েছে। কেউ কেউ এ জন্য আমাকে সতর্ক করে বলে, এমনটি আপনি কেন করলেন, ওরা আপনার মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তবে সেসবে আমার ভয় লাগে না। বলে দেই, আমার মরণ যেদিন লেখা আছে, সেদিনই হবে। এক দিন আগেও না, পরেও না। সুতরাং অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

বাবা নারায়ণ ভুমিজ তাকে সবসময় বলতেন, বিনোতা, তোর বেশি সাহস। স্বামী বুধুয়া বলতেন, তুমি বেশি স্ট্রং, বলছিলেন বিনোতা। বাবা ও স্বামীর উৎসাহ, আগ্রহ আর সমর্থনেই আমার শিক্ষা ও কাজকর্ম চলতে থাকে। ছোট থেকেই আমি কাজে যেতাম মায়ের সঙ্গে। সেই সময় দৈনিক মজুরি ছিল ১২ আনা। ছোট থেকেই দেখে আসছি বাগানে নারী শ্রমিকদের কতশত কষ্ট। আর তাই তো নেতৃত্বে আসা।

বিনোতার বিশ্বাস, যোগ্য নারীদের দ্বিগুণ প্রমোশন দিয়ে হলেও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আনা দরকার। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি কেননা চা বাগানের প্রধান শ্রমিকই হলো নারী। আমাদের নারীরা এখন শ্রমিক পর্যায়ে সংখ্যায় অনেক, কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নগণ্য। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী সভাপতি ছিলেন ৩০ বছর। তিনি যা করতে পারেননি আমি তা করেছি।

রেহানা চা বাগানের সাধারণ চা শ্রমিক পার্বতী জানান, চা শ্রমিক হিসেবে নারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই নারীদের সমস্যা একজন পুরুষের চেয়ে একজন নারীর মাধ্যমে সমাধান করা সহজ। তিনি বলেন, এই চা বাগানে এসে প্রথম কোনো মহিলা সভাপতি দেখলাম। তার কথাবার্তা শুনলেই মন ভরে যায়। বিনোতা দিদিকে খুবই ভালো লাগে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পংকজ কন্দ সময়ের আলোকে বলেন, চা বাগানের ভেতরের রাজনীতিটা জটিল। প্রতিটি বিষয়ে চা বাগানের সভাপতিকে চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার্গেইনিং করতে হয়। তাই চা বাগান সভাপতি পদে সাধারণত নারীরা প্রতিযোগিতা করার সাহস করেন না। কিন্তু বিনোতা এ ক্ষেত্রে পুরো ব্যতিক্রম। তিনি প্রথম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি। তার সাহসিকতা আমাদের প্রায় অভিভূত করে। তিনি পুরুষ সভাপতিদের চেয়েও অনেক বিষয়ে ভালো করছেন।

সারা দেশের ১৬৭টি বাগানের ২৪৩ চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির প্রথম ও একমাত্র নারী সভাপতি বিনোতা। তাই তিনি ইতিহাসের অংশ। চা বাগানের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে আর কোনো নারী সভাপতি ছিলেন না। শুধু তাই নয়, পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তিনি দুবার ভোটে নির্বাচিতও হয়েছেন।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close