ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নষ্ট হয়েছে অর্ধেক চামড়া
চামড়া শিল্পকে রক্ষা করুন
প্রকাশ: রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৭.০৮.২০১৯ ১১:২৬ পিএম  (ভিজিট : ১১৩)
কোরবানির ঈদের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে চ‚ড়ান্ত হয় চামড়ার দাম। কিন্তু বাস্তবে কোথাও নির্ধারিত দর মেনে চামড়া বেচাকেনা হয়নি। বরং অবিশ^াস্য রকম দাম কমে যায় কোরবানির পশুর চামড়ার। দাম না পেয়ে হতাশ কোরবানিদাতা এবং মৌসুমি চামড়া সংগ্রাহকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে নষ্ট করে ফেলেন প্রচুর কোরবানির পশুর চামড়া। লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র তিনশ’ টাকায়। খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচ টাকায়। দাম না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভে কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট করে ফেলেছেন। হাজার হাজার পশুর চামড়া মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অসংখ্য চামড়া বাধ্য হয়ে শহর-নগর কর্তৃপক্ষকে নষ্ট করে ফেলতে হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম না পেয়ে রাস্তায় চামড়া ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। চামড়ার বাজারের এই ধসের কারণে প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকা সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের ধারণা, এবারে কম দামে চামড়া কিনতে পারায় এবং কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানির অনুমতি মেলায় পাঁচশ’ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত লাভ হাতিয়ে নেবে আড়তদার, ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা। আড়তদারদের অভিযোগ, এবার তারা পশুর চামড়া সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন, তা পূরণ করতে পারেননি ট্যানারি মালিকদের গাফিলতির কারণে। অভিযোগ উঠেছে, ট্যানারি মালিকরা গত বছরের প্রায় চারশ’ কোটি টাকা এখনও আড়তদারদের পরিশোধ করেননি। ফলে মূলধন সংকটে পড়েন আড়তদাররা। অন্যদিকে মালিকদের অভিযোগ, আড়তদাররা নিজেরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এতে তারাই লাভবান হবেন। তবে চামড়ার বাজারে এই অস্থিরতার পেছনে সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক সময়ের আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চামড়া নষ্টের কারণ খুঁজতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, চামড়া সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, চামড়া খাতে ব্যাংকের দেওয়া ৭০০ কোটি টাকার ঋণ কীভাবে ব্যবহার হয়েছে ব্যাংকগুলো খতিয়ে দেখবে বলেও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা জড়িত? চামড়ার বাজারে ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র মানুষ। আর এই বাজার ধসের কারণে কারা লাভবান হয়েছে তা খুঁজে দেখার দায়িত্ব সরকারের। এর পেছনে কোনো চক্র যদি কাজ করে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত। আমরা মনে করি, দ্রæত এই সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করতে হবে। তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে খুঁজে দেখতে হবে পশুর চামড়ার বাজারে এই ধসের পেছনে কারও অবহেলা, অব্যবস্থাপনা দায়ী কি না। আমাদের রফতানির এই দ্বিতীয় খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। পশুর চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে দিতে চামড়া শিল্পের রয়েছে বড় ভ‚মিকা। প্রতিবছর দেশ থেকে যে পরিমাণ চামড়া রফতানি হয়, তার বড় অংশ সংগ্রহ করা হয় কোরবানির সময়ে। এ সময়ে কোরবানি দেওয়া পশুর চামড়াই আমাদের বৈদেশিক অর্থ আয়ের অন্যতম খাত। অথচ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা এই খাতকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে, তাদের শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। চামড়ার বাজার উন্নত ও স্থিতিশীল রাখা জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থেই প্রয়োজন।





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close