ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা
দ্রুত ফেরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ: শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২১.০৯.২০১৯ ১২:২৭ এএম  (ভিজিট : ১১৯)
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমÐলে নানা আলাপ-আলোচনা ও উদ্যোগ লক্ষ করা গেলেও এখন পর্যন্ত এই সংকট সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। গত চার দশক ধরে মিয়ানমারের এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে জাতিগত নিধন, গণহত্যা, ধর্ষণ, শত শত গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদের সাংবিধানিক মৃত্যুর ঘটনাও দেখছে বিশ^। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অব্যাহত নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ সরকারও প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের আশ্রয় দেয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভ‚মিতে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এগারো লাখের অধিক রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ দীর্ঘ সময় ধরে চালানো অসম্ভব। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্ম। দেশের ভেতরে মাদক ব্যবসাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে রোহিঙ্গারা ভ‚মিকা রাখছে। শুধু তাই নয়, তারা পাহাড়, বনাঞ্চল ধ্বংসের মাধ্যমে আমাদের পরিবেশরও বিপুল ক্ষতি করছে। ইতঃপূর্বে আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও তা যে আন্তরিক ছিল না এবং তা যে ছিল তাদের সাজানো নাটক তা স্পষ্ট হয়েছে একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশে ফিরে না যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বোঝা উল্লেখ করেছেন। দৈনিক সময়ের আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণভবনে ইউকে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রæপের (এপিপিজি) দুটি পৃথক প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, মিয়ানমারের তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের সব অপরাধের মূলে রয়েছে ইয়াবা কারবার। এই ইয়াবা এসেছে রোহিঙ্গাদের হাত ধরে। এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েও রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দৈনিক সময়ের আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বসতি ক্যাম্পের বেশিরভাগ ঘরই এখন ইয়াবার গুদাম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। নাফ নদী পেরুনো ইয়াবার চালান সংরক্ষণ করা হচ্ছে রোহিঙ্গা বসতির ঘরগুলোতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য থাকলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালানোর সুযোগ নেই। আর এই ইয়াবার কারবার করেই রোহিঙ্গাদের হাতে আসছে লাখ লাখ টাকা। যা দিয়ে তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্টেরও মালিক হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই গড়ে তুলেছে বিশেষ বাহিনী। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশপাশের উঁচু পাহাড়ের গহিনে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা গোপন আস্তানা গড়েছে। সেই আস্তানা থেকেই রোহিঙ্গারা ডাকাতি-অপহরণ, ছিনতাই ও ইয়াবা সংক্রান্ত নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেÑ যা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেমন অবনতি করছে, তেমনিভাবে রোহিঙ্গাদের ছড়ানো মাদকের থাবায় আমাদের যুবসমাজকেও ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে।
গত বছরে একবার এবং চলতি বছরে দ্বিতীয় দফা রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভ‚মিতে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ সফল হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে এ কথাও স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ভেতর থেকেও চাপ তৈরির কোনো সম্ভাবনা নেই। রোহিঙ্গাদের পক্ষে কাজ করতে মিয়ানমারে সুধীসমাজ যে আগ্রহী নয়, তা বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। একইভাবে রোহিঙ্গাদের নিধনের পেছনে মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনী সরাসরি ইন্ধন দিচ্ছে সে বিষয়টিও স্পষ্ট। এমনকি মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমও রোহিঙ্গাদের পক্ষে নয়। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক চাপ। আজ যে বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে সবার সমর্থনের বিকল্প নেই। জাতিসংঘের বিশ্লেষণে অভিহিত হয়েছে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠী। রোহিঙ্গা সমস্যা আজ বৈশি^ক সমস্যা। আমাদের বৈশি^ক সমর্থনের মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে। মিয়ানমারের চাপিয়ে দেওয়া বোঝা থেকে বেরিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে বাধ্য করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর তথা দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের।






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close