বহুল প্রত্যাশিত ঢাকার মেট্রোরেল জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার দ্বিতীয় দিনেও যাত্রীদের দীর্ঘ সারি ও উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মেট্রোরেলে উঠতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা সত্ত্বেও এতে ওঠার পর আক্ষেপের পরিবর্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। কেউ এসেছেন প্রথমবার, কেউবা আগের দিন চড়ার পরও। কেউ কেউ অতৃপ্তির কথাও জানান। কারণ এখন মেট্রোরেল চলছে দিনে মাত্র ৪ ঘণ্টা। শুক্রবার ছিল ছুটির দিন। ভোর থেকেই উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশনে বাড়তে শুরু করে যাত্রীদের সংখ্যা। নির্দিষ্ট সময় না জানায় দুপুর ১২টার পর এসে অনেকেই ফিরেছেন হতাশ হয়ে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ৪ ঘণ্টা ঘুরেও অতৃপ্তি কাটেনি।
শুক্রবার গড়ে ১০ থেকে ১২ মিনিট পর পর স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ছেড়ে গেছে। তখন সকাল ১০টা। যাত্রীদের লাইন ছাড়িয়েছে বিমান জাদুঘরেরও পরে। সেখানেই কথা হয় মেট্রোরেলে উঠতে আসা জামাই-শ্বশুরের সঙ্গে। ময়মনসিংহ সদর থেকে মেট্রোরেলে চড়তে এসেছিলেন আবদুল লতিফ সরকার। সঙ্গে জামাই শামিম কিবরিয়া ও ছোট্ট নাতি। তাদের বাসা খুলনায়। জামাই-শ্বশুরের ভাষ্য, আমরা শুধু মেট্রোরেলে ওঠার জন্যই ঢাকায় এসেছি। অনেক গল্প শুনেছি। মেট্রোরেল কেমন, কীভাবে ওঠে। কাছে গিয়ে ধরে দেখতে চাই। আমরা আশা করছি, এবার সব যানজট কমে যাবে ঢাকার। ৭০ বছর বয়সি আবদুল লতিফ সরকার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
বউকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছেন মো. মিজান (৪৫)। অন্য কাজ থাকলেও মূলে ছিল মেট্রোরেলে ওঠা।
পরে আসায় উঠতে পারেননি তিনি। হতাশায় পিঠে হাত নিয়ে বলে, ‘আমি তো ভাইয়া কুমিল্লা থেকে এসেছি। তাই বউকে সঙ্গে এনেছি। ভাবছিলাম আজ মেট্রোরেলে উঠব, তারপর কালকে চলে যাব। তাই ফেরার টিকেটও কেটে রেখেছি। কিন্তু উঠতে পারলাম না। এসেই দেখি গেট বন্ধ। গেটে থাকা আনসার ও পুলিশ বলছে, আজ নাকি আর খুলবে না।’ তার আশা, এবার পূরণ হয়নি তাতে কী? পরের বার আবার ঢাকায় আসবেন। তখন হয়তো মেট্রোরেলে উঠতে পারবেন।
দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষার পর মেট্রোরেলে ভ্রমণের টিকেট পেয়ে হাসি ফোটে যাত্রীদের মুখে। মেট্রোরেলে চড়ে অনেকেই বলেন, ‘মনে হচ্ছে দেশের বাইরে আছি।’ শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবক-বৃদ্ধ, সবার কাছেই যেন এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তখন সর্বোচ্চ গতিতে কাজিপাড়া পার হচ্ছিল মেট্রোরেল। আসন খালি থাকলেও বসেননি শফিকুল ইসলাম। বলেন, ‘আমি এত খুশি হয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না। গতকালও আমি এসেছিলাম, কিন্তু প্রথম দিনে এত ভিড় ছিল শেষমেশ ঢোকার সুযোগ পাইনি। তবে আজ সকালেই এসেছি। উঠতে পেরে অনেক আনন্দিত।’ মিরপুরের বাসিন্দা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চাকরিজীবী বলেন, ‘মেট্রোরেলের পরিবেশ দেখে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি, যারা উঠছে মেট্রোরেলে তারাও নিয়মকানুন মেনে পরিবেশ ঠিক রাখবে।’
শফিকুলের মুখে আরও শোনা যায়, ‘আমি শুধু উত্তরা যাচ্ছি না। আবার ফিরেও আসব মেট্রোতে। যখন সারা দিন চলবে, বিভিন্ন স্টেশনে থামবে তখন সবার জন্য আরও সহজ হবে। তাই সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের।’
তালতলার বাসিন্দা মঞ্জুরি ব্যানার্জী ছেলেকে নিয়ে স্টেশনে এসে আশাহত হন। বলেন, ‘আমার খুবই খারাপ লাগছে। বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি মেট্রোরেলের গেট বন্ধ। ছুটির দিনে সকালে সবকিছুই বন্ধ থাকে। তাই ভাবছিলাম এটাও দুপুরের পর চলবে। ভোর বেলা থেকে ৪ ঘণ্টা চললে কেমনে হবে। দুই মাস পরে নয়, এখনই সময় বাড়ুক। বাসা থেকে সিএনজি করে এসেছি। সেখানেও খরচ হলো, এখন আবার বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
মঞ্জুরি ব্যানার্জীর মতো একই দশা নূর হোসেনের (৬২)। নাতিপুতি নিয়ে তিনি এসেছিলেন মোহাম্মদপুর থেকে। সময়ের আলোকে জানান, ‘কাইলক্যা আমি মোবাইলো দ্যাখছি সবাই উঠচে। এল্লেগা আইজক্যা আইছি। কিন্তু এহন আইস্যা সাইরা শুনি, এই ট্রেন নাকি বন্ধ হইয়া গেছে। গেট দিয়াই ভেতরে ঢুকবারই দিল না। এখন কি আর করার সিএনজি করেই আবার ফিরা যামু।’
বেলা ১১টায় আগারগাঁও স্টেশনের বুথ থেকে টিকিট সংগ্রহে ব্যর্থ হন সুমাইয়া তানহা। বলেন, ‘আমি জানতাম না বুথ থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে নির্দিষ্ট নোট দিতে হয়। আমি ৬০ টাকার টিকেটের জন্য ২০০ টাকার নোট দিয়েছিলাম, ফেরত এসেছে। এখন আমার কাছে ভাঙতি নেই, হাতে তেমন সময়ও নেই।’