ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম  (ভিজিট : ২২৬)
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেন। মামলায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সচিব ও মহাপরিচালক রেজানুর রহমান দুদক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।

মামলার আসামিরা হলেন-গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এ ছাড়া মামালায় অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুদকের কাছে অভিযোগ করা হলে দুদক আইন ও বিধি মোতাবেক অনুসন্ধান শুরু করে। এক পর্যায়ে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের সত্যতা পেলে ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। অন্যদিকে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় একই বছরের ২৭ এপ্রিল। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও হিসাব খোলা হয়েছে একদিন পূর্বে ৮ মে। আবার সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

এজহারে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে ২২ জুন অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামানের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে দুই দফায় মোট ৩ কোটি টাকা, সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের হিসাবে ৩ কোটি ও সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।

একইভাবে অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি টাকা এবং অ্যাড. জাফরুল হাসান শরীফ ও অ্যাড. মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড টার্চার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।

দুদক সংশ্লিষ্টরা বলেন, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষেক্ষহস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশ্যে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে আত্মসাৎ করেছেন। যা দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ-সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠালে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সংস্থার তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। অভিযোগ অনুসন্ধানে গত বছরের আগস্টের বিভিন্ন সময়ে টেলিকমের এমডিসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এর মধ্যে গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগতভাবে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বোর্ডের মাধ্যমে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং নিয়ম মেনেই শ্রমিকদের অর্থ ছাড় করা হয়েছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close