ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক
এই তাপদাহেও থামেনি বৃক্ষনিধন
প্রকাশ: বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩, ৬:৪৫ এএম  (ভিজিট : ১৩২১)

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তবু প্রকৃতির ওপর অবিবেচনাপ্রসূত মানব আচরণ বন্ধ হচ্ছে না।

প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য না রেখেই চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। বর্তমান তীব্র তাপদাহের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে না সচেতনতা। উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল ও জলাধার। প্রয়োজনীয় বনভূমি ও জলাধারের অভাবে শহর ও গ্রামে বাড়ছে উষ্ণতা। প্রকৃতির সঙ্গে বিরূপ আচরণে দেশজুড়ে চলমান তাপদাহে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এরপরও খোদ পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেন ঘুমিয়ে আছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবাদ হলেও বিবেচনাবোধ জাগ্রত হচ্ছে না এক শ্রেণির মানুষের। হবিগঞ্জে দশক ধরে প্রকৃতির সেবা দিয়ে আসা বৃক্ষগুলো চলছে নিধন। ফলে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের সবুজ গাছের সারি আর দেখা যাবে না। এত দিন পরিবেশ শীতল রাখা ও সৌন্দর্যবর্ধন করা আকাশমনি, শিলকড়ই, বেলজিয়াম, লোহা, মেহগনি গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ হারাবেন পথচারীরা। আশ্রয় হারাবে অনেক পাখি। তবু চলবে বৃক্ষনিধন। এরই মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার জগতপুর গ্রামে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের দুই পাশের বেশ কিছু গাছ কাটাও হয়েছে। 

জেলা বন বিভাগ বলছে, দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় ২০০৪-০৫ অর্থবছরে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের দুই পাশে ১০ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। গাছ বেড়ে ওঠার ১০ বছরের বেশি সময় হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শায়েস্তাগঞ্জ রেঞ্জের কর্মকর্তা শাহ আহম্মেদ বলেন, এই সড়কের উভয়পাশে ১০ কিলোমিটার এলাকায় বেড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য গত ২৬ জানুয়ারি নিলাম টেন্ডার করা হয়। তিনটি টেন্ডারে ২১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হয় গাছগুলো। উল্লিখিত টাকার ৫৫ ভাগ পাবে উপকারভোগীরা, ভূমির মালিক (সওজ) পাবে ২০ ভাগ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিশোধ পাবে ৫ ভাগ, বন বিভাগ পাবে ১০ ভাগ ও বাকি ১০ ভাগ টাকা দিয়ে বন বিভাগ আবারও বনায়ন করবে। 

পরিবেশ সচেতনতায় কাজ করা সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১১ সালে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সনদ (সিবিডি) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট ভূখণ্ডের ১৭ শতাংশকে রক্ষিত বনাঞ্চল করার ঘোষণাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ওসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এরপরও বনায়ন না বাড়িয়ে বিভিন্ন অজুহাতে কেবল বন উজাড় করাই হচ্ছে। এর পেছনের উদ্দেশ্য মানুষের জন্য মঙ্গলজনক নয়। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সেক্রেটারি তোফাজ্জল সোহেল বলেন, দিন দিন গাছ কাটার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃতি হারাচ্ছে অক্সিজেনের উৎস। কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের অবহেলা, পরিকল্পনাহীনতা ইত্যাদি কারণে হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের পরম বন্ধু গাছ, আমাদের পরিবেশ। হবিগঞ্জ জেলা শহরের কোর্ট মসজিদ মার্কেটের সামনে গত ৫ জুন দুপুরে প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে পরিবেশ কর্মীরা হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের পাশ থেকে গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানান। বক্তব্য রাখেন কবি তাহমিনা বেগম গিনি, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেলসহ আরও অনেকেই। তারা বলেন, ক্রমাগত তাপমাত্রা বাড়ার এই সময়ে গাছপালা না কেটে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 

জগতপুর গ্রামে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের দুই পাশের গাছগুলো কাটা নিয়ে কথা হয় ওই গ্রামের মাসকু আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এতদিন গাছগুলো থাকায় আমাদের বাড়িঘরে প্রাকৃতিকভাবে ছায়া ও বাতাস পেয়েছি। গাছগুলো কেটে ফেলায় বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। 

স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বাবুল মিয়া বলেন, এই সড়কে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চালাই। সড়কের দুই পাশে সবুজ গাছপালা থাকায় ছায়া দিয়ে গাড়ি চালানো যেত। আর দুর্ঘটনা হলেও গাছগুলো থাকায় রক্ষা পাওয়া যেত। গাছগুলো না কাটলে মানুষের উপকার হবে। 

পাইকপাড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো কেটে ফেলায় পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ পড়েছে। কালের সাক্ষী পুরোনো কিছু আম গাছ কাটা হয়েছে। এতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখে যাবে পৃথিবীর সব দেশে শত বছরের গাছগুলো না কেটে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান টুকু বলেন, ‘গাছের বিষয়টি বন বিভাগের আওতাভুক্ত।’ এ ছাড়া আর কিছু বলতে চাননি তিনি। 

হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সল বলেন, এই সড়কে বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গাছ লাগায়। সড়ক বিভাগে তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে একজন উপকারভোগী সড়ক বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করে সামাজিক বনায়ন করেন। আর বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের কাগজে দেখা যায় এটি ২০১১ সালের লাগানো। বন বিভাগ এই গাছ কাটার জন্য জেলা বন ও পরিবেশ কমিটি বরাবর আবেদন করলে ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাছগুলো কাটা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close