উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে একদিকে বাড়ছে তিস্তার নদীর পানি। অন্য দিকে ভাঙছে বাড়ি ঘর। বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে তিস্তার কবলে থাকা রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রামের নিম্ন অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন।
এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে তিস্তার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন তারা।
এসময় রাতে পানি আরও বৃদ্ধি পাবে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আবদুল্লাহেল হাদী।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলাম সন্ধ্যা সময়ের আলোকে বলেন, কিছুক্ষণ আগে কাউনিয়ার একটি পয়েন্টের একটি স্থানে ভাঙনের খবর পেয়েছি খোঁজ খবর রাখছি। অন্য দিকে ৪৪ কপাট খুলে রাখা হয়েছে জানান তিনি।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে বাড়তে শুরু করেছে রংপুর ও,লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিন দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টা ও সকাল ৯টায় এই পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার ও ৫১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে পানি শুক্রবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে পানি প্রবাহ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে রাত নাগাদ আবারও দেখা দিতে পারে তিস্তায় বন্যা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বেড়েছে। তবে ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্ষাকালে নদীর পানি বাড়া কমার মধ্যে থাকবে। পানি বাড়লে তিস্তাপাড়ের নিমনাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। বন্যা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বদা প্রস্তুত আছে।
হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া ফসলের খেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখি নিয়েও বিপাকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, হঠাৎ রাতে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। পানির বেড়ে যাওয়ায় আমরা রাত জেগে আছি।
একই এলাকার একরামুল হক বলেন, এতদিনতো নদীতে পানি ছিল না। হঠাৎ পানি বাড়ছে। ভারত মনে হয় পানি ছাড়ি দিছে। আমাদের যখন পানি লাগে তখন ভারত পানি দেয় না। আর এখন হঠাৎ তারা পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের এলাকায় বন্যা সৃষ্টির পায়তারা করছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, ভাঙনের খবর এখনো পাইনি তবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আমাদের কর্মকর্তারা , প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্ৰহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সময়ের আলো/এম