ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:৩৫ এএম  (ভিজিট : ৫২০)
জয়পুরহাট জেলার কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন জয়পুরহাট-২। একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসন গত প্রায় ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের দখলে। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এ জেলায় অতীতের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত অবস্থানে আছে। প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামত, আইএইচটিসহ নানা উন্নয়নমূলক দৃশ্যমান কাজের জন্য জেলায় আওয়ামী লীগের ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি তার দুর্গ পুনরুদ্ধারে মরিয়া। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে এ দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠে গণসংযোগ শুরু করেছেন পুরোদমে। তবে নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে ও বিএনপি উভয় দলের জন্য বর্তমানে বড় সমস্যা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

জয়পুরহাট-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৫ হাজার ২৯০ জন। পুরুষ ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৮ ও নারী ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯১ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালেও এ আসনে একইভাবে নির্বাচিত হন স্বপন। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ। 

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় এ আসনে ক্ষমতাসীন দলটির আর কোনো প্রার্থী দৃশ্যমান না হলেও বিএনপির সাম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নতুন মুখের সংখ্যা বেড়েছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছেন এমপি স্বপন। এ ছাড়া বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির নেতা তাজমহল হিরক ও আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও রুকিন্দিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে তারা স্বপনকে ডিঙিয়ে কেন্দ্র ও ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারবেন বলে মনে করেন না স্থানীয় রাজনীতি সচেতন মানুষরা। 

দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কথা বলতে না চাইলেও তার অনুসারী কালাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন সময়ের আলোকে বলেন, এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের রাজনৈতিক ও উন্নয়ন কার্যক্রমে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ দারুণ উজ্জীবিত। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়লাভ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। 

তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও রুকিন্দিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর নিজেকে আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচার করছেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন দলীয় কর্মীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বিভিন্ন অনুদান এনে বিতরণ করছেন। সম্প্রতি এ ধরনের এক অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে তার ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। 

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির নেতা তাজমহল হিরক বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত সব দিক বিবেচনায় জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। তবে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন কানা-খোঁড়া-ল্যাঙরা যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে নির্বাচন করতে হবে। আমিও তাই করব।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ অবসর চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একে অপরকে বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা হয়ে থাকে। তারই অংশ হিসেবে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুরের মানুষ এসব বুঝতে পেরেছে, জননেত্রী শেখ হাসিনা বহিরাগতকে (জয়পুরহাট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আব সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এ আসনের বাসিন্দা নন) সরিয়ে ঘরের মানুষকে মনোনয়ন দেবেন বলে বিশ্বাস করি।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জয়পুরহাট-২ আসনটি বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়ায় আসনটি তাদের হাতাছাড়া হয়ে যায়। এ ছাড়া জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির কারণে বিএনপির ভোট কমেছে বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হলে দলের মধ্যে গ্রুপিং বৃদ্ধি পায়। ত্যাগী ও প্রবীণ নেতারা ছিল উপেক্ষিত। একপক্ষে ছিল ত্যাগী ও প্রবীণ নেতারা অপরপক্ষে ছিল গোলাম মোস্তফার অনুসারীরা। এ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংর্ঘষ হয়েছে একাধিকবার। আগামী নির্বাচনে জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে এমপি প্রার্থী হবেন সাবেক এমপি বর্তমান বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে কাজ করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন। তিনি কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় তার পক্ষে মনোনয়ন পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করছেন তিনি। এদিকে জাসাসের সাবেক নেতা কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

জয়পুরহাট দুই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা বলেন, এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না, কোনো জাতীয় বা নিদর্লীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং আবারও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হব ইনশাল্লাহ।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনি জোট হলে জোটের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করবেন জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি আবু সাঈদ মো. নূরুল্লাহ মাসুম। আর জোট না হলেও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হবেন তিনি। আর গত নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনও মহাজোটের ব্যানারে হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানান জেলা জাপার সভাপতি হেলাল উদ্দিন। 

জয়পুরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি আবু সাঈদ মো. নূরুল্লাহ মাসুম বলেন, জাপার অবস্থান খানিকটা দুর্বল হলেও এ আসনে ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা। তেমন অভ্যন্তরীণ বিবাদ না থাকলেও জাপা রয়েছে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। আমরা সাংগঠনিকভাবে বেশ মজবুত আছি। সুষ্ঠুভাবে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে জাতীয় পার্টি জিতবে বলে বিশ্বাস করি।

সর্বোপরি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার দখলে থাকবে জয়পুরহাট-২ আসন তা জানতে হলে আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

সময়ের আলো/জেডআই




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close