ই-পেপার শনিবার ১৮ মে ২০২৪
শনিবার ১৮ মে ২০২৪

অন্তরের রোগ ও চিকিৎসা
প্রকাশ: শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ৪:৪৬ এএম  (ভিজিট : ২৮৮)
মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রধানত দুটো বিষয়ের সমন্বয়ে-শরীর ও অন্তর। শরীরের তুলনায় অন্তর বা মন অতিক্ষুদ্র একটি অংশ। অথচ অন্তর গোটা দেহের প্রাণকেন্দ্র ও মধ্যমণি। শরীরের নিয়ন্ত্রক ও রাজা। বাকি সব অঙ্গ তার প্রজা। তাই সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্তর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলে গোটা মানবদেহে অন্তরই আল্লাহর প্রধান লক্ষ্যস্থল। এ জন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের শরীর ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন।’ এ কথা বলার সময় নবীজি (সা.) আঙুল দিয়ে নিজের বুকের দিকে ইশারা করেন। (মুসলিম : হাদিস ৬৩১০) 

শারীরিক সুস্থতায় অন্তরের ভূমিকা
ইসলামে ভালো-মন্দের বিচার করা হয় অন্তর দ্বারা। যার অন্তর ভালো তার সব ভালো। যার অন্তর খারাপ তার সব খারাপ। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সেই গোশতের টুকরাটি হলো ‘কলব’ অর্থাৎ অন্তর’ (বুখারি, কিতাবুল ঈমান, হাদিস : ৫০)। সুতরাং শারীরিক সুস্থায় কলব বা অন্তরের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য।

ইসলামে শারীরিক সুস্থতার গুরুত্ব
ইসলামে শারীরিক সুস্থতার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। তাই নেশা ও যাবতীয় মাদকদ্রব্যকে হারাম করেছে ইসলাম। শারীরিক সুস্থতা ফরজ ইবাদতের ওপর অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচিত হয় ইসলামে। কোনো আমল ও বিনিদ্রায় দীর্ঘ রাত জাগরণ এবং অনাহারের মাধ্যমে শরীরিক কষ্ট সহ্য করা হারাম। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, হে আবদুল্লাহ! আমাকে কি এ খবর প্রদান করা হয়নি যে, তুমি রাতভর ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাকো এবং দিনভর সিয়াম পালন করো? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, এরূপ করো না; বরং এক দিন রোজা রাখো, অন্যদিন খাদ্যগ্রহণ করো। 

রাত জেগে ইবাদতও করো এবং নিদ্রাও যাও। তোমার শরীরেরও তোমার ওপর হক আছে। তোমার চোখেরও তোমার ওপর হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার ওপর হক আছে। (বুখারি : হাদিস : ৪৮২০)

যে কারণে অন্তর রুগ্ন ও নষ্ট হয়
রাসুল (সা.) বলেছেন, যারা নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আত্মসমালোচনা করে তারা বুদ্ধিমান। যারা নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে না তারা নির্বোধ ও অক্ষম (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)। হিজরি তৃতীয় শতাব্দীর প্রসিদ্ধ আলেম হারেস আল-মুহাসিবি (রহ.) বলেন, কলব নষ্ট বা রুগ্ন হয় মূলত আত্মসমালোচনা ও কলবকে নিয়ন্ত্রণ না করা এবং দীর্ঘ আশার কারণে (রিসালাতুল মুসতারশিদিন, পৃ : ১১০)। হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ছয় কারণে কলব বা অন্তর নষ্ট হয়-১. তওবার আশায় গুনাহ করা। ২. ইলম শিখে আমল না করা। ৩. ইখলাসের সঙ্গে আমল না করা। ৪. আল্লাহর রিজিক খেয়ে তাঁর শুকরিয়া আদায় না করা। ৫. আল্লাহর বণ্টনে খুশি না থাকা। ৬. মরদেহ দাফন করা এবং তার দ্বারা উপদেশ গ্রহণ না করা। নির্দয় এবং কর্কশ হওয়াও কলবের একটি রোগ। ফুজাইল ইবনে ইয়াজ (রহ.) বলেন, দুটি স্বভাবের কারণে কলব নির্দয় ও কর্কশ হয়-১. বেশি কথা বলা। ২. বেশি খাওয়া। (হায়াতুস সালফ বাইনাল কওল ওয়াল আমল, পৃ : ২১৪)

অন্তরের সুস্থতার চিকিৎসা
দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণে মানুষের মাঝে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মসমালোচনা না করার কারণে এবং দীর্ঘ আশার ধোঁকায় পড়ে কলব নষ্ট বা রুগ্ন হয়। মুসলমান হিসেবে আমরা বিশ^াস করি, পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই যার কোনো চিকিৎসা আল্লাহ তায়ালা দেননি। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘প্রতিটি রোগের ওষুধ রয়েছে। সুতরাং রোগে যথাযত ওষুধ প্রয়োগ করা হলে মহান ও মহীয়ান আল্লাহর হুকুমে রোগ নিরাময় হয়’ (মুসলিম : হাদিস : ৫৫৫৩)। মানসিক চাপসহ নানাবিধ রোগবালাই থেকে উত্তরণে ইসলামি ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর। হজরত ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ায (রহ.) বলেন, অন্তরের রোগ নিরাময়ের ওষুধ পাঁচটি-১. খুব মনোযোগ সহকারে কুরআন তেলাওয়াত করা। ২. কম করে খাওয়া ও পেট খালি রাখা। ৩. কিয়ামুল লাইল করা। ৪. সেহরির সময় কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা। ৫. নেককার লোকদের সঙ্গে বেশি বেশি ওঠাবসা করা (হায়াতুস সালফ বাইনাল কওল ওয়াল আমল, পৃ : ২১৬)।

এ ছাড়াও আরেকটি দাওয়া আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো ‘জিকির’। বর্ণিত হয়েছে, ‘জেনে রাখো, আল্লাহর জিকিরে অন্তর প্রশান্তি লাভ করে’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)।

জিকির একটি ব্যাপক শব্দ। এরমধ্যে নামাজ, দোয়া, তেলাওয়াত ও ইসতিগফার ইত্যাদি সব ইবাদতই সাধারণত জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। তবে সর্বোত্তম জিকির হলো কুরআন পাঠ করা। অন্তর সুস্থ ও প্রশান্ত থাকলে তার প্রভাব শরীরেও পড়বে। সুতরাং পৃথিবীতে সুখী-সুন্দর ও ঝরঝরে একটি জীবন কাটানোর জন্য নিয়ম করে অন্তরের সুস্থতার এ চিকিৎসা গ্রহণ করলে শরীরও থাকবে সুস্থ ও কর্মমুখর।

আলেম ও প্রাবন্ধিক

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close