ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

‘মানসম্মত সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সেবা দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য’
এফইআরবির সেমিনারে বক্তারা
প্রকাশ: শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:২৫ পিএম  (ভিজিট : ৬০১)
শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর এখন মানসম্মত সাশ্রয়ী সেবা দেওয়াই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সরকার শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছেছে। আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত হবে।

শনিবার ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টাস বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত স্বাধীনতার ৫০ বছর বিদ্যুৎ জ্বালানিখাতের অর্জন নিয়ে এক সেমিনারে সরকারের নতুন এই চ্যালেঞ্জ এর কথা তুলে ধরা হয়।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, পাকিস্তান সরকার দেড় বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন।

এই প্রকল্পর লক্ষ্য ছিল এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন। কিন্তু তখন আমাদের দেশে মাত্র ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নজর দেয়নি। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার বঙ্গবন্ধু রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে দেশে নতুন করে বিদ্যুতখাত পূর্নগঠন করে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আবার দেশ পিছিয়ে যায়। তখন দেশে বিদ্যুতের সিস্টেম  লস বেশি থাকায় দাতারা দেশের বিদ্যুতখাতে অর্থ দিতে চায়নি।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইপিপি নীতি গ্রহণ করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বার্জ মাউন্টটেন্ড বিদ্যুৎ নিয়ে আসেন। এছাড়া ক্যাপটিভ নীতি করে শিল্পে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। তখন আইপিপি করার ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যেও দ্বিধা ছিল। তৎকালীন অর্থ সচিব আকবর আলী খান আইপপি করাকে আত্মঘাতি হবে উল্লেখ করে অর্থ দিতে চাননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে এসব সমস্যার সমাধান করেন। এরপর ২০০৯ সালে আবার বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে সরকার দায়িত্ব নিলো। তখন থেকে নানা রকম নীতির পরিবর্তন করে সরকার বিদ্যুতখাতের সংস্কার করে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আজ বিদ্যুৎখাত এবং দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাড়িয়েছে।
 
সেমিনারে বিশেষ অতিথি বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর এখন সাশ্রয়ী এবং মানসম্মত সরবরাহই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সারা বিশ্বেই পরিবর্তন এসেছে। আমাদেরও সেই পরিবর্তণের সঙ্গে থাকতে হবে। প্রথম দফায় ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার ভঙ্গুর বিদ্যুতখাকের পুর্নগঠন  চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। তখন সরকার বেসরকারিখাতের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেন। এরপর ২০০০ সালে আবার জামাত বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতখাতকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এতে করে দেশটি ৫০ বছর পিছিয়েগেছে। তখন লোডশেডিং এর জন্য রাস্তায় মিছিল হয়েছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুত পৌছে দেয়ার অঙ্গীকার করেন। তখন আরব দেশ ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। তখন আমাদের আর্থিক সংকট ছিল। কেউ বিনিয়োগ করতেও চাইনি। কিন্তু এপরও সরকারের উদ্যোগে দুই থেকে তিন বছরে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তখন সরকারের নীতিই বিদ্যুৎখাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। তিনি বলেন, তখন বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইন করা হয়েছিল। এই আইনটির সমালোচনা হলেও আজকের অবস্থায় বিদ্যুৎখাত পৌছাতে পারতো না।
 
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় মাত্র ৩০০ মেগাওয়াটের উৎপাদন নিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করে। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই গ্রামীন জনপদে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শুধু বিদ্যুৎখাতের ভিত্তি রচনা করেছিলেন তা নয়। ঘাতকের নির্মমতায় নিহত হওয়ার ঠিক আগে আগে ব্রিটিশ গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ডে পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেন। যা দেশের জ্বালানির মূল চাহিদা মেটাতে অগ্রনী ভূমিকা রাখে। এরপর ১৯৯৬ সালে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর আবার বিদ্যুতখাত সংস্কারের উদ্যোগ নেন। এরপর আবার ক্ষমতার পট পরিবর্তনে বিদ্যুৎখাত পিছিয়ে যায়। তখন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এরপর আবার শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যুৎখাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এর ফলে গত এক যুগে বিদ্যুৎখাতের যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৯ সালে ৪৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। এখন দেশে ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। মুজিব বর্ষের মধ্যে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। একই ভাবে জ্বালানিখাতেরও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যত চাহিদা মাথায় রেখে পায়রা, মাতারবাড়ি, রূপপুর, রামপালে মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জ্বালানিখাতে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ-হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার মধ্যে তেল সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
 
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সংগঠন বিপ্পার সভাপতি ইমরান করিম। এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুন কর্মকারের সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখে পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close