ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

একদিন ঝড় থেমে যাবে...
প্রকাশ: শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫২ এএম  (ভিজিট : ৫২৪)
নচিকেতার এই গানটি আমার খুব প্রিয়। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন বিতর্ক করতাম। আর সেই বিতর্ক নিয়েই আমরা একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানিয়েছিলাম আমাদের বিতর্ক-গুরু মাসকাওয়াথ আহসানের নেতৃত্বে।

ডকুমেন্টারিতে নানা বিষয় উঠে আসে। তবে মূল থিম ছিল যুক্তির দুনিয়া গড়ে তোলা। কিন্তু তবুও তো যুদ্ধ এড়ানো যায় না। তারপরও আশা যুক্তির জয় হবে। তাই ডকুমেন্টারি শেষ হয়েছিল নচিকেতার এই বিখ্যাত গান দিয়ে- 

‘একদিন ঝড় থেমে যাবে,/ পৃথিবী আবার শান্ত হবে।
বসতি আবার উঠবে গড়ে,/ আকাশ আলোয় উঠবে ভরে,
জীর্ণ মতবাদ সব ইতিহাস হবে- পৃথিবী আবার শান্ত হবে।’

আমাদের সেই ডকু গ্রুপের মাসকাওয়াথ ভাই এখন করাচির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। হাফিজুর রহমান কার্জন ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক। আমিনুল ইসলাম সজল ইথিওপিয়া জাতিসংঘ মিশনপ্রধান। ঝিলু কোথায় আছে ঠিক জানি না। আর আমি করি সাংবাদিকতা। আমরা যে যেখানেই থাকি এখনও জীর্ণ মতবাদকে বিদায় দিয়ে এক ভালোবাসার পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি। এখনও আশা করি যুদ্ধ বিদায় নেবে, পৃথিবীতে শান্তির ভোর আসবেই। আমাদের সন্তানরা যুদ্ধের কথা ইতিহাসে জানবে। জাদুঘরে দেখবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। যাচ্ছে পুরো মানবজাতি। আর এই যুদ্ধের প্রভাব এখন দেশে দেশে। যুদ্ধের সরাসরি শিকার হচ্ছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশু। এক বাংলাদেশি নারীকে আমি জানি। যিনি দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনে আছেন। যুদ্ধের শুরুতে এক অনিশ্চিতের পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ইউক্রেন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সপরিবারে। সম্প্রতি তিনি আবার কিয়েভে ফিরে এসেছেন তার নিজ গৃহে। তিনি যাওয়ার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কান্নাভেজা অনুভূতি জানিয়েছিলেন। আবার ফেরার সময় তার উচ্ছ্বাসও তিনি প্রকাশ করেন। তিনি ইউক্রেনকেও তার স্বদেশ মনে করেন। তাই এখনও অনিশ্চয়তা থাকলেও ফিরতে পেরেই তিনি খুশি।

সাধারণ মানুষের এই অনুভূতি হয়তোবা শাসকদের স্পর্শ করে না। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নাড়া দেয় না। দখলদারদের দমাতে পারে না। তাই তো এখানে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ রাশিয়া চায়। আমেরিকাও চায়। ইউক্রেন হলো বলির পাঁঠা। যুদ্ধ ওই দুটি দেশের কাছে এখন ব্যবসা।

আর তাদের ব্যবসার শিকার সারা বিশ্ব। ইউরোপ থেকে অনেক দূরে এই বাংলাদেশও যুদ্ধের শিকারে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিতে তরতর করে এগিয়ে যাওয়া একটি দেশ, যার ২০২৬ সালে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কথা, সেই বাংলাদেশের গতিও টেনে ধরছে যুদ্ধ। নিত্যপণ্যের দাম, ডলার সংকটসহ নানা অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়ছে নাগরিকদের ওপর। শিশুর খাদ্যেও টান পড়েছে।

মোড়লরা নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু তাদের কোনো সংকট হয় না। কারণ তাদের সুবিধা বজায় রেখেই তা দেয়। কিন্তু খাদ্য পায় না বাংলাদেশ। জ¦ালানি তেল পায় না। ভোজ্য তেলও নয়। পায় না ডলার।

এই মোড়লিপনা দেশেও আছে। আছে বিত্তবান আর বিত্তহীন। আছে ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীন। তাই তো ৩০ হাজার টাকা ঋণের দায়ে কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপিকে নতুন করে আবারও ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। কাজ না করে ব্যাংকের টাকা চুরি করে দেশের বাইরে পাচার করেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়েও দুই বেলা খাবার জোগাড় করতে পারেন না। শিশুর জন্য দুধের বরাদ্দ কমিয়ে দিতে হয়। মাংস খাদ্য তালিকা থেকে বিদায় করতে হয়। বাজারের ব্যাগে মাছ ঢুকিয়ে হিসাব না মেলায় তা আবার বাজারেই রেখে আসতে হয়।

এক বৈপরীত্যের সমাজ ও রাষ্ট্র। এখানে করোনা আসে। জীবনের ভয়ে ঘরে ঢুকে যায় মানুষ। তবে কেউ কেউ পেয়ে যায় মওকা। করোনার বাজার পরিণত হয় যুদ্ধের বাজারে। তাই আঙুল ফুলে কলাগাছ বাড়ে। কোটিপতি বাড়ে। বিপরীত দিক থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নাগরিকের সংখ্যাও বাড়ে। শহর বাড়ে, শহরে কান্নাও বাড়ে।

নগরে আছে মেট্রোরেল। এখানে দামি ব্যক্তিগত গাড়িও বাড়ছে। আবার বাড়ছে পায়ে হাঁটা মানুষ। ওই মানুষগুলো জানে না কতটা পথ হাঁটলে তাদের পথিক বলা হবে। কতটা পথ পেরোলে তার দম নেওয়ার সময় আসবে।

তারপরও আশা ছাড়ি না। আশা করি একদিন যুদ্ধ থেমে যাবে। একদিন সব শিশু খাবার পাবে। কৃষকের কোমরে ঋণের দায়ে দড়ি বাঁধা হবে না। দেশের টাকা বাইরে পাচার হবে না। ব্যাংকগুলো লুট হবে না।

সেই দিন আসুক আর না আসুক প্রত্যাশা করেই যাব। স্বপ্ন দেখেই যাব। স্বপ্নবাজ মানুষের জয় হবেই। সামনের বছরে। সামনের যুগে। নয়তো আগামী শতাব্দীতে। সুসময় আসবেই।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, সময়ের আলো




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close