প্রকাশ: রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৭:১০ এএম (ভিজিট : ১৮৬)
সারা দেশেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় বর্ষা মৌসুমের আগেই। ভরা বর্ষায় জুলাই মাসে তা ভয়ংকর রূপ নেয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল আগস্ট মাস। সরকারি হিসাবে আগস্টে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সাড়ে সাতশ মৃত্যু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে অনেকেই করোনা, টাইফয়েড এবং ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গগুলো কাছাকাছি। উপসর্গ দেখে রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না। তাই ডেঙ্গু নিয়ে সংশয়ে পড়ে গেছেন চিকিৎসক এবং রোগীর অভিভাবকরা।
দেশের চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর ধরনে পরিবর্তন এসেছে। আগে ডেঙ্গু হলে অনেক বেশি জ্বর, রক্তক্ষরণ, শরীরে র্যাশ উঠত, তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ পর্যন্ত হতো। এবারের ডেঙ্গুতে তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি থাকছে। ফলে রোগীরা বুঝতে পারছেন না তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কি না। এসব ভাবনা থেকে চিকিৎসার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে চান না। জ্বর চলে যাওয়ার পর প্লাটিলেট ভেঙে রক্তচাপ কমে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগে রোগী মারা যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গের ভিত্তিতে ডেঙ্গু ও সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগীদের আলাদা করা যায়। কিন্তু টাইফয়েড জ্বরের উপসর্গ ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে। তাই কারও জ্বর হলেই তাকে ডেঙ্গুর এনএস১ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের অভিমত, ডেঙ্গু জ্বরে শুরু থেকেই চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। চিকিৎসায় দেরি হলে জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে দেরি করে আসা। তাই এই মৌসুমে জ্বর হলে দেরি না করে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা আরও বেশি জরুরি। অনেকের ধারণা, ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা জ্বরের তিন দিন পার না হওয়া পর্যন্ত করা যায় না। কথাটা সত্য নয়। ডেঙ্গুর পরীক্ষা জ্বর আসার প্রথম দিন থেকেই করা যায় এবং ডেঙ্গু হয়েছে কি না, প্রথম দিনই শনাক্ত করা যায়।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টাকে বলা হয় সংকটকাল। কারণ ডেঙ্গু রোগজনিত বিভিন্ন জটিলতা এ সময় হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই জ্বর সেরে গেলে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়টা জরুরি। জ্বরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
এই সংকটকালে সবাইকে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছে। পাল্টেছে ডেঙ্গুর ধরন। তাই ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে হলে জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তা হলেই কেবল মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা সম্ভব হবে।
/আরএ