বিশ্বব্যাংক ব্যবসা সহজীকরণের কর্মসূচি চালু করেছিল। বেশ কিছুদিন পর তা স্থগিত করে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার স্থগিতের পথে হাঁটেনি। সরকার নিজ উদ্যোগে গত ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর অন্য নামে একটি কর্মসূচি চালু করে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট’। আর এর জন্য ন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং ইম্প্রিমেন্টেশন অব ডুয়িং বিজনেস রিফমর্স গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটির সব সুপারিশ বা প্রস্তাব অনুযায়ী বিডা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতিমধ্যে এই কর্মসূচির জন্য ৭টি পিলারের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এই পিলারের বিপরীতে ৭টি ওয়াকিং গ্রুপ ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই মনিটরিং কমিটি বেশ কয়েকবার সভা করেছে। তবে চলতি মাসে কিংবা আগামী মাসে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মনিটরিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বহুতল ভবনের জন্য অনাপত্তি সনদ প্রদান, ফায়ার লাইসেন্স প্রদান ও ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন সেবা বিডার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়। আর এই সেবার বিপরীতে সরকারি ফি প্রদানের জন্য অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেমে সংযুক্ত করার কাজটি চলমান রয়েছে বলে সভাকে অবহিত করা হয়।
জানা গেছে, সভায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ও বিআরটিএর সেবাগুলো আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনাসাপেক্ষে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতিমধ্যে একটি সভা করলেও আরও একটি সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন সেবা নিজস্ব সিস্টেমে অনলাইনে চালু করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও ৩টি সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন সেবা বিডার সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
জানা গেছে, সভায় করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন ও ট্যাক্স সংশোধন পদ্ধতি অনলাইনে চালু করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলা হলেও এখনও কাজ বাকি রয়েছে। তবে সম্প্রতি সভা থেকে এসব কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সভায় আলাদাভাবে নির্ধারিত ট্যাক্স, ভ্যাট ও অন্যান্য কর আদায়ের পরিবর্তে কোনো ব্যক্তির বা কোম্পানির মোট আয়ের বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট হারে সরকারকে রাজস্ব প্রদান করবে, এই ধরনের একটি প্রস্তাব উঠেছে। তবে এই প্রস্তাব নিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনের উপস্থিতিতে শিগগিরই একটি কর্মশালা আয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন ও বড় বা বিশেষ ধরনের প্রকল্প ছাড়পত্র সেবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেওয়ার বিষয়টি সভায় আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব আবেদন অনলাইনে জমা দিয়ে ১৫ দিনের স্বল্পঝুঁকি ও ৪৫ দিনে বড় স্থাপনাগুলো অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউককে নিদেশনা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদন হয়ে যাবে বলে উপস্থাপন করা হয়। পরে তা এই প্রস্তাব বাতিল করা হয়।
সভায় শিল্প গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা নাকচ হয়ে যায়। সভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলেচনা হয় ঋণসংক্রান্ত তথ্যভান্ডারে প্রবেশের অনুমতি। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে অনেকে মত প্রদান করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ দ্রুত সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষ সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেউলিয়া বিষয়ক (সংশোধন) আইনটি আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলায় অনুবাদ চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে।
সভায় বাণিজ্যিক বিরোধসংক্রান্ত মামলাগুলো ৫০০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য আদালত গঠনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে আইন ও বিচার বিভাগকে দ্রুত বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সভায় উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বন্ডেডওয়্যার হাউস লাইসেন্স সেবা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিডার সঙ্গে সংযুক্তি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তবে রিটার্ন ফাইলিং সেবা, ইনক্রিজ ইন পেইড আপ ক্যাপিটাল সেবা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংযুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন দফতরের বিনিয়োগ ও ব্যবসাসংক্রান্ত যেসব সেবা বিডার পোর্টালে সংযুক্ত হয়েছে সেসব সেবার আবেদন অনলাইন ব্যবস্থায় দাখিলের সুযোগ রহিত করতে বলা হয়েছে। আর ওয়্যারহাউস লাইসেন্স আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিডার সঙ্গে সংযুক্তির কাজ শেষ করতে হবে সভা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সেবাগুলো অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।