ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

ইসলামে খাবার ও ঘুমের বিধান
বিলাল হোসেন মাহিনী
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৫:৪৮ এএম  (ভিজিট : ১৮০৫)
মানুষের জীবনে খাবার ও ঘুম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনো মুসলমান তার জীবনকে কেবল নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না। 

মুসলমানকেও খাবার ও ঘুমের মাধ্যমে জীবন ধারণ করতে হয়। তবে মুসলমানের খাবার ও ঘুম হতে হবে আল্লাহর হুকুম ও নবীর সুন্নত মোতাবেক।

বিশিষ্ট তাবেয়ি নাফে (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করতেন না যতক্ষণ না তার সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকিনকে ডেকে আনা হতো। একবার আমি তার সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে এলাম। লোকটি খুব বেশি পরিমাণে আহার করল। তিনি বলেন, নাফে! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসবে না। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মুমিন এক পেটে খায়। আর কাফের সাত পেটে খায়’ (মুসলিম : ২০৬০)। হজরত মিকদাম ইবনে মাদিকারাব (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মতো কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি তা সম্ভব না হয়, তা হলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (তিরমিজি : ২৩৮৩)

নানা কারণে মানুষের মধ্যে রোগ-ব্যাধি ও অসুস্থতা বাড়ছে। মানুষ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে। ভেজাল ও অপবিত্র খাবার গ্রহণের মাধ্যমে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ব্লাড প্রেশার, শ্বাসকষ্ট, অনিদ্রা ইত্যাদি রোগ আধুনিক মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ভাইরাস ও অদ্ভুত রোগ-ব্যাধি। এসব রোগ ও রোগীর কূল-কিনারা করতে না পেরে বর্তমানে ‘কম আহার করুন, বেশি দিন বাঁচুন’ এই স্লোগানের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। আর মানুষকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বেশি খেলে বহু রোগ সৃষ্টি হয়। প্রফেসর রিচার বার্ড এই মর্মে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন। তিনি লিখেছেন, বেশি খেলে কী কী ক্ষতি হতে পারে। যেমন-১. মস্তিষ্কের ব্যাধি। ২. চক্ষু রোগ। ৩. জিহ্বা ও গলার রোগ। ৪. বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি। ৫. হৃদরোগ। ৬. যকৃৎ ও পিত্তের রোগ। ৭. ডায়াবেটিস। ৮. উচ্চ রক্তচাপ। ৯. মস্তিষ্কের শিরা ফেটে যাওয়া। ১০. দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা। ১১. অর্ধাঙ্গ রোগ। ১২. মনস্তাত্ত্বিক রোগ এবং ১৩. দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া। (উইকলি সান, সুইডেন)

অথচ স্বল্প আহারের প্রতি জোর তাগিদ দিয়ে নবী (সা.) বলেছেন, ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ ভাগ পানির জন্য আর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য’ (ইবনে মাজা : ৩৩৪৯)। পেটের এক-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে বলার কারণ হলো, পানির মধ্যেও বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। পানি খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও পানির কাজ হলো-শরীরে রক্তের তরলতা বজায় রাখা, শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় দূষিত জিনিস নির্গত করতে সাহায্য করা, খাদ্যদ্রব্য হজম করতে সাহায্য করা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, শরীরের অমø-ক্ষারের স্বাভাবিকতা ঠিক রাখা, হরমোন তৈরি করতে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করা।

রাতের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে পাকস্থলী শয়ন অবস্থায়ও কর্মরত থাকে। শরীর ঘুমন্ত অথচ পেটের পরিপাকযন্ত্র সচল-এমন হলে স্বাস্থ্য ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। পরিপাকের ত্রুটিসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগব্যাধি হতে পারে। তাই এশার নামাজের আগে রাতের খাবার খেয়ে নিলে একদিকে মসজিদে যাওয়া-আসা, নামাজ আদায় ইত্যাদির মাধ্যমে ঘুমানোর আগেই পাকস্থলীর কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়, অন্যদিকে এশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমানো সম্ভব হয়, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং তারপর নৈশ আলাপ করেননি। (ইবনে মাজা : ৭০২)

ঘুমের সময় আরেকটি বিষয় খেয়ার রাখা দরকার। রাসুল (সা.) সবসময় ডান পাশ হয়ে ডান হাতের তালুর ওপর মুখম-লের অংশবিশেষ (গাল) রেখে কেবলামুখী হয়ে শয়ন করতেন। এর কারণ অজানা নয়। বুকের বাম পাশে হৃৎপিণ্ডের অবস্থান। চিকিৎসকরা সবসময় হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ প্রয়োগে নিষেধ করেছেন। সুতরাং কেউ বাম পাশ হয়ে শয়ন করলে স্বাভাবিকভাবেই তার হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়বে। আজ ভাবতে অবাক লাগে ১৪০০ বছর আগে যখন আধুনিক কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল না তখনকার সময়ে নবী (সা.) আমাদের ঘুমানোর আদর্শ পদ্ধতি বাতলে গেছেন। তার উপদেশ ছিল প্রজ্ঞাময় ও রহমতস্বরূপ। রসুল (সা.) এশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতেন এবং রাতের শেষভাগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই আসুন আমরা ইসলামের নিয়মে আমাদের খাবার ও ঘুমের অভ্যাস করি। মহান আল্লাহ সবাইকে তওফিক দিন।

প্রভাষক, গাজীপুর রউফিয়া কামিল 
 মাদরাসা, যশোর


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com