প্রকাশ: শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:৩২ এএম (ভিজিট : ১৪৮)

ষাটের দশকে দেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়, কিন্তু ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার ছিল না। বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই ডেঙ্গুর ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়। তখন ডেঙ্গু ছিল মূলত বড় শহরগুলোতে। এ বছর সারা দেশেই ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব হয়েছে। শুক্রবার সময়ের আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বর্ষাকালে বেড়ে শীতকালে কমতে শুরু করলেও চলতি বছর শীত শুরু হলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি নভেম্বর মাসের ১৬ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৯১৯ জন; আর মৃত্যু হয়েছে ১৮০ জনের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগটির বিস্তার রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে রোগের ব্যাপকতা বাড়তেই থাকবে এবং একসময় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। কীটতত্ত্ববিদরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে যে পূর্বাভাস মডেল তৈরি করেন, তাতেও বলা হয়েছে যে আগামী বছরগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। দেশের সব জায়গায় ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে প্রায় মধ্য নভেম্বরে রোগের যে ব্যাপকতা দেখা যাচ্ছে তাতে অনুমান করা যায়, এ বছরও ১২ মাস ধরেই ডেঙ্গু রোগী থাকবে। আর চলতি মাসে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হয়েছে, তার ৭৯ শতাংশই হচ্ছে ঢাকার বাইরের রোগী। গ্রামের বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর অর্থ, সারা দেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা আছে। এডিস মশা এখন সারা দেশে, সারা বছর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
আমাদের ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুব বেশি একটা কাজে আসছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক দিনে বা এক বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। কয়েক বছরের চেষ্টায় হয়তো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। তবে এখনই দেশব্যাপী সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ডেঙ্গু ছিল এক ধরনের মৌসুমী রোগ। কিন্তু এ রোগের বছরব্যাপী ছড়িয়ে পড়াটা নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এডিস মশা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, এডিস ও কিউলেক্স মশা নিধনের জন্য
আলাদা কর্মসূচি রাখতে হবে। আমরা মনে করি, অসময়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে তা নির্মূল করার বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
সময়ের আলো/আরএস/