প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১:৩১ এএম (ভিজিট : ২০৮)
ইসলামের প্রথম বিষয় ‘ঈমান’-যা মানুষকে বিশ্বাসের বলে বলীয়ান করে। ইসলামে হতাশা বা হতোদ্যমের কোনো স্থান নেই। মানুষের সৃষ্টির সূচনা থেকেই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর ফেরেশতাদের বলেছিলেন, ‘তোমরা আদমকে সেজদা করো।’ তবে এই সেজদা মানে পায়ে পড়ে নয় বরং সম্মানসূচক সেজদা। এটাকে আরবিতে বলে ইনহিনা। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সব ফেরেশতাই সেদিন সেজদা করেছিল শয়তান ব্যতীত। সে সেজদা করেনি। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করায় সে বিতাড়িত হলো তাঁর সান্নিধ্য থেকে। বঞ্চিত হলো তাঁর রহমতের দরিয়া থেকে। চিরতরে নাম লেখাল অভিশপ্তের কাতারে। পবিত্র কুরআনেও তার অবাধ্যতার দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সেজদা করো, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল, সে অমান্য করল ও অহংকার করল, কাজেই সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল’ (সুরা বাকারা : ৩৪)। সেদিন থেকেই শয়তান বনি আদমের চরম শত্রুতে পরিণত হয়। কুরআনে বহু আয়াত ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। শয়তানকে বনি আদমের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা : ২০৮)
শয়তান তার রবের নির্দেশ অমান্য করে বিতাড়িত হওয়ার পর তাকে এই ক্ষমতা দেওয়া হলো যে, সে বনি আদমকে তার প্ররোচনায় প্ররোচিত করবে। মানুষের রগ-রেশায় চলবে। তাই আদম-সন্তান শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মাঝেমধ্যে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ফেলে মনের অজান্তেই। তবে যারা সত্যিকারের মুমিন তাদের শয়তান ধোঁকা দিতে পারে না। কারণ তারা সদাসর্বদা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তাঁর ওপরই ভরসা করে। পবিত্র কুরআনে এসেছে, তার কোনো আধিপত্য নেই তাদের ওপর যারা ঈমান আনে ও তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে।’ (সুরা নাহল : ৯৯)
মানুষ যদি কখনো শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কোনো পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে, আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করে বিপথগামী হয়ে যায় আর পাপের কথা চিন্তা করে হতাশায় ডুবে থাকে; তা হলে করণীয় হচ্ছে আল্লাহর পথে ফিরে আসা, মনোবল শক্ত রাখা, হতাশাকে প্রশ্রয় না দেওয়া। কুরআনে আল্লাহ হতাশ হতে নিষেধ করেছেন। বরং কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে নবীজি (সা.)-কে সম্বোধন করে বলছেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা যুমার : ৫৩)
কীভাবে ডাকলে আল্লাহ মানুষের ডাকে সাড়া দেবেন, সেই পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, হে আমার রব! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, আর আপনিই তো দয়ালুদের মাঝে শ্রেষ্ঠ দয়ালু’ (সুরা মুমিনুন : ১১৮)। তাই আমাদের উচিত কখনো যদি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পদস্খলিত হই, তা হলে হতাশায় না ডুবে সরাসরি আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া এবং নিজ পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে তওবা করা করা। আল্লাহ তওফিক দান করুন।
সময়ের আলো/আরএস/