বর্তমানে ই-কমার্সের ওপর স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে কোনো শুল্ক আরোপ করা হয় না। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রোববার দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) গোলটেবিল আলোচনায় এ অভিমত দেওয়া হয়।
সম্প্রতি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের ফলাফলের ওপর এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন এফসিএ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এমবিএম লুৎফুল হাদী, সিইও শুভাশীষ বসু, ও চিফ অপারেটিং অফিসার মাহবুব আহমেদ সিদ্দিকি।
অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ৫৩ বছরে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে ৬০টি দেশ। ১৫টি দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিভিন্ন ধাপে আছে। বাংলাদেশসহ ৫টি দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য যেসব সূচক আছে তাতে বাংলাদেশ ভালো করছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বর ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে আসবে। ফলে স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় যেসব সুবিধাগুলো যেমন ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি ও প্রেফারেন্সিয়াল ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে তা আরও কিছুটা সময় ধরে অব্যাহত রাখার জন্য জোর আলাপ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, স্বল্পোন্নত দেশকে শুল্ক সুবিধা প্রদান করে আসছে। সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর ডব্লিউটিও বিরোধ নিষ্পত্তি সেলে না নেয় তার জন্য পারস্পরিক আলোচনা করতে হবে। ফিশারিজ এ ভর্তুকিতে বাংলাদেশকে নমনীয়তা পাওয়ার জন্য আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে ই-কমার্সের ওপর স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কোনো শুল্ক আরোপ করা হয় না। কিন্তু এর সুবিধা নিচ্ছে উন্নত দেশগুলো। ফলে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখানেও আলোচনা করতে হবে।ডব্লিউটিওকে সংস্কার করতে হবে। প্রত্যেক দেশ নিষেধাজ্ঞা প্রদানের ক্ষমতা থাকায় অধিভুক্ত বিভাগে যুক্তরাষ্ট্র কাউকে নিয়োগ দিচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিকল্প ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ডব্লিউটিও-তে বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে আরও কাজ করতে হবে।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সামনে তিনটা বিষয়-স্বল্পোন্নত দেশ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত, ও উন্নয়নশীল দেশ। উৎপাদন, দক্ষতা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ২০২৬ সালের পর বাজারে প্রবেশের সুবিধা না থাকলে, টিকে থাকার জন্য পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। রফতানি বাণিজ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। আমাদেরকে আরও ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, কম্প্রিহেনসিভ ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করতে হবে। পরিবহন খাতের উন্নয়ন কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তুলতে হবে। তুলনামূলক সুবিধাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধায় রূপান্তরের জন্য কাজ করতে হবে।
মঞ্জুর আহমেদ বলেন, আঞ্চলিক চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং কিছু বিকল্প বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যকে সমন্বয় করতে হবে। বাংলাদেশকে বাস্তবতার নিরিখে বহুমুখী বাণিজ্য সম্পাদনে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন বলেন, ডব্লিউটিও হলো একটি বিকল্প বিরোধ বা মধ্যস্থতাকারী সত্তা, যা দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক নিয়মগুলোকে সমর্থন করে। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম, যা সদস্য সরকারগুলোকে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাণিজ্য সমস্যাগুলো আলোচনা এবং সমাধান করার অনুমতি দেয়।
মুহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন আরও বলেন, ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য অনেক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর মধ্যে একটি হলো এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন। বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) গ্রুপ থেকে স্নাতক হতে চলেছে। নিঃসন্দেহে, এটি হবে স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অর্জনগুলোর একটি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, এবারের সম্মেলনটি আমাদের জন্য একটি সাফল্যের কারণ।
কিন্তু আমাদের এলডিসি স্নাতক হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে, অগ্রাধিকারমূলক বাজারে প্রবেশাধিকার, পরিষেবা এবং পরিষেবা সরবরাহকারীদের জন্য অগ্রাধিকারমূলক আচরণ এবং ডব্লিউটিও নিয়মের অধীনে বাধ্যবাধকতা এবং নমনীয়তার বিষয়ে বিশেষ আচরণ বলে তিনি মনে করেন।
ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, অর্থনীতিতে প্রাইভেট সেক্টরের অবদান হচ্ছে ৭৫-৮০ ভাগ, কিন্তু সেই তুলনায় বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়ে আলাপ আলোচনায় এই ফোরামে খুব বেশি একটা অংশগ্রহণ নেই। এন্টি ডাম্পিং পণ্যের ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। বাণিজ্য আলোচনা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। ডব্লিউটিওতে রুলস অব ল-এর পরিবর্তে ক্ষমতার প্রভাব বেশি লক্ষণীয়। ডব্লিউটিওর গ্রিন রুমে যে আলোচনা হয় তা কেউই জানতে পারে না। তিনি বলেন ইন্ড্রাস্টি একাডেমিয়া কোলাবোরেশন বাড়াতে হবে।
সময়ের আলো/আরএস/