ই-পেপার রোববার ৫ মে ২০২৪
রোববার ৫ মে ২০২৪

৫০ হাজার রোহিঙ্গা নিচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:৩৬ এএম  (ভিজিট : ৯৯৮)
মানবিক কারণে লাখো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তা হলো মিয়ানমারের এ সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন। গত ৬ বছরে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে না নিয়ে উল্টো ওই দেশে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।

সম্প্রতি দেশটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে জান্তাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীর সংঘাত-সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার নারী-শিশুকে ইউরোপ-আমেরিকায় অভিবাসনের কাজ সম্পন্ন করতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস। ইতিমধ্যে সব তদন্তকাজ শেষ করে ১ হাজার পরিবারের নারী-শিশুসহ ৫ হাজার জনকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আমেরিকায় ৬০ শতাংশ আর বাকি ৪০ শতাংশকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে অভিবাসন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগ ও পুলিশের বিশেষ শাখার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র সময়ের আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগ থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি তিনটি আদেশ জারি করা হয়। ওই বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব বিশ্বজিত দেবনাথের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত ৫০৩ জন রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ছাড়পত্রসাপেক্ষে ওই ৫০৩ জন রোহিঙ্গাকে বহির্গমনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ গোপনীয়তা বজায় রেখে ৫০৩ জন রোহিঙ্গার অনুকূলে নিরাপত্তা ছাড়পত্র জরুরি ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’ 

আরেকটি আদেশে ৫০০ রোহিঙ্গার জন্য ছাড়পত্র জারি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য। এ ছাড়াও ৫২ জনকে কানাডায় পাঠানোর জন্য একই দিনে আরও একটি ছাত্রপত্র জারি করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরে এক হাজার পরিবারের ৫ হাজার সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৯ হাজার পরিবারের ৪৫ হাজার রোহিঙ্গাকে বিদেশ পাঠানোর জন্য কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। 

যারা এরই মধ্যে গিয়েছেন তাদের মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন ক্যাম্পের বাসিন্দা বেশি। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে উখিয়ার বালুখালী পালংখালীর ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এ-ব্লকের ৫২ নম্বর শেডের রফিকুল ইসলাম কাদের, তার স্ত্রী আমীন নিশা, ছেলে ওমর ফারুক, মা উম্মে হাবিবা, ভাই মো. ফয়সাল ও মো. ওমর। উখিয়া কুতুপালং পালংখালীর ক্যাম্পের এফ-ব্লকের ৫৩ নম্বর শেডের ২ নম্বর রুমের আবেদনকারী জাহেদা বেগম। তার স্বামী মনির আহমেদ, ছেলে নূরুল আফসার, মো. ইয়াসির আরাফাত, মো. শহিদ আরমান, মো. ইমরান, মা মরিয়ম বিবি ও ভাই মিজানুর রহমান। টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পের এইচ-ব্লকের ১২২০ নম্বর শেডের ৮ নম্বর রুমের সায়েদ নূর, তার স্ত্রী সামিয়া আক্তার, মা সুমাইয়া জান্নাত শেফা। তারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাদের মতো এক হাজার পরিবারের ৫ হাজার রোহিঙ্গা চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে গেছেন।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে ওই রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। কয়েক মাসেই ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পালিয়ে আসে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায়। আগে থেকেই এখানে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নতুন এই সংখ্যা যুক্ত হওয়ায় এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসাবে বর্তমানে এ সংখ্যা ১৭ লাখে দাঁড়িয়েছে। তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও ৬ বছরেও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভিন্ন কোনো দেশে নিয়ে যেতে চায় জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপের কিছু দেশে ১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

২০১৭ সালে ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রধান শিনজি কুবো জানিয়েছিলেন, এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভিন্ন কোনো দেশে পুনর্বাসনের জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি চেয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে এ চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্য থেকে ১ হাজার জনকে বাছাই করেছি।

শিনজি কুবো জানান, কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে যাদের জরুরি চিকিৎসা দরকার যেটা এ দেশে সম্ভব নয়। এ ছাড়া কিছু শরণার্থীর পরিবারের সদস্যদের আগে বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা যাতে তাদের পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হতে পারে এবং যাদের চিকিৎসা দরকার তারা যাতে সে সুবিধা পায় সে ভিত্তিতে তাদের বাছাই করা হয়েছে।

এর আগে বিভিন্ন সময় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৯০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার এ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকার সমর্থন করে না। সরকার মনে করে, ভিন্ন কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করার প্রক্রিয়া চালু থাকলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।

রোহিঙ্গাদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে জানতে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (মিয়ানমার অনুবিভাগ) সিনিয়র সহকারী সচিব বিশ্বজিত দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। তিনি এখন কক্সবাজারে অবস্থান করছেন জানিয়ে বলেন, এ প্রসঙ্গে পরে কথা বলবেন।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close