ই-পেপার মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪
মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪

এমপি মন্ত্রী ও স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫:২৭ এএম আপডেট: ২৯.০৪.২০২৪ ৭:৫৫ এএম  (ভিজিট : ৩৫৯)
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামীকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

সূত্র বলছে, এমপিরা দলীয় পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কারাদেশ পেতে পারেন। মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে নেওয়া হতে পারে একই ব্যবস্থা। তবে অপরাধের পরিমাণও বিচার বিবেচনা করবে দলটি। আর এমপি-মন্ত্রীদের যারা স্বজন, তাদেরও পদ-পদবি থাকলে তা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে বা বহিষ্কার করা হতে পারে। আর যদি কারও পদ-পদবি না থাকে কিন্তু এমপি-মন্ত্রীদের স্বজন হওয়ায় দাপট দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে পদ-পদবি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা অংশ নিয়েছেন, ওই এমপি-মন্ত্রীদের প্রথমে শোকজ করা হতে পারে। সদুত্তর না পেলে তাদের অব্যাহতি বা বহিষ্কার করা হতে পারে।

উপজেলা নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৮ মে প্রথম দফায় ১৫০টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬৬টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে আগামী ২১ মে। আর তৃতীয় দফায় ১১২টি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৯ মে। এর আগে ক্ষমতাসীন দলটি দলীয় প্রতীক নৌকা তুলে নিয়েছে। কিন্তু দলের কেন্দ্র থেকে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনরা অংশ নিতে পারবেন না-এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি কোনো দলীয় এমপি-মন্ত্রী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় ঘটলে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।  এরপরও দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের কয়েকজনের সন্তান ও স্বজন ভোটের আগেই নানা অসংগতি ও অনিয়মের জন্ম দিয়েছেন। এসব অভিযোগ দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রথম দফায় ১৫০টি উপজেলার ভোট সামনে রেখে প্রায় ২ হাজার প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

গত ২২ এপ্রিল ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুন অর রশীদ হীরা, আওয়ামী লীগের  আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা। নোয়াখালীর দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় এমপির স্বজনরা এখনও তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এই উপজেলার নির্বাচন সারা দেশে শোরগোল তুলেছে সম্প্রতি এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে। তিনি ছেলের সমর্থনে একটি সভায় বক্তব্যে বলেছিলেন আমার ছেলেকে যে এলাকা থেকে ভোট কম দেওয়া হবে সে এলাকায় উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তার এই বক্তব্যে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়। এরপরই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দলের দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা যেখানে প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অমান্য করে এমপি একরামের ছেলে শাবাব চৌধুরী তার সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। 

শাবাব চৌধুরী বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবিতে নেই। আমি সুবর্ণচর উপজেলার জনগণের চাপে প্রার্থী হয়েছি। পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। 

অন্যদিকে হাতিয়া উপজেলা নির্বাচনে এমপি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ও ছেলে প্রার্থী হয়েছেন। স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস সাবেক এমপি। তারাও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। সব মিলিয়ে মন্ত্রী-এমপির ২৮ জন স্বজন নির্বাচনের মাঠ ছাড়েননি। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এর মধ্যে ১৩ জনের মতো আছেন প্রথম দফা নির্বাচনে। বাকিরা দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ভোট করবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসছে। ওই বৈঠক থেকে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে সেই সিদ্ধান্ত আসছে।

রোববার আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খানের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া এমপি-মন্ত্রী ও তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, সেটি পরিষ্কার হবে আগামীকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সুপারিশ করবেন, যেহেতু তারা দলীয় শৃঙ্খলা মানেননি তাই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

যারা দলীয় এমপি বা মন্ত্রী রয়েছেন, তাদের কেন স্বজনদের দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। অন্য নেতাকর্মীরা কিছুটা পাক। যেসব এমপি-মন্ত্রীরা বেশি অপরাধ করবেন, তাদের যদি দলীয় পদ থাকে, তা থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করা। যসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা অংশ নিয়েছেন, ওই এমপি-মন্ত্রীদের প্রথমে শোকজ করা হতে পারে। সদুত্তর না পেলে অব্যাহতি বা বহিষ্কার হতে পারে। তবে অপরাধ বিবেচনায় তাদের অব্যাহতি বা বহিষ্কার না করে, ভবিষ্যতে যাতে তারা আর কোনো দলীয় পদে না আসতে পারেন, এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ তারা নেতৃত্বে নিজেদের ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিবৃত করতে পারেননি। অথচ তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দাপট দেখিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। আর যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তাদের যদি আগে থেকে কোনো পদ-পদবি দলে থাকে, সে ক্ষেত্রে তাদের অব্যাহতি অথবা বহিষ্কার করা হতে পারে। আর অব্যাহতি বা বহিষ্কার না হলেও ভবিষ্যতে তারা পদ-পদবি থেকে বঞ্চিত হবেন। 

এমনকি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাদের অনেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো সক্ষমতা রাখেন। তাদের ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আর যাদের কোনো পদ-পদবি নেই, শুধু এমপি-মন্ত্রীদের স্বজন বলে এলাকায় দাপট দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তারা যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পদ-পদবি পেতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে কতটুকু অপরাধ করেছেন সেই অপরাধের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অপরাধের বিষয়টি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের যে আটটি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম আছে তারা উপস্থাপন করবেন। তখন বিচার-বিবেচনার আলোকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি দুয়েকজন এমপি যে ভাষায় উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে কথা বলেছেন, সেটি তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে না। তাদের সে অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের একটা কমিটমেন্ট রয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার রয়েছে। সেই নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকেই সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা যেটি করতে চেয়েছে, সেটি হচ্ছে ভোটের মাঠে প্রভাব রাখার জন্য। এটা তাদের একটি কৌশল মাত্র।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ সময়ের আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যেসব এমপি-মন্ত্রীর সন্তান ও স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি, তাদের বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। সেটি এমপি-মন্ত্রী বা তাদের স্বজন উভয়ের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনা যারা অমান্য করেছেন দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, তিনি যত বড়ই এমপি-মন্ত্রী বা নেতা হন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সময়ের আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনরা থাকলে দলের তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব, সংঘাত বাড়ে। তা ছাড়া দলের তৃণমূলের যেসব নেতাকর্মী রয়েছেন, তাদেরও তো সুযোগ দিতে হবে। তারা তো এমপি-মন্ত্রী আছেন, আবার এতো কিছুর প্রয়োজন হবে কেন। তারপরও যারা দলীয় এই সিদ্ধান্ত মানেননি, তারা তো শাস্তির আওতায় আসবেন-এটাই স্বাভাবিক।  আর কেউ অংশ নিলে এমপি-মন্ত্রীসহ যারা প্রার্থী হবেন, তাদেরও দলে পদ-পদবি থাকলে দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা অংশ নিয়েছেন, ওই এমপি-মন্ত্রীদের প্রথমে শোকজ করা হতে পারে। সদুত্তর না পেলে অব্যাহতি বা বহিষ্কার হতে পারে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সময়ের আলোকে বলেন,  আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা অংশ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী ও তাদের সন্তান ও স্বজনরা অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে তাদের কার কেমন অপরাধ তা বিবেচনা করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close