ই-পেপার মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪
মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪

ক্ষুধার্তদের খাবার খাওয়ানোর সওয়াব
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ৩:০৪ এএম  (ভিজিট : ২৬২)
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সবার রিজিক নিশ্চিত করেছেন। কিছু মানুষকে শক্তি দিয়েছেন এবং কিছু মানুষকে দুর্বল বানিয়েছেন। শক্তিমান মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করবে এবং সাধ্যমতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ইসলামে খাবারের সন্ধান করা, অসহায়দের খাদ্য সহায়তা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিবরণ থেকে প্রতীয়মান হয়, যদি কোনো মুসলমান অন্য কোনো মানুষকে এমন ক্ষুধায় কাতর অবস্থায় দেখতে পায়, যার কাছে ক্ষুধা নিবারণের কোনো ব্যবস্থা নেই, তা হলে তার ওপর শরয়ি দায়িত্ব ওই ব্যক্তির ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করা। এটি নিছক ইহসান বা দয়া নয়; বরং এটি তার ওপর শরিয়তের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বিবৃত্ত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই ব্যক্তি ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্তি এবং এতিম আত্মীয়কে বা ধূলি-ধূসরিত মিসকিনকে দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান’ (সুরা বালাদ : ১১-১৬)। একইভাবে পবিত্র কুরআন জাহান্নামিদের আত্মস্বীকৃত জবানবন্দিতে তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছে, ‘তারা বলবে, আমরা নামাজিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না এবং আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির : ৪৩-৪৪)

সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি অভাবীকে খাদ্য দান না করে তবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং পরকালে তারা শাস্তির মুখোমুখি হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কি তাকে (তার পরিণতি) দেখেছেন? যে দ্বীন অস্বীকার করে। সে তো এতিমদের রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয় এবং সে অভাবগ্রস্তদের খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না’ (সুরা মাউন : ১-৩)। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক আমি আপনাকে কীভাবে খাবার দেব অথচ আপনি বিশ^জগতের প্রতিপালক! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না! যদি তুমি তাকে আহার করাতে তবে তার কাছে আমাকে পেতে?’ (মুসলিম : ২৫৬৯)

ক্ষুধার্তকে খাবার দান করার মাধ্যমে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়। এতে আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারি। আবার তাদের কষ্ট লাঘবের কারণে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন বিভিন্ন কষ্ট লাঘব করে দেবেন। হাদিসে এসেছে, হজরত ইব্রাহিম (আ.) কখনো মেহমান ছাড়া খাবার খেতেন না। কোনো একজন মেহমানকে বা ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে নিয়ে তারপর খাবার খেতেন। আল্লাহর রাসুলও (সা.) অনাহারীদের খাবারের প্রতি সবিশেষ মনোযোগী ছিলেন। তাই পৃথিবীতে ও পরকালে গরিব, অসহায় ও ক্ষুধার্তকে খাবারদানকারী রাসুলের (সা.) আনুগত্যকারী বলে গণ্য হবেন। রাসুল (সা.) ক্ষুধার্তকে খাবার দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু দাও, আগুনে পোড়া একটা খুর হলেও’ (নাসায়ি : ২৫৬৫)। নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে নিজে পেটপুরে আহার করে; কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বায়হাকি : ৩৩৮৯)

প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষের প্রধান স্বাতন্ত্র্যই হচ্ছে মানবতাবোধ। মানুষ শুধু নিজের জন্যই বাঁচে না, অন্যের জন্যও চেষ্টা করে। বিশেষত নিজের চেয়ে অন্য ব্যক্তি যদি হয় দুর্বল ও অক্ষম তবে তাকে সাহায্য করা আরও বেশি জরুরি। অন্যকে সাহায্য করলে আল্লাহ তায়ালাও তাকে সাহায্য করেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গরিবের চলার পথ সহজ করে দেয়, দুনিয়া ও আখেরাতে মহান আল্লাহ তার চলার পথ সহজ করে দেবেন’ (আবু দাউদ : ২৫৯৪)। অসহায়দের জন্য চিন্তা-ফিকিরকারী ব্যক্তি অবিরাম নামাজ-রোজা পালনকারীর মতো পুণ্য লাভ করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মিসকিনদের জন্য চেষ্টা-সাধনাকারী ব্যক্তি অবিরাম নফল নামাজ ও রোজা পালনকারীর মতো।’ (বুখারি : ৬০০৭)

কুরআন-সুন্নাহর এসব নির্দেশনার ভিত্তিতে অধিকাংশ ফকিহ ও মুফতি একমত যে, ক্ষুধিত ব্যক্তিকে আহার্য দান করা যেকোনো ব্যক্তির জন্যই অপরিহার্য। দুর্ভিক্ষ ও আকালের সময় যখন অনেক লোক পেটের জ্বালায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তখন ক্ষুধার্ত লোকদের ক্ষুধা নিবারণে এগিয়ে আসা সচ্ছল লোকদের জন্য ফরজে কেফায়া। ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘সম্পদের যে অংশ আদায় করা মালিকের দায়িত্বে অপরিহার্য তা হলো জাকাত। তবে সহমর্মিতা ও দান করার উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখা দিলে সেটি ভিন্ন কথা। (তখন জাকাতের মতো সাধারণ দান করাও জরুরি) যেমন নিরুপায়, ক্ষুধিত ও বস্ত্রহীন কিংবা এমন মৃত ব্যক্তি যাকে দাফন দেওয়ার মতো কেউ নেই’ (আহকামুল কুরআন : ৩/১০৬)। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেছেন, ‘মুসলমান যখন দুর্ভিক্ষ বা খরাকবলিত হয়ে পড়ে এবং এভাবে বহু লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে যায় তখন তাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কর্তব্য। এটি ফরজে কেফায়া’ (শিফাউল আলিল : পৃষ্ঠা ২৪২)

মোটকথা, ক্ষুধিত ও বস্ত্রহীন লোককে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা, দুর্ভিক্ষের সময় বিপদাপন্ন ব্যক্তিদের সাহায্য করা প্রত্যেক মুসলমানের শরয়ি দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বিপদে, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর তওফিক দান করুন।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close